Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত বেওয়ারিশ গরুতে বিপর্যয়

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:০৫ এএম

দিন দিন ভারতে বেওয়ারিশ গরু সংখ্যা বাড়ছে। আর এসব গরু ধ্বংস করছে বিভিন্ন ফসল। সারারাত রাস্তায় বসে থাকার কারণে যান চলাচলেও থমকে পড়ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বন্য জন্তুর হামলায় ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, হাতির মতো বন্য জন্তুর হামলায় ফসল নষ্টে ক্ষতিপূরণ মিললেও বেওয়ারিশ গরু-বলদে ফসল খেয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ মিলছে না।

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বান্দা জেলার লালক সিংহ ব্যাংক থেকে এক লাখ রুপির ঋণ নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে মুগ ডালের চাষ করেছিলেন। প্রতিদিন রাত জেগে ফসল পাহারা দিতেন। কিন্তু গত জুন মাসে এক রাতে ডজন খানের বেওয়ারিশ গরু তার জমিতে ঢুকে সমস্ত ফসল নষ্ট করে। কিভাবে ব্যাংকের দেনা শোধ করেন, সেই চিন্তায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নান্দনা গ্রামের ৫২ বছরের লালক।

গোরক্ষক বাহিনীর দাপট ও গোহত্যার ওপর নিষেধাজ্ঞার জেরে বেওয়ারিশ গরু-বলদ যে উত্তরপ্রদেশের চাষিদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এ বার কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ই জানাল, গোটা দেশে বেওয়ারিশ গরু-বলদের সংখ্যা কমলেও উত্তরপ্রদেশে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সূচকে উত্তরপ্রদেশ পিছনের সারিতে পড়ে থাকলেও, বেওয়ারিশ গরু-বলদের সংখ্যায় উত্তরপ্রদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-র হিসাব অনুযায়ী গোটা ভারতে ৫২.৮৭ লাখ বেওয়ারিশ গবাদি পশু ছিল। ২০১৯-এর পশু গণনায় তা ৫০.২১ লাখে নেমে এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বেওয়ারিশ পশুর সংখ্যা ১০.০৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ১১.৮৪ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। বৃদ্ধির হার ১৭ শতাংশর বেশি। গোটা ভারতে যত বেওয়ারিশ গরু-বলদ রয়েছে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যের ৭৫টি জেলার মধ্যে কয়েকটি বাদে বাকি সবগুলোতেই বেওয়ারিশ গরুর সংখ্যা বেড়েছে।

ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তারা বলছেন, গোহত্যার নিষেধাজ্ঞা, গোরক্ষক বাহিনীর দাপটে এখন গরু জবাই বন্ধ। গবাদি পশু দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে বা চাষের লাঙ্গল টানার কাজে অক্ষম হয়ে পড়লে তা চাষি, পশুপালকরা জবাইয়ের জন্য বিক্রি করে দিতেন। এখন তা হচ্ছে না। এ দিকে গরিব চাষি, গোয়ালাদের পক্ষে অক্ষম গরু পালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা রাস্তায় গরু-বলদ ছেড়ে দিচ্ছেন।

এই সব অভুক্ত পশুই চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে। যখন-তখন হাইওয়ে আটকে বসে থাকার ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামে চাষিদের তাড়া খেয়ে বেওয়ারিশ গরুর পাল শহরের মধ্যেও খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিক অধ্যাপক বিকাশ রাওয়াল আগেই গবেষণা করে বলেছিলেন, ১০ বছরে বেওয়ারিশ পশুর সমস্যা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে এই সব গরু পালন করতে প্রতিরক্ষা খাতের দেড় গুণ অর্থ খরচ করতে হবে। এখন সরকার পশুপালন, ডেয়ারি ক্ষেত্রে যে খরচ করে, তার ৩৫ গুণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। রাওয়াল বলেন, “আসলে এর পিছনে কোনো দিনই বিশেষ অর্থনীতি ছিল না। ছিল শুধু মানুষকে হেনস্থা করা, গোরক্ষার নামে রাজনীতি করা।” সরকারি হিসাব বেওয়ারিশ পশুর সংখ্যা আদৌ ঠিক না কি, আসলে সংখ্যাটা তার থেকেও বেশি, তা নিয়েও রাওয়াল সংশয় প্রকাশ করছেন।

যোগী সরকার রাজ্যে ৫ হাজারের বেশি গোশালা খুলেছে। বেওয়ারিশ গরু দত্তক নেয়ার জন্য মাসিক অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে গো-ভজনা করলেও এইসব গোশালায় না খেতে পেয়ে বহু পশুর মৃত্যু হচ্ছে। চাষিদের দুর্ভোগ তো রয়েইছে। বেওয়ারিশ পশু ফসল নষ্ট করলে চাষিদের জন্য কি ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত রয়েছে?

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



 

Show all comments
  • Oliur Rahman ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৪০ পিএম says : 0
    গরুগুলো অন্য ধর্মের লোকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হক।কারন হিন্দু ধর্মে গরু জবাই নিষিদ্ধ থাকলেও অন্য ধর্মে তা নেই। তাছারা কৃষকদের বেওয়ারিশ গরুর জন‍্য যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা কোন নেতারা পূরণ করে দিবে না।কারন কোন নেতারা গরু পালন করে না।কিন্তু কৃষকদের পেটের তাগিদে অনেক কিছু করতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • abul kashem ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২০ এএম says : 0
    গরুগুলো অন্য ধর্মের লোকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হক।কারন হিন্দু ধর্মে গরু জবাই নিষিদ্ধ থাকলেও অন্য ধর্মে তা নেই। তাছারা কৃষকদের বেওয়ারিশ গরুর জন‍্য যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা কোন নেতারা পূরণ করে দিবে না।কারন কোন নেতারা গরু পালন করে না।কিন্তু কৃষকদের পেটের তাগিদে অনেক কিছু করতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mahabubul alam ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:০৯ পিএম says : 0
    বিজেপি এর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পথ, এতে দরিদ্র কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে, আর এলিট নেতারা ছাদের নিচে বসে হো হো করে হাসবে৷ মুর্খের জাতির কখন যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে, খোলা মাঠে পায়খানা আর গোমুত্র খেয়ে খেয়ে মাথা নষ্ট হয়েছে।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Assad ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৫২ পিএম says : 0
    রহমান সাহেবদের কামড়াছে কেন? ওটা দাদাদের সমস‍্যা তাদের বিষয়ে নাক গলাবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ