পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভূমি নিবন্ধন আইন ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়াচ্ছে বলে ইনকিলাবের এক খবরে জানা গেছে। একজনের জমি অন্যজন বিক্রি করে দিচ্ছে, ভুয়া মালিক সাজিয়ে আম-মোক্তারনামার মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া দলিল, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিবন্ধনে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে খোদ নিবন্ধন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইত্যাদি অনিয়ম-দুর্নীতি ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এ কারণে মানুষ ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। একইসঙ্গে মামলার সংখ্যা বাড়ছে এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত আইন, বলা বাহুল্য, অন্যান্য ক্ষেত্রের আইন অপেক্ষা অধিক জটিল। এর ফলে মামলার সংখ্যা অনেক বেশি এবং মামলার নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর নয়, কখনো কখনো যুগের পর যুগ লেগে যায়। এমনও নজির রয়েছে, মামলা শুরু করেছিল দাদা। দাদার পর বাবা মামলা চালিয়ে গত হয়েছে। নাতি এখন সেই মামলা চালাচ্ছে। নাতিও জানে না, কবে মামলা শেষ হবে। ভূমিসংক্রান্ত আইন শিক্ষিত লোকেরাই অনেকে বোঝে না, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষত লোকদের বোঝার তো প্রশ্নই ওঠে না। জমি ক্রয়-বিক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এ সম্পর্কিত বিভিন্ন আইনে নানা ফাঁক-ফোঁকড় আছে। এই ফাঁক-ফোঁকড়ের আশ্রয় নিয়ে জটিলতা তৈরি করা হয়। মামলা হয়, অর্থক্ষয় হয়, সময়ক্ষেপণ হয়, হয়রানির একশেষ হতে হয় ভুক্তভোগীদের।
এই হয়রানি ও জটিলতা নিরসন, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং অনিয়ম-দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি রোধ করে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সহজ করার লক্ষ্যে সরকার ২০০৪ সালে ভূমি রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন-২০০৪ কার্যকর করে। তাৎক্ষণিকভাবে এই সংশোধিত আইন প্রশংসা লাভ করলেও পরবর্তীতে এর মধ্যে নানারকম বিচ্যুতি ও অসঙ্গতি ধরা পড়ে। আবিষ্কার হয় জালিয়াতি ও করফাঁকি। এ আইনে ভূমি হস্তান্তর সহজ করা হলেও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে জটিল করা হয়েছে বলে আইনবেত্তাদের অভিমত। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরানো নিয়মে পরিচালিত হওয়ায় হস্তান্তরযোগ্য ভূমির শেষ ২৫ বছরের ইতিহাস, এসএ পর্চা আর এস পর্চা ও নামজারির ক্ষেত্রে আগের জটিলতাই রয়ে গেছে। ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অর্ধেক নতুন নিয়মে ও অর্ধেক সনাতন নিয়মে হয় বলে আইনের পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন আইনে রেজিস্ট্রেশন দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়াস লক্ষ করা গেলেও তহশিল অফিস ও ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি বহাল তবিয়তেই আছে। এসব অফিসে নানা অজুহাতে ঘুষবাণিজ্য অব্যাহতভাবে চলছে। প্রকৃত মালিকের স্থলে ভুয়া মালিক দাঁড় করিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন করার অপকর্ম আগেও যেমন ছিল, এখনো আছে। এক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ ও নজির রয়েছে। ইনকিলাবের খবরে এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি রাজস্ব, স্ট্যাম্প বিক্রি ও বিভিন্ন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও লুটপাট বরাবরের মতো এখনো বহাল আছে।
যে কোনো আইনের লক্ষ্য থাকে জনগণের সেবা-সুবিধা সহজ করা, উদ্ভূত সংকটের সুরাহা করা এবং সর্ব প্রকার জটিলতা দূর করা। কিন্তু কোনো আইন যদি এইসব লক্ষ্য অর্জনে অপারগ হয়, যথেষ্ট বলে প্রতিপন্ন না হয়: উপরোন্তু নতুন সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করে তবে সেই আইনের সংশোধন বা পুনঃসংশোধন আবশ্যক হয়ে যায়। যেহেতু ২০০৪ সালে কার্যকর হওয়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না, একইসঙ্গে এর ফাঁক-ফোঁকড়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে, জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, সুতরাং এর বাস্তবোচিত পুনঃসংশোধন হওয়া দরকার। ইতোমধ্যে যেসব সমস্যা ও জটিলতা শনাক্ত করা গেছে, তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ভূমিসংক্রান্ত অফিসগুলোতে ঘুষ-দুর্নীতির যে আসর গড়ে উঠেছে, তা ভেঙ্গে দিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান দুর্নীতি নিরোধে ও সেবা নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। সেইসঙ্গে আইনকেও সহজ করতে হবে, যাতে সেবা প্রাপ্তি দ্রæত ও মসৃণ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমি ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করা গেলে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ, মামলা-মোকাদ্দমা এবং হয়রানি-পেরেশানি অনেক কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।