চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
দুর্নীতি সমস্যার সমাধানের জন্য আপাততঃ দুর্নীতির আগে ন্যায়নীতির প্রতি গভীরভাবে দৃ’ি নিবন্ধ করা প্রয়োজন। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর নিমিত্তে সর্বপ্রথম ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার চিন্তা ও সর্বাত্মক প্রচে’া নিয়োগ করতে হবে। এটিই উত্তম পন্থা এবং এ পন্থায় দুর্নীতি দমন সম্ভব। রসূলুল্লাহ স.-এর পবিত্রতম জীবন চরিত থেকে আমরা সে শিক্ষাই পাই। মহানবী স. তৎকালীন অধঃপতিত সমাজকে দুর্নীতির গভীর খাদ থেকে উদ্ধারের নিমিত্তে এর ইতিবাচক দিক তথা ন্যায়নীতি বিকাশের উপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ জন্য সর্বপ্রতশ তিনি মানুষের মন-মননে ‘আল্লাহ ও আখিরাতের ভয়’ জাগ্রত করার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। এ জন্য তিনি নেতিবাচক তথা উদ্যতভাব, খড়গহস্ত ও কর্কশভাষী হন নি। বরং তাঁর মনের সবটুকু দরদ ঢেলে দিয়ে, একান্ত অকৃত্রিম হিতাকাংখী সেজে ও অত্যন্ত কোমলভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন। যার স্বীকৃতি স্বয়ং আল্লাহ এভাবে করেছেনঃ ‘আপনি যে কোমল হৃদয় হতে পেরেছেন, তা আল্লাহর অনুগ্রহেরই ফল। কিন্তু আপনি যদি কঠিন হৃদয় ও কর্কশভাষী হতেন তাহলে তারা সকলে আপনাকে ছেড়ে চলে যেত।’ ‘আল-কুরআন, ৩ : ১৫৯’
আল্লাহ আরো বলেনঃ ‘ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো পন্থায় প্রতিরোধ করো। তখন দেখবে, তোমার সাথে যার শক্রতা, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে’। ‘আল-কুরআন, ৪১ : ১৮’ তিনি মানুষকে তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং মানব কল্যাণমুখী সমাজ কায়েমের আহবান জানাতেন। আল-কুরআনে অঙ্কিত আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য উপস্থাপন করতেন। পাশাপাশি চুরি, ব্যভিচার, সন্তান হত্যা, মিথ্যা বলা, রাহাজানি করা, আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরানো প্রভৃতি কাজ থেকে বিরত রাখা ও তাদের মনে ঘৃণা জন্মানোর চে’া করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল আত্মার পবিত্রতা সাধন, মন মানসে মলিনতা, শোষণ, জৈবিক ও পাশবিক পংকিলতাসমূহ প্রক্ষালন করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করা। তিনি শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করেছেন। কারণ আল্লাহর ভয় যার মনকে বিচলিত করে না, মানুষের ভয় তাকে কিভাবে বিচলিত করবে?
সুতরাং দুর্নীতিকে সমূলে উচ্ছেদ করে মানুষকে দানশীল, উদার, সহানুভূতিশীল, মানব-দরদী ও পারস্পরিক কল্যাণমুখী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মকভাবে ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে। এ জন্য রসূলুল্লাহ স.-এর দেখানো ইতিবাচক পথ ধরেই আমাদের এগুতে হবে। এ জন্য তিনি আল্লাহর দেয়া প্রতিটি আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কারণ ইসলামের প্রতিটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত দুর্নীতি দমনে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। যে সমাজে বা রাস্ট্রে এগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে দুর্নীতির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তবে এ বিধানগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে যদি আমি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি তাহলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায় করবে, ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে।’ ‘আল-কুরআন, ২২ : ৪১’। আল্লাহ আরো বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ করবে আর অসৎ কাজের নিষেধ করবে। আর এরাই সফলকাম।’ ‘আল-কুরআন, ৩ : ১০৪’।
তাই আমরা যদি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে অপরাধ আর দুর্নীতি করার ইচ্ছা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারি এবং পরকালে আল্লাহর কাছে পাপ-পুণ্যের হিসাব দেয়ার ভয় সমাজের প্রতিটি মানুষের অন্তরে জাগ্রত করতে পারি তাহলে আমাদের দ্বারা অপরাধ করা আর সহজ হবে না। বরং ন্যায়নীতি মেনে চলা আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হবে। তখন দেশ উন্নতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে আর মানুষের মধ্যে বিরাজ করবে শান্তি।
ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন ঃ দুর্নীতি একটি মারাত্মক অপরাধ। আর অপরাধ যে কোন সমাজ-সভ্যতায় শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। মানবজীবনে অপরাধ অশান্তি ও অকল্যাণ বয়ে আনে। এই অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ স. প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। ইসলামের মৌলিক টুলস্ তথা নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও কেউ যদি অপরাধে লিপ্ত হয় তখন ইসলাম তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের শাস্তি আইনগুলো বাহ্যত কঠোর মনে হলেও প্রতিটি আইনের পিছনে একটি সুপ্ত রহস্য ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যেমন ইসলামের কিসাস সম্পর্কিত আইন বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী’। ‘আল-কুরআন, ২ : ১৭৮’
আল্লাহ বলেছেন, ‘যে সব লোক আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের শান্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করতে হবে কিংবা শূলিবিদ্ধ করা হবে অথবা তাদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদের নির্বাসিত করা হবে।’ ‘আল-কুরআন, ৫:৩৩’। সাধারণ আইনে অপরাধ সংক্রান্ত সকল শাস্তিকেই ‘দন্ড-বিধি’ নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ইসলামের শাস্তি আইনগুলো একটু কঠিন মনে হলেও প্রতিটি শাস্তির আলাদা আলাদা বিধান রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।