Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বজনীন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হতে চায় সউদী আরব

প্রথা ভেঙে পরিবর্তন ঘটছে চিরাচরিত সউদী সংস্কৃতির

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪৫ এএম, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

সোমবার থেকে শুরু হওয়া রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অতীতের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত একটি মাঠে হিলারি সোয়াঙ্ক এবং নাওমি ক্যাম্পবেলের মতো তারকারা গাউন পরে লাল গালিচায় হেঁটেছেন এবং সউদী প্রভাবশালীরা ডিজে পার্টিতে নেচেছেন। এ সবই ঘটেছে এমন একটি দেশে, যেখানে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মহিলাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না, সিনেমা নিষিদ্ধ ছিল এবং উচ্চাকাক্সক্ষী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জনসমক্ষে মৃত্যুদন্ড থেকে বাঁচার জন্য প্রায়ই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে হতো।

সউদী আরবের এই সাস্কৃতিক পরিবর্তনটি প্রকৃতপক্ষে সউদী আরবের ছায়া শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান-এর হাত ধরে সঙ্ঘটিত হতে শুরু করেছে, যিনি দেশটির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি বিশ^জনীন বিনোদন শিল্প তৈরি করে সউদী আরবের নেতিবাচক ভাবমর্যাদাকে ঝেড়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর। যদিও বিভিন্ন সঙ্ঘাত ও সঙ্কট আরব সংস্কৃতির রাজধানীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে, এর মধ্যেও সউদী আরব চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে এবং নতুন সিনেমার তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে শুরু করেছে।
অতি রক্ষণশীল চিরাচরিত প্রথা ভেঙে সউদী আরবের এই সাংস্কৃতিক উদ্যোগ সমগ্র আরব বিশ্বের সৃজনশীল শিল্পে চলমান গভীর পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করছে। বিগত শতাব্দীগুলোতে দেশটি তেল, মরুভ‚মি এবং রক্ষণশীল ইসলামের জন্য পরিচিত হলেও কায়রো, বৈরুত, দামেশক এবং বাগদাদ আরব সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং বহু বøকবাস্টার সিনেমা, হিট গান এবং বহুল বিক্রিত সাহিত্য উপহার দিয়েছে।

এই মাসে জেদ্দায় একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হওয়া ২৭টি সউদী-নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে এমন কয়েকটি ছিল, যা মধ্যপ্রাচ্যে একটি সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে একটি সিনেমাটিক পাওয়ার হাউসে রূপান্তর করার জন্য সউদী আরবের বিশাল প্রচেষ্টার অংশ। চলচ্চিত্রগুলোর একটিতে দেখা যায় যে, একজন গর্ভবতী সউদী মহিলা বাড়ি থেকে অনেক দূরে নিজেকে ভিতরের এবং বাইরের ইবলিসের দ্বারা পরিবেষ্টিত দেখতে পান। অন্যটিতে, একজন সউদী ব্লগার ও তার বন্ধুরা ইন্টারনেট আসক্তির ফলে সৃষ্ট আরো রহস্যময় বিপদের আশঙ্কায় অন্ধকার জঙ্গলে পালানোর চেষ্টা করে। আরেকটিতে, একটি বিয়েতে আতঙ্কগ্রস্ত কনের মাকে দেখা যায়, যার মেয়ে নিচের তলায় অপেক্ষা করা সমস্ত অতিথিদের সাথে অদৃশ্য হয়ে যায়।

গত এক দশকে আঞ্চলিক দ্ব›দ্ব, আর্থিক মন্দা এবং রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতার কারণে আরব সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ সিরিয়ার টেলিভিশন স্টুডিও এবং বাগদাদের প্রকাশকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অর্থনৈতিক পতন লেবাননের সিনেমাগুলোকে অস্তিত্ব সঙ্কটে ফেলেছে। মিসরের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, যা দেশটির উপভাষাকে সবচেয়ে বেশি বোধগম্য আরবিতে পরিণত করেছে, বহু বছর ধরে সেটি পতনের মধ্যে রয়েছে এবং এর টিভি শো-গুলোকে সরকার-সমর্থিত থিম প্রচারের জন্য দেশের গোয়েন্দা পরিষেবাগুলো হাইজ্যাক করেছে।

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের স্থবির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলটিতে আধিপত্যের আবহ হয়েছে এবং সউদী আরব সুযোগটি কাজে লাগাতে প্রচুর ব্যয় করছে। নতুন চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে তোলার জন্য সউদীরা তাদের দেশের তেল সম্পদ ব্যবহার করে দেশীয় প্রযোজনার জন্য অর্থায়ন করছে, সউদী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য স্পন্সর করছে এবং দেশীয়ভাবে প্রশিক্ষণের জন্য স্কুল, সাউন্ড, স্টেজ এবং স্টুডিওগুলো স্থাপন করছে। দেশটি সউদী ভিজ্যুয়াল শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী এবং শেফদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য অনুরূপ উদ্যোগে অর্থায়ন করছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা ঘোষণা করেছেন যে, সউদী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ১শ’ চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি এবং অর্থায়নসহ নতুন প্রকল্পগুলোতে অন্যান্য সহায়তা প্রদান করবে। সউদী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অনুষ্ঠিত হওয়া একটি ট্যালেন্ট হান্টে সউদী আরবের চলচ্চিত্র ও থিয়েটার প্রযোজক মোনা খাশোগি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে সউদী আরবে আলোকিত হওয়ার সময় এসেছে।’

এরই মধ্যে সউদী সরকার তিনটি বড়-বাজেটের হলিউড প্রযোজনাকে অর্থায়ন এবং সরকারিভাবে সরবরাহকৃত হেলিকপ্টার এবং ফাইটার জেট দিয়ে সউদী ফিল্মের জন্য তাদের উৎসাহিত করেছে, যেগুলোর দর্শনীয় মরুভ‚মির ল্যান্ডস্কেপ গন্তব্য হিসেবে জর্ডান এবং মরক্কোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। উৎসবে একটি প্যানেল আলোচনা চলাকালে সউদী বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বাহা আব্দুল মাজিদ বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য হ’ল, সউদী আরবকে এই অঞ্চলে চলচ্চিত্র নির্মাণের একটি নতুন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা।’

সউদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্রগুলো এই অঞ্চলের দেখার অভ্যাসের রূপান্তর ঘটাচ্ছে এবং সুযোগ তৈরি করছে। এটি আরবি ভাষার অনুষ্ঠাগুলোর জন্য একটি বড় বাজার তৈরি করেছে। দেশটি ইতোমধ্যেই আরবও স্ট্রিমিং পরিষেবার ক্ষুধা মেটাতে শুরু করেছে। নেটফ্লিক্স গত বছর সউদী ক্রিয়েটিভ স্টুডিও টেলফাজ১১-এর সাথে আটটি ছবির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

সউদী আরবের এই পরিবর্তন সম্পর্কে উত্তর ক্যারোলাইনার ডেভিডসন কলেজের আরব স্টাডিজ-এর অধ্যাপক রেবেকা জুবিন বলেন, ‘সউদী প্রযোজনাগুলোও লেবানন, সিরিয়া এবং মিসরের থেকে অভিনয়, লেখা এবং পরিচালনায় প্রতিভার পরিচয় দিতে পারে এবং অ-সউদী দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সম্ভবত এটি করতে হবে।’



 

Show all comments
  • হাবিবুর রহমান ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৯ এএম says : 0
    যারা পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করছে অচিরেই হয়তো নিজেরাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর তারিক ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৪ পিএম says : 1
    সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সবার জন্য কল্যান বয়ে আনবে বলে আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহের আলী ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম says : 1
    সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ভালো ভাবে দেখছি। তবে ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোতে যেন এর প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল্লাহ নবীন ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    বর্তমান সাংস্কৃতিক অগ্রগতির যেন ধারাবাহিকভা থাকে এবং ধর্মীয় স্থানগুলোও যেন সুরক্ষিত থাতে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৮ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের উচিত অন্য জায়গায় টুরিস্ট আকর্ষণ বৃদ্ধি করে সেখানকার অর্থ দিয়ে হাজীদের সেবা করা। কারণ দিন দিন হজের খরচ সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নুরুল আমিন ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের পবিত্র নগরীগুলোর সুরক্ষায় যা যা করা দরকার সৌদি সরকারের তা নিশ্চিত করা জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • হারুন অর রশীদ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০১ পিএম says : 1
    বর্তমান ক্রাইন প্রিন্স বাংলাদেশেও অনেক জনপ্রিয়, তার হাত ধরে সৌদি অনেক সংষ্কার হবে বলে আশা করি। ধরর্মীয় গোড়ামি এড়িয়ে উন্নয়নের পথে চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম মোহাম্মদ ফাতিহ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০২ পিএম says : 1
    আমার ভাই দীর্ঘ ১০ বছর সৌদি থাকেন। সে জানালো বিন সালমানের কারণে সৌদি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক অগ্রগতি এখন চোখে পড়ার মতো।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবর শেখ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৪ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের ধর্মীয় গোড়ামি ও ইক্সট্রিমিস্ট রাজনীতির কারণে মুসলিম বিশ্ব অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখান থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসলে এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো।
    Total Reply(0) Reply
  • রাশিদ খান ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ পিএম says : 2
    খুবই ভালো উদ্যোগ। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বিন সালমানের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের উদ্যোগে খুবই উৎসাহী।
    Total Reply(0) Reply
  • নাকিব নাকিব নাকিব ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৮ পিএম says : 1
    সৌদির কট্টরপন্থী মোল্লারা কট্টর যে ডকটিন তৈরি করেছে তাতে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসলে আবার সৌদি আরব সারা বিশ্বে তার প্রভাব ফিরিয়ে পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির আহমেদ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৮ পিএম says : 0
    কট্টরপন্থী মোল্লাদের নিয়ে সৌদি আরব বেশিদুর এগোতে পারবে না, ইনশায়াল্লাহ প্রকৃত ইসলামের জয় হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল ধ্রুব তাঁরা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৯ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের উচিত তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান করতে বেশি বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া। বাংলাদেশের উচিত সৌদির সাথে যোগাযোগ করে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল ধ্রুব তাঁরা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৯ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের উচিত তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান করতে বেশি বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া। বাংলাদেশের উচিত সৌদির সাথে যোগাযোগ করে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইমন রাকিব ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৩ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের পরিবর্তন হওয়া উচিত। রাজতন্ত্রের ক্ষমতা কমিয়ে জনগণের হাতে কিছু ক্ষমতা আসা দরকার। শুধু সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটালে হবে না পরিবার তন্ত্রের একক ক্ষমতাও কমাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মানিক হেলাল ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৪ পিএম says : 0
    ইসলামের শরিয়ত ঠিক রেখে এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন করলে বিশ্বের মুসলিমরা খুশি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মানিক হেলাল ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:২৭ পিএম says : 1
    সৌদি আরবের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে যাতে বাংলাদেশ শরিক হতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে বেশি বেশি শ্রমিক পাঠানোর দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • kanchon ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৫ পিএম says : 0
    Allah know all things
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar+Hossain ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ পিএম says : 0
    যারা পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করছে অচিরেই হয়তো নিজেরাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী আরব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ