Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপির রোষের শিকার হচ্ছেন কমেডিয়ানরা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩২ এএম

কৌতুকের মাধ্যমে হলেও সমালোচনা সহ্য করতে রাজি নয় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এ কারণে দেশটির নানা রাজ্যে বাতিল করা হয়েছে কমেডিয়ানদের শো। তবে বিজেপি দাবি করছে, কৌতুকের মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, ওদের পিছনে পার্টি, সংগঠন নেই তাই টার্গেট করা সহজ।

'আমি সেই দুই ভারত থেকে এসেছি, যেখানে সব সময় আমাদের পিএমের (প্রধানমন্ত্রী) ব্যাপারে কত কী দেখানো হয়, কিন্তু হাজার প্রশ্ন করলেও পিএম কেয়ার্স ফান্ড নিয়ে কোনও খবর দেওয়া হয় না, আমি সেই দুই ভারত থেকে এসেছি... যেখানে লোকে নিজেকে গর্ব করে ভেজিটেরিয়ান বলে, কিন্তু ভেজিটেবল ফলায় যে কৃষক তাঁকেই রাস্তায় গাড়ি চাপা দেওয়া হয়... আমি সেই দুই ভারত থেকে এসেছি'।

আমেরিকার একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেই একাধিক মামলায় ফেঁসে গিয়েছেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বীর দাস। রোববারই বেঙ্গালুরু পুলিশ একটি ধর্মীয় সংগঠনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শো বাতিল করেছে আর এক কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকির। গত ছ'মাসে এই কমেডিয়ানের ১২টি শো বাতিল হয়েছে দেশের নানা রাজ্যে। অভিমানে-অবসাদে ফারুকি ঘোষণা করেছেন, আর তিনি এই পেশাতেই থাকবেন না, বলেছেন, 'ঘৃণা জিতে গেল, হেরে গেল শিল্প!'

বীর এবং ফারুকি দু'জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগটা কাছাকাছি। বীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি দেশের বদনাম করেছেন। এর জন্য সামাজিক মাধ্যমে 'দেশদ্রোহী' তকমাও জুটেছে তাঁর। আর ফারুকির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। তার শো হলে নাকি শহরে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। এর আগে ফারুকিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল এই অভিযোগে।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, বীর বা ফারুকি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়! গত কয়েক বছরে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি একাধিক কৌতুকশিল্পী। বাংলার অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, 'আসলে অতীতে অনেক সময়ই দেখবেন নাটক, সিনেমা এমনকী কার্টুনিস্টদের টার্গেট করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তাদের কাজ। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কমেডিয়ানরাও যে প্রশ্ন তুলছেন, তা এত দিন পরে শাসক ও তার অনুসারীদের নজরে পড়েছে। তাই এই আক্রমণ।'

এক সময়ে 'চণ্ডীপাঠ' নামে একটি কৌতুক শো করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়কেও। তখন রাজ্যে বাম সরকার। খরাজের কথায়, 'হুমকি দিয়েছে, এমনকী হেনস্থাও করেছে। আসলে শাসক সব সময় স্তুতি শুনতে চায়। সেটা কমেডিয়ানরা করছেন না। বরং, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নেতা ও শাসকদের খামতিটা ঠিক কোথায়। তাই নিজেদের পরিবর্তন করার বদলে শাসক গলা টিপে ধরছে শিল্পীদেরই।'

বাংলাতেও গত কয়েক বছর ধরে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির একটি ধারা তৈরি হয়েছে। তাদেরই একজন সায়ন ঘোষ বলছেন, 'বাংলাতেও যদি বিজেপি আসত, তা হলে এমন ঘটনা আকছার ঘটত। আসলে রসিকতার ছলে যে কঠিন বাস্তব প্রশ্নগুলো কমেডিয়ানরা তুলে ধরছেন, সে সব রাষ্ট্র শক্তির গায়ে লাগছে।' দেশজুড়ে এই সব দেখে স্তম্ভিত প্রবীণ অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, 'আসলে কমেডিয়ানরা সফ্‌ট টার্গেট। ওদের পিছনে পার্টি নেই, সংগঠন নেই। তাই ওরা ভাবছে এদের টার্গেট করা যায়। শেষ জীবনে এসে এই অধঃপতন, অসহিষ্ণুতা দেখে মনে হচ্ছে আরও কত কী দেখার বাকি!' কুণাল কামরাও তাই লিখেছেন, 'দেশে এমন পরিস্থিতি যে কমেডিয়ানদের জোক আগে আইনজীবীদের শোনাতে হচ্ছে, অসহিষ্ণুতা এতটাই!' সূত্র: টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ