পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস অতিমারির কবলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে করোনার তৃতীয় ওয়েভে ভারত থেকে উদ্ভুত ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভেরিয়েন্ট হিসেবে দেখা দেয়। প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা লকডাউনে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা আবারো থমকে দাঁড়ায়। পশ্চিমা বিশ্বে ইতিমধ্যেই অধিকাংশ নাগরিকের ভ্যাক্সিনেশন নিশ্চিত হওয়ায় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট তেমন কাবু করতে না পারলেও এবার আগের যে কোনো ভেরিয়েন্টের চেয়ে তিনগুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রনের লক্ষণগুলো মৃদু হলেও অতিমাত্রায় সংক্রমণের কারনে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি হুমকি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ওমিক্রনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, পূর্ণডোজ ভ্যাক্সিন নেয়া ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে ওমিক্রনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ধরা পড়ার শুরুতেই বিশ্বের যে সব দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশের নামও ছিল। যদিও তখনো বাংলাদেশে কোনো ওমিক্রন সংক্রামক রোগী ধরা পড়েনি। ডিসেম্বরের ১০ তারিখে দেশে প্রথম দু’জন নারী ক্রিকেটারের দেহে ওমিক্রন ভাইরাস ধরা পড়ে। তারা ইতিমধ্যেই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে সংক্রমন যে ওই দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই তা ইতিমধ্যে প্রমান হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিনে এবং রাতে আরো অন্তত চারজনের দেহে করোনা ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর আগের দিন সোমবার একজনের ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এ নিয়ে দেশে সর্বমোট ৭জনের ওমিক্রন সংক্রমণ দেখা গেল।
যেখানে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুহার শুন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে, সেখানে নতুন করে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ হার বৃদ্ধির প্রবণতা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই ওমিক্রন নিয়ে নতুন সকর্তবার্তা দিয়েছে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলো করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধে নতুন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশকেও নতুনভাবে ভাবতে হবে। করোনা লকডাউনের ফলে দেশের আর্থ-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে যে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আগেই ওমিক্রনের চোখ রাঙানি বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখতে হবে। একদিনেই চারজনের দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়ায় এর সম্ভাব্য প্রার্দুভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। শুরু থেকেই দেশের করোনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এবং নিম্নহার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সংক্রমণ কমে আসার সাথে সাথে করোনা স্বাস্থ্যসেবা ও শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও আরো স্থিমিত হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও আর আগের মত মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভয়-আতঙ্ক কেটে গেলেও সংক্রমণের ঝুঁকি ও এর সামাজিক-অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমে যায়নি।
করোনার কারণে দেশের কয়েক কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে অতি দারিদ্র্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা লকডাউনের কারনে ৪ কোটির বেশি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতায় আরেকটি করোনা লকডাউনের চাপ সহ্য করা অসম্ভব হবে। এহেন বাস্তবতায় ওমিক্রন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত ওমিক্রন শনাক্তরণ ব্যবস্থা জোরদার ও সহজলভ্য করার পাশাপাশি মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা কঠোরভাবে অনুসরন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শৈথিল্য কাটিয়ে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষীয় নজরদারি বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যেও ভারতেও ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অতএব ভারতসহ আন্তরাষ্ট্রীয় বিমান যোগাযোগ ও সীমান্তপথে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপসহ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা জোরদার করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তায় ও গণপরিবহনে সব যাত্রি ও পথচারিকে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। সাবান-সেনিটাইজারে হাত ধোয়াসহ সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। সংক্রমণের লক্ষণগুলো খুব মৃদু হওয়ায় ওমিক্রনের গণসংক্রমণের আশঙ্কাও অনেক বেশি। ওমিক্রনের ঝুঁকি রোধে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বয়স্কদের বুস্টার ডোজের পাশাপাশি স্বল্প সময়ের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে হবে। সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগে ওমিক্রনের গণসংক্রমন প্রতিরোধ করা অসম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।