Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হরিদ্বারে হিন্দু সাধুদের মুসলিম হত্যার ডাকে বিব্রত ভারত

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম

ভারতের হরিদ্বারে হিন্দু সাধুসন্তদের একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে প্রকাশ্যে মুসলিম নিধন ও গণহত্যার ডাক ওঠার পর তার জেরে ভারতকে এখন কূটনৈতিক বিড়ম্বনাতেও পড়তে হচ্ছে।

হরিদ্বারের ওই সমাবেশ থেকে যেভাবে মুসলিমদের হত্যার কথা বলা হয়েছে তাতে তাদের উদ্বেগ জানাতে পাকিস্তান মঙ্গলবার ইসলামাবাদে ভারতের দূতকেও ডেকে পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানে ভারতের সর্বোচ্চ কূটনীতিবিদ, ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের চার্জ দ্য'ফেয়ারকে তলব করে ওই ঘটনায় পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিবাদও জানিয়েছে। তবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে হরিদ্বারের ওই বিতর্কিত সমাবেশ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

শাসক দল বিজেপির নেতারা কেউ কেউ শুধু বলেছেন, ওই ধর্মীয় সমাবেশের সঙ্গে তাদের বা সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। এর আগে হরিদ্বারের ওই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টকে স্বত:প্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতেও আর্জি জানিয়েছেন ভারতের শীর্ষ আইনজীবীরা। দেশের প্রধান বিচারপতিকে লেখা এক খোলা চিঠিতে ৭৬জন সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন, এই গণহত্যার আহ্বানের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপ খুব জরুরি - কারণ প্রশাসন কিছুই করছে না।

ইতিমধ্যে হরিদ্বারের ওই সমাবেশে বক্তাদের বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণের নানা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে মুসলিমদের নির্মূল করতে সরাসরি অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর প্রায় দিন দশ-বারো কেটে গেলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত একজন অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করেনি।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক কথা বলার জন্য পরিচিত গাজিয়াবাদের বিতর্কিত হিন্দু সাধু ইয়তি নরসিংহানন্দের উদ্যোগে হরিদ্বারে একটি ধর্ম সংসদের আয়োজন করা হয়েছিল গত ১৭ থেকে ২০শে ডিসেম্বর। সেই সমাবেশে সাধুসন্তরা যেভাবে প্রকাশ্যে মুসলিমদের 'এথনিক ক্লিনসিং' বা গণহত্যার ডাক দিয়েছেন, তা দেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে তীব্র আলোড়ন ফেলেছে।

'হিন্দু রক্ষা সেনা'র প্রবোধানন্দ গিরিকে সেই সমাবেশে বলতে শোনা যায়, "হিন্দুদের হয় মরার জন্য প্রস্তুত থাকতে হব - নইলে মরতে হবে।" হরিদ্বারের ওই মঞ্চে সাধুদের সঙ্গে দেখা গেছে বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়কেও। এদেশের পুলিশ, সেনা, রাজনৈতিক নেতা ও প্রত্যেক হিন্দুকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযানে নামারও ডাক দেন তিনি।

এই সন্ন্যাসীকে বিজেপির নেতাদের সঙ্গে প্রায়শই দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি পোস্ট করেন যোগী আদিত্যনাথ বা উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর ধামির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার ছবি। সাধ্বী অন্নপূর্ণা নামে একজন সন্ন্যাসিনী বলেন, "ওদের নিকেশ করতে হলে মারতে হবে - আমাদের একশোজন হিন্দু সেনা চাই যারা ওদের বিশ লক্ষকে খতম করতে পারবে।"

সমাবেশে বক্তারা অনেকেই দেশে হিন্দুত্ববাদী বা 'গৈরিক' সংবিধান চালু করারও দাবি জানান। সমাজকর্মী রাম পুনিয়ানি বিবিসিকে বলছিলেন, "সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় হল এই সব ভিডিও সামনে আসার পরও দেশের মিডিয়া এগুলোকে গুরুত্ব দেয়নি, পুলিশও চারদিন পর দায়সারা এফআইআরের বেশি কিছু করেনি।" "আর এইভাবে ক্রমাগত আমরা মুসলিমদের কোণঠাসা করে ঘেটো-তে ঠেলে দিচ্ছি, তাদের মধ্যে অরক্ষিত থাকার ভয় আর আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসছে।"

ভারতের নামী ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবও মনে করছেন, রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে এই চরম ঘৃণার নিন্দা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গেই তার আক্ষেপ, "রাষ্ট্র দোষীদের বিরুদ্ধে কিছুই করছে না। এই ধরনের লোকজন দেশে আগেও ছিল, কিন্তু এই প্রথম তারা কোনও শাস্তির ভয় ছাড়াই বুক ফুলিয়ে গণহত্যার ডাক দিতে পারছে।" "মিয়ানমারের মতো এদেশেও একটি জাতিগোষ্ঠীর লোককে নিকেশ করার, দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে - আর আমরা বসে বসে দেখছি।"

উত্তরাখন্ড রাজ্যের পুলিশ প্রথমে হাত গুটিয়ে থাকলেও ওই ধর্ম সংসদ শেষ হওয়ার চারদিন পর একটি এফআইআর রুজু করে মাত্র একজনকে অভিযুক্ত করে - পরে তাতে আরও দুজনের নাম যোগ করা হয়। এখনও ওই সমাবেশের বক্তাদের কাউকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হয়নি, আর এই নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধেই শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রশান্ত ভূষণ, দুষ্যন্ত দাভে বা সালমান খুরশিদের মতো দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা।

প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানাকে লেখা চিঠিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী রামাকান্ত গৌড় বলছিলেন, "আমরা এই হস্তক্ষেপ চাইতে বাধ্য হয়েছি কারণ সংবিধানের অন্য স্তম্ভগুলো - নির্বাহী বিভাগ বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবাই একেবারে নীরব।" "না কি তাদের এই বক্তব্যে সায় আছে? এটা আসলে ভীষণই বিচলিত করার মতো ব্যাপার!"

শীর্ষ বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে কেউ এই ধর্ম সংসদের আহ্বানকে অবশ্য সমর্থন করেননি, তবে বিজেপি ভাবধারার তাত্ত্বিকরা কেউ কেউ মুসলিম নেতাদের বিতর্কিত আহ্বানের প্রসঙ্গও তুলনায় টেনে আনছেন। দিল্লি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গীতা ভাট যেমন যুক্তি দিচ্ছেন, মাত্র দুবছর আগে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময়েও মুসলিম নেতারা অনেক বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন।

"ব্যাঙ্গালোরে এআইএমআইএমের একজন নেতা তো এমনও বলেছিলেন, আমরা সংখ্যায় মাত্র ১৫ কোটি হলেও ওদের উচিত শিক্ষা দিতে পারি, আজাদি ছিনিয়ে নিতে পারি।'' ''তা ওই সব বক্তব্যের জন্য কেউ কি গ্রেপ্তার হয়েছে, বা কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে?", বলছেন অধ্যাপক ভাট। তবে হরিদ্বারে হিন্দু সাধুসন্তরা যে ধরনের ভাষণ দিয়েছেন, আসলে কোনও যুক্তিতেই তার সাফাই হয় না বলে ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ার গরিষ্ঠ অংশের মত। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • MD ARAFAT ALI ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৩ পিএম says : 0
    They are Support to Terrorism Because India is Terrorism Maker.
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Abdullah ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    হিন্দুস্থানের মুসলমান ভাইদের বলছি ভয় করোনা, ভীত হওনা, বাংলাদেশী মুসলমানেরা বেঁচে আছে , এরা সব সময় তোমাদের সাথে আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Joy ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২৮ পিএম says : 0
    Terrorist India only has power for the Muslims and other minority groups. Where was this power when China killed 20 maluan soldiers
    Total Reply(0) Reply
  • Joy ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২৮ পিএম says : 0
    Terrorist India only has power for the Muslims and other minority groups. Where was this power when China killed 20 maluan soldiers
    Total Reply(0) Reply
  • Abu hasan Rubel ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪৬ পিএম says : 0
    ও হিন্দু না মানুশ ও না একজন হিন্দু ধরমান্ধ
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
    INDIA WILL BE END SOON !! WILL BE DESTROY !! INDIA ALREADY A POOREST NATION , PEOPLE ARE HUNGRY IN ENDIA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ