Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

যে কোন ঘরনার ফুটবলে শেষবার কতদিন আগে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম পুরিপূর্ণ দর্শক হয়েছিল তা হয়তো অনেকেই বলতে পারবেন না। তবে গতকাল রাতে যেন জেগে উঠেছিল এই স্টেডিয়ামটি। শুধু গ্যালারিই নয়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্রতিটি ভবনের ছাদ ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। সে এক নজরকাড়া দৃশ্য। উপলক্ষ্য সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। যে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শক্তিশালী ভারত। ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতেছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ডিফেন্ডার আনাই মুগিনী।

বিজয়ের মাসে ফুটবলে আরেকটি জয় পেল বাংলাদেশ। তাই তো ম্যাচ শেষে স্বাগতিক দলের ফুটবলাররা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ¡সিত। আনন্দের আত্মহারা মারিয়া মান্ডা, ঋতুপর্ণা চাকমা, শামসুন্নাহাররা। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে গ্যালারির সামনে ল্যাপ অব অনার দিলেন তারা। ফটোগ্রাফারদের ক্লিক ক্লিক শব্দে ফ্ল্যাশ গিয়ে পড়ল মারিয়া, তহুরাদের মুখে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের মতো প্রথমবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টেও প্রথম চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। যে কারণে আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশি। স্টেডিয়ামের উত্তর ও দক্ষিণ গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তিল ধরনের ঠাঁই নেই। অনেকেই বসতে না পেরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য গেটে ছিল লম্বা লাইন। দীর্ঘদিন পর ফুটবল মাঠে এত দর্শক দেখা গেল। প্রায় ১৮ হাজার দর্শক খেলা দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন। শীতের রাতে দুই গ্যালারির দর্শকরা একসঙ্গে মোবাইলে আলো জ্বেলে অভয় দিলেন মারিয়াদের। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। গ্যালারিতে উড়েছে লাল-সবুজের পতাকা। ভুভুজেলায় ফুঁ দিয়ে দর্শকরা উৎসাহ দিয়েছেন টিম বাংলাদেশকে।

ম্যাচের শুরুটা কিন্তু ভারত করেছিল আক্রমণাত্মক মেজাজে। প্রথম পাঁচ মিনিট তারা বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়ে খেলার চেষ্টা করলেও খুব অল্প সময়েই নিজেদের গুছিয়ে নেন মারিয়া-তহুরারা। ছন্দময় ফুটবল উপহার দিয়ে তারা একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন ভারতের রক্ষণদুর্গে। নৈপূণ্য ছড়িয়ে মন-মাতানো ফুটবলে সবাইকে মোহিত করেছেন তারা। ছোট ছোট পাসে, দারুণ বোঝাপড়ায় বাংলাদেশের আক্রমণগুলো ছিল অনেক গোছালো। রক্ষণভাগ থেকে শুরু করে মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগ-সব পজিশনেই ছিল স্বাগতিকদের দাপট। শুধু ফাইনালেই নয়, টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচেই বাংলাদেশ ছিল দুর্দান্ত। পুরো টুর্নামেন্টে ২০ গোল করে বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি লাল-সবুজের মেয়েরা।

ফাইনালের বেশিরভাগ সময়ই বল ভারতের সীমানায় ঘোরাফেরা করেছে। ফলে বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ম্যাচের ১৫ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। এসময় মাঝমাঠ খেকে মারিয়া মান্ডার শট ভারতের গোলরক্ষক আনশিকা ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। সামনে পড়া বল তহুরা খাতুনের পায়ে গেলে তিনি চমৎকার শট নেন। কিন্তু গোললাইন থেকে বল ফেরান ডিফেন্ডার নিরমলা দেবী। অবশ্য বল গোললাইন অতিক্রমের মূহূর্তে গোলরক্ষক আনশিকা দৌড়ে এসে তা নিজের গ্রিপে নেন। গোলের দাবিতে রেফারিকে ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি নেপালের রেফারি অঞ্জনা রায়। ২২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়া তহুরার বাঁ পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। মিনিট তিনেক পর আনাই মুগিনীর উড়ন্ত ক্রসও পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

শুরুতে আক্রমণাতœক খেলা ভারত, সময়ের ব্যবধানে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। পুরো ম্যাচে তাদের রক্ষভাগে চার-পাঁচ ফুটবলার সবসময় ছিলেন। তহুরা, শাহেদা আক্তার রিপারা বল নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। গোলের জন্য মরিয়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তাই বেছে নেন দূরপাল্লার শট। বক্সের বাইরে থেকে মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমাদের বেশিরভাগ শট কখনো ক্রসবার ঘেঁষে, আবার কখনো বা পোস্টের পাশ ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। অসংখ্য আক্রমণ করেও গোল পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা। অবশেষে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন মারিয়াদের দিকে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। এসময় ডানপ্রান্ত দিয়ে শাহেদা আক্তার রিপা ব্যাকহিল পাস দেন আনাই মুগিনীকে। রিপার পাস ধরে আনাই বক্সের বাইরে থেকে উঁচু করে শট নেন। ভারতের গোলরক্ষক আনশিকা বলের ফ্লাইট বুঝতেই পারেননি। তিনি হাত লাগালেও বল গোললাইন অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম (১-০)। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের বাকি সময় উৎসবমুখরই থাকে গ্যালারি। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও শেষ পর্যন্ত আর গোলের দেখা পায়নি ভারত। অন্যদিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করার বেশ ক’টি সুযোগ পেলেও তা আর কাজে লাগাতে পারনেনি মারিয়া মান্ডারা। ফলে ১-০ ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। শিরোপা জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম দর্শকদের ভালো খেলা উপহার দেব। নিজেদের কথা রেখেছি। ভালো ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমরা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উপহার দিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।’

টুর্নামেন্টের ফেয়ার প্লে ট্রফি জিতেছে নেপাল। মোট ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের শাহেদা আক্তার রিপা। আসরের মোস্ট ভেল্যুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কারও যায় তার কাছেই।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফাইনাল শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল, বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।



 

Show all comments
  • Riya Moni ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ এএম says : 0
    বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর! কাজী নজরুলের এ চরণ দু'টি আবারো প্রমাণ করে দিল তাঁহারা। অভিনন্দন বাঘিনী দেরকে।
    Total Reply(0) Reply
  • বিরাট কোহলি ভক্ত ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    পুরো টুর্নামেন্টে জুড়ে আমাদের মেয়েগুলো যে পরিশ্রম আর ডেডিকেশন নিয়ে খেলেছে তা এককথায় অসাধারণ। এতেই প্রমানিত হয় ডেডিকেশন থাকলে সব কাজেই সফলতা আসে কি মাঠে, কি বোর্ডে!
    Total Reply(0) Reply
  • Moksuder Rahman ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    তোমাদের জন্য অনেক শুভকামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Nazrul Islam ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    বাঘিনীরা বাঘের মতো লড়াই করেই জয় করেছে!! অভিনন্দন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল.. সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ইন্ডিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনাল জয়
    Total Reply(0) Reply
  • Don Technomech ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৯ এএম says : 0
    প্রথম আসরেই বাজিমাত বাংলাদেশের আনাই মোগিনির একমাত্র গোলে সাফ অনূর্ধ্ব - ১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২১ এর ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাঘিনীরা অভিনন্দন বাংলাদেশ পুরো টুর্নামেন্টে ২০ গোল করা বাংলাদেশ দল কোনো গোলই হজম করেনি
    Total Reply(0) Reply
  • Rony Omar ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়দের এই কৃতী মেয়েদের দিয়ে ফুটবল খেলা শেখানোর জোর দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafizur Rahman Chowdhury ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:২৯ এএম says : 0
    Congratulations Team young lady Tigers
    Total Reply(0) Reply
  • Md Al Amin ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩০ এএম says : 0
    congratulation Bangladesh women's team
    Total Reply(0) Reply
  • Mokles Ahmed ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩০ এএম says : 0
    Congratulations Bangladesh U19 women's team
    Total Reply(0) Reply
  • Journalist Tareq Rahman ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩১ এএম says : 0
    অভিনন্দন বাংলার বাঘিনীদের দেশের সন্মান বাড়ানোর জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটবল

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ