Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতি দমনে ইসলাম কী বলে

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঘ. বৈষয়িক কারণ : উন্নত দেশে ব্যক্তির বৈষয়িক সম্পত্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার উপর সমাজে স্থান ও মর্যাদা নিরূপিত হয়। আমাদের দেশে সম্পদের স্বল্পতা ও অভাবের কারণে সরকার সকল কর্মীকে পর্যাপ্ত ভাতা প্রদান করতে পারে না। ফলে সে সমাজের লোকজন জীবিকা নির্বাহের জন্য এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ বৈষয়িক ব্যাপারটি দুর্নীতির অন্যতম কারণ।

ঙ. অর্থনৈতিক কারণ : দুর্নীতির অন্যতম আরেকটি কারণ হলো অর্থনীতি। অভাবে যখন স্বভাব ন’ হয় তখন সে নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে অসৎ পথে আয় করতে চায়। সীমিত আয়, অর্থাভাব, আয়ের তুলনায় বেশি ব্যয়, সন্তানের খরচ যোগানো ইত্যাদি কারণে দুর্নীতি করে থাকে।
চ. প্রকৃত শিক্ষার অভাব : বর্তমান সমাজে এ সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করছে, সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। ফলে তারা যখন বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সোনার হরিণ নামক চাকরি পেয়ে যায় আর তারাই আবার দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে অবলীলাক্রমে জড়িয়ে পড়ে।
ছ. বেতন ক্রম ও পদের স্তর : আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। তারপর ভাগ্যের কিংবা মামার জোরে কোনমতে চাকরি হলেও সরকারি চাকরিতে সহনীয় উপযুক্ত ও মানসম্মত বেতন স্কেল ও পদোন্নতি তত সহজ নয়। ফলে খুব সহজেই একজন কর্মকর্তা দুর্নীতিতে আকৃ’ হয়। ‘এ.জেড. এম. শামসুল আলম, চাকরি পদোন্নতি ও পেশাগত সাফল্য, ঢাকা : কামিয়াব প্রকাশন, ২০০২, পৃ. ৬৮’
এছাড়াও দুর্নীতির পিছনে যে সকল কারণ চিহ্নিত করা যায় তা হলো : আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি। জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান বৃদ্ধি এবং তা ব্যয়-বিনিয়োগে তদারকির অভাব। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য এবং শাসকবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতা। স্বার্থপরতা ও স্বজনপ্রীতি। বিশ্বায়ন (এষড়নধষরুধঃরড়হ), বেসরকারীকরণ (চৎরাধঃরুধঃরড়হ)। অতি লোভ, উচ্চাভিলাষ, বিলাসিতাপূর্ণ মানসিকতা ও সম্পদ আহরণে অসম অন্যায় ও প্রতারণামূলক প্রতিযোগিতা। কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন কাঠামো নির্ধারণ না করা। মেধা, যোগ্যতা ও কর্মের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বেতন বৈষম্য। দুর্নীতিবাজদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকা এবং তাদেরকে ঘৃণার চোখে না দেখা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা।
৬. দুর্নীতি দমন করার উপায় ঃ ইসলামের নিম্নোক্ত টুলসগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন- রোযা: তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠনে রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। রমযানের রোযা ফরয করে আল্লাহ বলছেন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হবে।৩৫ ‘এ. জেড. এম. শামসুল আলম, চাকরি পদোন্নতি ও পেশাগত সাফল্য, ঢাকা: কামিয়াব প্রকাশন, ২০০২, পৃ. ৬৮।’ তাকওয়া অর্থ আল্লাহভীতি। তাকওয়া বলতে বুঝি কোন এক অদৃশ্য ভয় যা আমাকে সার্বক্ষণিক তাড়া করে ফিরে। যেমন: কোন মরুভূমি অথবা জনমানব শূন্য এলাকা যেখানে সন্ধ্যা নেমে এলে বিপদ ঘটার সম্ভবনা থাকে। কোন ব্যক্তি তা জানার পর সে আপ্রাণ চেষ্টা করে সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই এলাকাটি দ্রুত ত্যাগ বা অতিক্রম করার। এখানে তাকে একটি ভয় তাড়া করে, ফলে খুব দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার জন্য ভয় তাকে সাহায্য করেছে। ভয়টি হলো, জীবন বা সর্বস্ব হারাবার। কাজেই জীবনের প্রতিটি কাজ সম্পাদন এবং প্রতিটি কথা বলার সময় যদি আল্লাহর ভয় আমাদেরকে তাড়া করে তাহলে আমরা নিজেদেরকে অন্যায় কাজ থেকে রক্ষা করতে পারবো। যিনি তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেন, তিনি মুত্তাকী। এর ফলে সে সকল প্রকার দুর্নীতি বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। এটিই তাকওয়ার সম্মোহনী শক্তি।
তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট্যরে অধিকারী ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, আল্লাহ আমার সকল কর্মকা- গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করছেন। তিনি সর্বশক্তিমান বিধায় আমার প্রতিটি দুর্নীতির জন্য শাস্তি দিবেন এবং প্রতিটি ন্যায়নীতির জন্য পুরস্কৃত করবেন। তিনি জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজের হিসাব সংরক্ষণের জন্য সম্মানিত লেখকবৃন্দ নিয়োজিত করেছেন। পৃথিবীর কেউ না দেখলেও আল্লাহ ঠিকই প্রত্যক্ষ করছেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমেও যা ধরা-ছোঁয়া যায় না আল্লাহর কাছে তাও গোপন থাকে না। কারণ তিনি সামিউল বাছির অর্থাৎ তিনি শোনেন এবং দেখেন। এ ধরণের বিশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলনের নাম তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়। এরূপ বৈশিষ্ট্যরে লোক দ্বারা দুর্নীতি সংঘটিত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। এমনি ভাবে অন্যান্য ইবাদাতগুলো সম্মিলিতভাবে একজন ব্যক্তিকে ন্যায়নীতির ওপর চলার জন্য সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যায়। যেমন-
ঈমান বিল-গায়িব: অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। এটি এমন এক বিশ্বাস যে বিশ্বাস সর্বদা পরাক্রমশালী এক সত্তার ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। যে সত্তা নিখিল বিশ্বের স্রস্টা ও মহাপরিচালক, যিনি সর্বময় ক্ষমতা ও সার্বভৌম শক্তির অধিকারী, যিনি বিশ্বজাহান পরিচালনা করছেন এক মহাপরিকল্পনা মোতাবেক, যিনি গোটা দুনিয়ার প্রতিটি অণু-পরমাণুর পূর্ণ খোঁজ-খবর রাখেন, মানুষের দৈনন্দিন কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ যার নিয়ন্ত্রণাধীন, প্রকৃতি রাজ্যের যিনি মালিক ও নিয়ন্ত্রণকারী। প্রত্যেকেই এক আল্লাহ ও রসূলে বিশ্বাসী এবং প্রত্যেকেই এক আদমের আ. বংশোদ্ভুত, কাজেই ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সৌহার্দ্য ঈমানেরই অঙ্গ। ঈমানের এ ঐক্য মানুষের পার্থিব সকল কার্যকলাপকে সুসংহত করে। সেহেতু আমরা একই মনিবের গোলাম, তাই একে অপরের ওপর জুলুম করতে পারি না। উল্লেখ্য যে, দুর্নীতি একটি জুলুমও বটে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ