Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণহত্যার অভিযোগ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:০৩ এএম

এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ নম্বর প্যারা স্পেশাল ফোর্সের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত গণহত্যার অভিযোগ’ এনে এফআইআর দায়ের করেছে নাগাল্যান্ড পুলিশ। তার জেরে নতুন করে নাগাল্যান্ডসহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জোরদার হলো।

স্বরাষ্ট্র কমিশনার অভিজিৎ সিংহ সোমবার রাতেই দাবি করেছিলেন, নাগাল্যান্ডের ওটিংয়ে গত শনিবারের ঘটনার জন্য দায়ী সেনা কমান্ডোদের ‘ভুল খবর’ ও ‘নিয়ন্ত্রণহীন গুলিচালনা’। আজ টিজিট পুলিশ তাদের এফআইআরেও লিখেছে, 'পুলিশকে কোনো খবর না দিয়েই কমান্ডোরা গ্রামবাসীদের আসার পথে ওঁত পেতে ছিল। গ্রামবাসীদের গাড়ি দেখেই তারা বিনা প্ররোচনায় গুলি করে লোক মেরেছে। গ্রামবাসীদের হত্যা বা জখম করাই ছিল সেনার উদ্দেশ্য।' প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দফায় কমান্ডোরা ছয়জনকে গুলি করে মারে। এর পর তাদের লাশ আনতে গেলে সাত গ্রামবাসীকে হত্যা করে তারা। জখম করে ২২ জনকে। এর পরে কমান্ডোরা যথেচ্ছ গুলি চালাতে চালাতে আসামের দিকে পালায়। জখমদের আরো একজন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ছয় সপ্তাহের মধ্যে ওটিংয়ের ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলেছে কেন্দ্র ও নাগাল্যান্ড সরকারকে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, ওটিংয়ের ঘটনায় গ্রামবাসীদের আক্রমণে মারা গিয়েছেন ২১ প্যারা এসএফের কমান্ডো গৌতম লাল। ২৪ বছরের ওই জওয়ানের বাড়ি উত্তরাখণ্ডের দেবপ্রয়াগে। ওই ঘটনায় ১৫ জন জওয়ান জখম হয়েছেন। তাদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, এতজন জওয়ান মোটেই জখম হননি।

সেনা কমান্ডোদের এই কাজের পরে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি ফের জোরদার হলো। সেনাবাহিনীর হাতে দিয়ে রাখা বিশেষ ক্ষমতার এই আইন প্রত্যাহারের দাবি করেছে এনপিপিও এনডিপিপি। এই দু’টি আঞ্চলিক দলই বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তর-পূর্বের জোট নেডা তথা এনডিএ-র শরিক। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি জাতীয় সভাপতি কনরাড সাংমা উত্তর-পূর্বে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানান। নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বিভিন্ন স্থানে আজ আফস্পাবিরোধী মিছিল বেরোয়। কংগ্রেসের তরফেও অভিযোগ আনা হয়, আফস্পা বলবৎ থাকার ফলেই বছরের পর বছর সেনা ও আধাসেনা সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। সনিয়া গান্ধীর নির্দেশে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহ, নাগাল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত দলের নেতা অজয় কুমার, এমপি গৌরব গগৈ ও অ্যান্টো অ্যান্টনি ৮ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের মন জেলায় গিয়ে নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাবেন। ত্রিপুরার তিপ্রা মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যোত দেববর্মাও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। আসু ও উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, এই ঘটনা দেখাল কেন্দ্র উত্তর-পূর্বে শান্তি ফেরাতে ইচ্ছুক নয়। এর জন্য দায়ী আফস্পা। মণিপুর ‘ওমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্ক’-এর বীণালক্ষ্মী নেপ্রাম বলেন, 'বিনা বিচারে, বিনা প্ররোচনায় বছরের পর বছর সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলেছে। আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। মানুষ মারার অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে তাদের।'

এ দিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের প্রতিনিধিদের ওটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বলেন, 'আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছি।' কিন্তু তাদের যাওয়া হয়নি। যা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, 'আগেই ভয় পেয়ে গেলেন! কেন? যান গিয়ে নাটক করে আসুন, যেমন ত্রিপুরায় নাটক করতে গিয়েছিলেন। যদিও ত্রিপুরায় অশ্বডিম্ব প্রসব হয়েছে। প্রচুর কাটমানির পয়সা জমেছে। তাই পলিটিক্যাল টুরিজম করতে বেরিয়েছেন।'

তৃণমূলের তরফে বিশ্বজিৎ দেব বলেন, 'আমরা যখন বিমানে উঠব, খবর পেলাম, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। খবর পেলাম, যোরহাট থেকেই বেরোতে দেবে না। নাগাল্যান্ড ও ভারত সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সেখানকার মানুষের সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি। কারণ জানতে চাই। কারা দায়ী তা জানতে চাই।' দলের এমপি সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা অবশ্যই ওই গ্রামে যাবেন। তবে ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। গোটা দেশকে জানানো উচিত কোথায়, কার ব্যর্থতা। সুস্মিতা বলেন, 'দেশের ইতিহাসে হয়তো এ রকম হয়নি, সশস্ত্র বাহিনী মানুষের উপরে গুলি চালাচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন গোয়েন্দা ব্যর্থতা! ক্ষমা চাইছি! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।'

পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ব্যর্থতা। আমরা তাদের পদত্যাগ চাইছি। তারা পদত্যাগ করবেন না। তাদের সরাতে হবে।'

সুস্মিতা জানান, দল হিসেবে আফস্পা নিয়ে তৃণমূল অবস্থান নিতে পারে না। এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে নেয়া উচিত। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া। কংগ্রেসের সময়েও আফস্পা ছিল। কী করা উচিত, তা আলোচনার মাধ্যমেই স্থির করা ভালো। পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে মোদি সরকার এখন বিএসএফের এলাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এই ঘটনাই প্রমাণ যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সরকারকে সাথে নিয়ে চলছে না। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরে ভয়ঙ্কর আক্রমণ। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ