মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সউদী আরবের অন্যতম বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর জেদ্দা। ভৌগোলিকভাবেও এ শহর বেশ তাৎপর্যময়। সে কারণেই জেদ্দাকে আরো আধুনিক করতে চায় সউদী সরকার। এরই মধ্যে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জেদ্দার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘নিউ জেদ্দা ডাউনটাউন’।
এ অঞ্চলের প্রায় ৬০ লাখ বর্গমিটার উন্নয়নের আওতায় আনা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
প্রকল্পটি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সেন্ট্রাল জেদ্দা ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের শেষ দিকে। এরপর দেশটির ভেতরের ও বাইরের বাসিন্দা ও ভ্রমণকারীদের গ্রহণ করবে জেদ্দা। জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে সউদী আরবের ভেতরে ও বাইরের বিনিয়োগকারীরা এতে অর্থায়ন করবে। ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি এরই মধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সউদীর অর্থনীতিতে আরো প্রায় পাঁচ হাজার কোটি সউদী রিয়াল যোগ হবে। অপেরা হাউস, একটি জাদুঘর, একটি স্টেডিয়াম, মহাসাগরের অববাহিকা ও প্রবাল খামারের মতো প্রকল্পে চারটি প্রধান আন্তর্জাতিক ল্যান্ডমার্ক অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নির্মাণ করা হবে ১০টির বেশি বিনোদন কেন্দ্র ও পর্যটন এলাকা।
তাছাড়া এ প্রকল্পে বিশ্বমানের মেরিনা, সমুদ্রসৈকত রিসোর্ট ছাড়াও বিস্তৃত বিলাসবহুল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন শপিংমল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে জেদ্দা একটি সমন্বিত বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। সূত্র : আরব নিউজ।
জাপানি প্রযুক্তি বাংলাদেশে অচল
রাজধানীতে বসানো রোবটিক ইন্টিলিজেন্স সিগন্যাল ব্যবস্থা
কামাল আতাতুর্ক মিসেল
রাজধানীর পল্টন মোড়। ট্রাফিক পুলিশের কাজ চলছে বাঁশি, হাতের ইশারা আর বাঁশের লাঠি দিয়ে। মেগা এ শহরে এখনও পুলিশের হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করা হয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাজধানী শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় অসহনীয় যানজটসহ সড়কে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা।
অথচ দু’বছর আগে ৫২ কোটি টাকা খরচ করে এই রাজধানী শহরের পল্টনের পাশাপাশি গুলশান-১, গুলিস্থান ও মহাখালী এই চার স্থানে জাপানির উন্নত প্রযুক্তির রোবটিক ইন্টিলিজেন্স সিগন্যাল বসানো হয়েছে। জাপানি এই প্রযুক্তির পদ্ধতি সড়কের চার দিকের ৩শ’ মিটার দূরত্বের গাড়ির সংখ্যা নির্ণয় করে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। তবে এই চার স্থানের সমীক্ষা সফল হলে রাজধানীর প্রায় দেড়শতাধিক স্থানে রোবটিক ইন্টিলিজেন্স সিগন্যাল চালুর পরিকল্পনা ছিল ঢাকা পরিবহনের সমন্বয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ৫২ কোটি টাকা খরচ করে বাসানো জাপানি এই প্রযুক্তি কোন কাজেই আসছে না। কীভাবে এটাকে কাজে লাগাতে হবে তার কোন ধারণাই নেই কর্তৃপক্ষের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের ফলে সুফল মিলছে না। ঢাকার যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল প্রকল্প গ্রহণের ওপরই জোর দেন তারা। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, জাপানি এই প্রযুক্তির সিগন্যাল লাইটগুলো আপাতত চলেেছ না। যতটুকু পারি হাত দিয়ে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করি। এছাড়াও মানুষের মধ্যে সিগন্যাল দেখে চলা বা আইন মানার প্রবণতা নেই। তাই বাধ্য হয়েই হাতের ইশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। তবে আশা প্রকাশ করে তারা বলেন, খুব শিগগিরই এ ব্যবস্থার পুরোপুরি দায়িত্ব পাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে। বিশ্বের উন্নত দেশ তো বটেই, অনেক উন্নয়নশীল দেশও বড় শহরগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা অনেক আগেই চালু করেছে। ফলে সেইসব দেশের সড়কে নেই যানজট ও বিশৃঙ্খলা।
সরেজমিনে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পৃথক চারটি রোবটিক ইন্টিলিজেন্স সিগন্যাল বাতির খুঁটি রয়েছে। প্রতিটি খুঁটিতে রয়েছে ছয়টি করে স্বয়ংক্রিয় বাতি এবং দুটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা। গাড়ির চালক, যাত্রী, পথচারী সবারই নজর বাতিগুলোতে। কিন্তু স্থাপনের দুই বছরেও জ্বলতে দেখা যায়নি স্বয়ংক্রিয় বাতিগুলো। অব্যবস্থাপনা আর অবহেলায় সেগুলোর ওপর জমেছে কয়েক স্তরের ধুলাবালির আবরণ।
গুলশান-১ নম্বর মোড়ে হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন কনস্টেবল রহমত। তিনি বলেন, দুই বছর আগে এই মোড়ে রোবটিক ইন্টিলিজেন্স ট্রাফিক সিগন্যালগুলো স্থাপন করতে দেখেছি। কিন্তু এগুলো কে চালাবে, কীভাবে চলবে বা নিয়ন্ত্রিত হবে সে বিষয়ে আমাদের কেউ কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
মহাখালী থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য বের হওয়া যুবক হারুন সৌরভের সঙ্গে কথা হয় বিজয় সরণি মোড়ে। তিনি জানান, প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করেন। সব সময় এই সিগন্যালে আটকা পড়তে হয়। মাঝে মাঝে ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত থমকে থাকতে হয়। এখানে কোনও নিয়মনীতি নেই। নেই নজরদারিও।
শিকড় পরিবহনের চালক আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় গাড়ি চালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে বাতি থাকলে দূর থেকে দেখতে পারতাম। এখন সেটা দেখতে পারি না। গণপরিবহনে নিয়মিত যাতায়াতকারী নঈম খন্দকার বলেন, উন্নত প্রযুক্তির রোবটিক ইন্টিলিজেন্স সিগন্যাল পদ্ধতি চালু হলে সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশে এ অবস্থা কবে চালু হবে? এই আধুনিক যুগেও ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় চলতে হয়। ফলে যানজট লেগেই থাকে।
ইন্টিলিজেন্স সিগন্যালের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, এই অত্যাধুনিক সিগন্যাল সিন্টেমটির বিষয়ে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কোন ট্রেনিং বা এ ধরনের কোন ওয়ার্কশপ করিনি। এমনকি তারা কিভাবে সিগন্যাল সিন্টেম ব্যবহার করে এ ব্যাপারে সেটা দেখাও হয়নি। তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের জন্য বানানো এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অচল। ঢাকার রাস্তা গাড়ির ধরন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এটা পুরোপুরি অবাস্তব।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল বলেন, আমাদের না আছে লেন, না আছে অল মটররাইস সাথে নন মটররাইসও আছে। যারা এটাকে প্রস্তাব করেছেন তারা নিজেরাও কোন দিন সিগন্যাল ডিজাইন করেননি। সিগন্যালের জন্য কি কি দরকার হয় তাও জানেন নি। এ পদ্ধতি কার্যকরের জন্য পূর্ব শর্তগুলি ঢাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব নয় জানিয়ে এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি অযথা টাকা খরচের একটি প্রকল্প।
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ট্রাফিক ডিজিটালাইজেশনের বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এর আলোকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কী রকম হবে তা নিয়েও কাজ চলছে। এটা বাস্তবায়ন কিংবা শেষ হতে বেশ সময় লাগতে পারে। সিটি করপোরেশন এবং এই কাজে যারা জড়িত, সবার সমন্বয়ে কীভাবে পরবর্তী ধাপগুলো শেষ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা যাতে নগরবাসী পায় তা আমাদের নজরে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।