Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:১০ পিএম

যৌনকর্মীদের আধারকার্ড দেওয়ার নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে লড়াই করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সম্প্রতি যৌনকর্মীদের অধিকারের এক মামলায় যুগান্তকারী রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, ভারতে সমস্ত মানুষের সমান অধিকার। তারা কী কাজ করে, তার উপর অধিকারের তারতম্য হতে পারে না। সুতরাং, প্রতিটি রাজ্যকে তারা নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুত সমস্ত যৌনকর্মীকে আধারকার্ডের আওতায় আনতে হবে। তাদের রেশন কার্ড দিতে হবে এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টে যৌনকর্মীদের হয়ে এই মামলা করেছিল দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। দীর্ঘদিন ধরে যৌনকর্মীদের হয়ে লড়াই করছে কলকাতার এই এনজিওটি। দুর্বারের অন্যতম কর্মকর্তা মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''কোনো কোনো রাজ্যে যৌনকর্মীদের অনেক অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার দেওয়া হয়নি। কোভিডের সময় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। তারপরেই আদালতে এ বিষয়ে মামলা করা হয়। গত বছরেও সুপ্রিম কোর্ট যৌনকর্মীদের অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিল।''

ভারত তথা এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এবং বড় যৌনপল্লি কলকাতার সোনাগাছি। কয়েক লাখ যৌনকর্মী সেখানে কাজ করেন। এদের একটি বড় অংশ সোনাগাছিতেই থাকেন। একাংশ আবার কাজ করে শহরের অন্যত্র বা মফসসলে ফিরে যান। সোনাগাছিতে বসবাসকারী যৌনকর্মীদের অধিকাংশেরই আধারকার্ড আছে। তারা নিয়মিত ভোটও দেন। রেশনও পান। দুর্বারের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে অনেক আগেই তাদের সেই অধিকার আদায় করা গেছে। কিন্তু যারা সোনাগাছির বাসিন্দা নন, তাদের সকলের পরিচয় স্পষ্ট ছিল না। করোনাকালে দেখা যায়, ওই 'ফ্লাইং' যৌনকর্মীদের একটি অংশের আধারকার্ড, ভোটার কার্ড নেই। এমনকী, রেশনকার্ডও নেই।

আদালতে দুর্বার জানিয়েছে, সব মিলিয়ে গোটা দেশে প্রায় নয় লাখ যৌনকর্মী আছে। কোভিডের সময় দেখা যায়, এর মধ্যে অন্তত এক লাখ ৩০ হাজার যৌনকর্মীর আধারকার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড নেই। কোভিড লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত না খেতে পেয়ে মরার উপক্রম হয়েছিল তাদের।

গত বছরই এই সমস্যার সমাধান করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রেশন কার্ড না থাকলেও তাদের কুপন দিয়ে রেশনের খাবার তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যগুলি যাতে এ কাজে যৌনকর্মীদের বাধা না দেয়, সেই নির্দেশও দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সাম্প্রতিক রায়ে ওই যৌনকর্মীদের আধারকার্ড এবং ভোটার কার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

দিল্লির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন অনুরাগ গর্গ। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, উত্তর ভারতে যৌনকর্মীদের সামাজিক সংকট অনেক বেশি। বিভিন্ন রাজ্য থেকে পরিচয় গোপন করে দিল্লিতে যৌনব্যবসা করতে আসেন অনেকে। সোনাগাছির মতো অর্গানাইজড ব্যবস্থা নয়। ফলে দীর্ঘদিন বোঝাই যায়নি কার পরিচয়পত্র আছে এবং কার নেই। কোভিডের সময় পরিস্থিতি বোঝা যায়। আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে সার্বিকভাবে সমস্ত যৌনকর্মীর উপকার হবে বলে তার মত।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতের আইন অনুযায়ী কাজের সঙ্গে পরিচয়পত্রের (ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড) কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নেওয়ার সময় কোনো ব্যক্তিকে তিনি কী কাজ করেন, তা জানাতে হয় না। বয়স, ঠিকানা এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ দিলেই পরিচয়পত্রগুলির জন্য আবেদন করা যায়। যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে অন্য। সামাজিক ট্যাবুর জন্য পরিচয় গোপন করে তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কাজ করতে গেছেন। ফলে তাদের অনেকের কাছেই কোনো পরিচয়পত্র ছিল না। আদালতের এই রায় সামাজিক ট্যাবুও খানিকটা ভাঙবে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ