Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঞ্জাবের গুরুদ্বারে বিতর্কিত হত্যা, শুরু রাজনীতিও

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৮ পিএম

এক সপ্তাহে পর পর দুইটি খুন পাঞ্জাবের দুই গুরুদ্বারে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে। শিখদের যা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে কাপুরথালা অঞ্চলে। হত্যাকারীদের অভিযোগ, দুই ক্ষেত্রেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা শিখ ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেবের অবমাননা করার চেষ্টা করেছিল।

প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ যতই গুরুতর হোক, তার জন্য আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কি কারও আছে? শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, পাঞ্জাব সরকার এবং পুলিশও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ২০২২ সালে পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টিতে রাজনীতির রং-ও লেগেছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন স্বর্ণ মন্দিরে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা হয়। অভিযোগ, গ্রন্থ সাহেবের অবমাননার চেষ্টা করেছিল ওই ব্যক্তি। মন্দির চত্বরেই তাকে ঘিরে ধরে মারা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ যখন পৌঁছায়, ততক্ষণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। পুলিশ তার আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করে দেখছে। বায়োমেট্রিক থেকে আধার কার্ডের লিঙ্ক পাওয়া সম্ভব।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ঠিক এর একদিন পর কাপুরথালার গুরুদ্বারে। অভিযোগ, সেখানে বিহার থেকে আসা এক পরিযায়ী শ্রমিক সারা দিন ছিলেন। গুরুদ্বারে খাওয়াদাওয়া করেছেন। শিখ ছাত্রদের পোশাক পরে তিনি গ্রন্থসাহেবের সামনে রাখা তরোয়াল চুরি করে মারা চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। গুরুদ্বারের কর্মীরা তাকে ধরে ফেলে। মারধর করে তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারই মধ্যে এলাকায় ভিড় জমতে শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মারমুখী জনগণ তাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। পুলিশ জোর করে ওই ঘরে ঢুকলে এক ব্যক্তি তরোয়াল দিয়ে আটক ব্যক্তিকে হত্যা করে বলে অভিযোগ।

দুইটি ঘটনাতেই পুলিশ নিহত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাদায়ের করেছে বলে অভিযোগ। কিন্তু যাদের হাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়নি বলে একাংশের দাবি। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বিশেষ দল গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুরো বিষয়টিই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

২০২২ সালে পাঞ্জাবে নির্বাচন। সেখানে এখন কংগ্রেসের সরকার। কিন্তু কিছুদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং পদত্যাগ করে দলত্যাগ করে নতুন দল তৈরি করেছেন। অন্যদিকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি নভজ্যোত সিং সিধুর ঘনিষ্ঠ। অমরিন্দর সিং আবার বিজেপির সঙ্গে কথা বলছেন। একদা বিজেপির শরিক অকালি দল আবার কৃষক আন্দোলনের সময় কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসে। এ হেন রাজনৈতিক টালমাটালের পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবের এই দুই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে।

শিখদের সংগঠন জানিয়েছে, ধর্মগ্রন্থের উপর আক্রমণ হলে এমন শাস্তিই হবে। সব বিষয় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখা যায় না। আবার অমরিন্দর সিং ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। বলেছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। সিধু আবার গ্রন্থসাহেব অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে চরম শাস্তির পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, লিঞ্চিংয়ের পক্ষে কি না! বিজেপির একাধিক নেতাও বিতর্কিত টুইট করেছেন।

মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, প্রথমত, এখনো নিহত দুই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তারা কেন সেখানে গিয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। যদি তারা অপরাধীও হয়, তাহলেও কি তাদের পিটিয়ে মারার অধিকার আছে? অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময়েই পাকিস্তান-পাঞ্জাব সীমান্তে একটি ড্রোন ধরা পড়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে ওই ড্রোনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র: পিটিআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ