মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত আর রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক সেই স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকে। সেই সম্পর্ক এখন আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে রুশ কোন প্রেসিডেন্টের ভারত সফর সবসময়েই একটি নস্টালজিয়ার আবহ তৈরি করে।
এই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটিকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে একটি বড় ধরনের সফলতা বলা যায়। সেই সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়েই দুই দেশের নেতা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ (সোমবার) নয়াদিল্লিতে দেখা করতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকে বিশাল অংকের প্রতিরক্ষা চুক্তি, বাণিজ্য ঘোষণা, করমর্দন আর নরেন্দ্র মোদীর বিখ্যাত কোলাকুলি চোখে পড়বে। কিন্তু এর বাইরে আরও বড় কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে দুই দেশের দুই নেতাকে।
সাম্প্রতিক বছর এবং মাসগুলোতে এই দুই দেশ ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব অবস্থান নিয়েছে। কীভাবে তারা এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে, তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। গত এক দশক ধরে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠছিল, সেটির ফলে মস্কো-দিল্লি ঘনিষ্ঠতায় অনেকটাই ভাটা পড়েছিল। এমনকি ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদী যখন ভারত সফর করেন, তখন বিশাল সমাবেশের আয়োজনও করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ওয়াশিংটনের পক্ষে ভারতের সমর্থনের এটি ছিল একটি বহিঃপ্রকাশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কন্নোয়নের ব্যাপারে অনেকটাই নীরব থেকেছে রাশিয়া। তবে ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াড জোটে যোগ দেয়, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেন। ওই গ্রুপ দাবি করেছে, কোয়াড কোন সামরিক জোট নয় এবং বিশেষ কোন দেশকে উদ্দেশ্য করে গঠিত হয়নি। তবে মি. লাভরভ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলো ভারতকে চীন বিরোধী খেলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে।
একসময় রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন করা সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত বলছেন, কোয়াড হচ্ছে রাশিয়ার জন্য একটি রেড লাইন। এবার দুই নেতার সফরেও অবশ্যই এ নিয়ে আলোচনা হবে। মস্কোর উদ্বেগ হলো, বেইজিংয়ের সঙ্গে তাদের সম্প্রতি যে সম্পর্কন্নোয়ন ঘটছে, সেটি থেকেই হয়তো কোয়াডের উদ্যোগ। মি. ত্রিগুনায়াত বলছেন, এশিয়ায় অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোও এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়াতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতিও বেইজিং এবং মস্কোকে আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছে। পুরো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে ভারত-চীনের সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর সম্পর্ক। দেশ দুইটি লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ওই ঘটনায় ভারতীয় ২০ জন সেনা নিহত হয়েছে। চীনও পরবর্তীতে স্বীকার করেছে যে, ওই ঘটনায় তাদের বেশ কয়েকজন সৈনিক মারা গেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের উপ-পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, নতুন এই ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের জন্য একটি বড় হুমকি তৈরি করেছে। এরকম প্রেক্ষাপটে মি. পুতিনের সফর বিশেষ এই সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ''আমি মনে করি, এই সফরে রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হবে নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক পুনরায় জোরদার করে তোলা, যদিও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো অন্যরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে,'' তিনি বলছেন। মি. কুগেলম্যান এবং মি. ত্রিগুনায়াত এর মতো বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একে অপরের কাছে নিজেদের উদ্বেগ তুলে ধরার মতো জোরালো সম্পর্ক দুই দেশের রয়েছে।
আফগানিস্তানসহ আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে দুই দেশ পরস্পরের সহযোগী হিসাবে কাজ করতে পারে। রুশ নেতার এই সফরের আলোচনায় আফগানিস্তান ইস্যুও প্রাধান্য পাবে। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় ভারতের প্রতিবেশী এবং শত্রু পাকিস্তানের সেখানে প্রভাব বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশটি রাশিয়া, ইরান এবং চীনের সঙ্গেও একটি অনানুষ্ঠানিক জোট গড়ে তুলেছে বলে ধারণা করা হয়।
যেহেতু আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই দেশেরই চিন্তা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ভারতের হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে মস্কো। ''রাশিয়া এবং ভারত, উভয় দেশই তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে তাদের দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে দিল্লি এবং মস্কোর জন্যই আফগানিস্তান সমঝোতার একটি বড় ক্ষেত্র হতে পারে,'' বলছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরএএনডির জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রোসম্যান।
যখন রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি হয়েছে, তখন এই দুই পরাশক্তির সঙ্গে কীভাবে ভারত সমন্বয় করে চলবে, সেটাই দেখার বিষয়। ভারতীয় কূটনৈতিকরা মনে করেন, ভারত নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সেটিকে সম্মান জানাবে বলে তারা আশা করে। মি. ত্রিগুনায়াত বলছেন, ভারতের বিশাল অংকের প্রতিরক্ষা ব্যয় তাদের কৌশলগত সুবিধাও এনে দেবে। ''বৈশ্বিক দেশগুলোর বেশিরভাগ সম্পর্ক আসলে লেনদেনের ওপরে নির্ভর করে তৈরি হয়েছে, মস্কো এবং দিল্লির ক্ষেত্রেও তাই,'' তিনি বলছেন।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিরক্ষা খাতে যত বাণিজ্য হয়, তার ১০ শতাংশ ভারত করে।
ভারত যদিও এখন তাদের অস্ত্র সম্ভারে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কিনছে এবং নিজেদের দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। তারপরেও মস্কো ভারতের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হতে যাচ্ছে, যদিও দেশটিতে তাদের রপ্তানি ৭০% থেকে নেমে এখন ৪৯%-এ দাঁড়িয়েছে।
২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সমরাস্ত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। তবে পরের পাঁচ বছরে দেশটি ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের পেছনে পড়ে গেছে। ওয়াশিংটন হয়তো ভারতের অস্ত্র বাজারে নিজেদের বিক্রি আরও বাড়াতে চাইবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেটিও ভারতকে বিশেষ সুবিধা এনে দেবে। রাশিয়াও ভারতে তাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করবে। সোমবার বড় ধরনের কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও ঘোষণা করা হতে পারে।
তবে দুই দেশের মধ্যে যতটা বাণিজ্যিক লেনদেন হওয়া সম্ভব, এখনো তার চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে ২০১৯ সালে ভারত-রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল ১১ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের লেনদেন হয়েছে ১৪৬ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া এবং ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে পরস্পরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ৩০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চায়। তারা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও বৈচিত্র্যময় করতে চায়। তারা জ্বালানি, খনিজ, শিক্ষা, সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন নতুন খাতে মনোযোগী হতে চান। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।