Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোবাইলফোন কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

দেশের মোবাইলফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার তথা টেলিযোগাযোগ খাতের বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা-দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনেক কথা হচ্ছে। কয়েকটি মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ও দুর্নীতির চিত্র ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কয়েকটি কোম্পানী বিটিআরসি এবং সরকারের মামলার সম্মুখীন হলেও সেবার মান বৃদ্ধি ও জনগণের সাথে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপতৎপরতা এখনো বন্ধ হয়নি। দেশীয় আইনে নিবন্ধিত হলেও আইনগত স্বচ্ছতা ও গ্রাহকদের ভোগান্তি বন্ধ করে সেবার মানবৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিটিআরসি’র ভূমিকাও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে লেখালেখির পাশাপাশি উচ্চ আদালত থেকেও নির্দেশনা এসেছে। সেসব নির্দেশনা খুব একটা গ্রাহ্য হয়েছে বলে মনে হয় না। এবার আবারো মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোকে মানসম্মত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অতীতের নানা রকম দুর্নীতি ও সেবার মানের ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার প্রশ্নে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর বিরুদ্ধে বিটিআরসি কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, এ বিষয়ে ২ মাসের মধ্যে হাইকোর্টকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত সোমবার হাইকোর্টের একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ডিভিশন বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

বিটিআরসি রেগুলেশন আইনের ৩ ও ৯ ধারার অধীনে মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর যেকোনো প্রকার দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকলেও যথাযথ নেটওয়ার্ক সার্ভিস না দেয়াসহ জনসাধারণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে বিটিআরসি’র নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলের নির্দেশনায় তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইলফোন অপারেটিংয়ের সাথে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য যোগাযোগ এবং সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের স্বার্থ জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই বিটিআরসি এসব বিষয়ে দেশের জনগণ এবং সরকারি স্বার্থরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করার কথা। কিন্তু জনগণের কাছ থেকে থ্রিজি-ফোর জি নেটওয়ার্কের নামে মোবাইল কোম্পানীগুলো বাড়তি অর্থ আদায় করে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সাধারণ টুজি নেটওয়ার্কও নিশ্চিত করতে পারছে না। অন্যদিকে, সরকারের প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিলেও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি’র যেন ঘুম ভাঙেনা। এখানেই বিটিআরসি’র কর্মকর্তা এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর দুর্নীতির যোগসাজশের প্রশ্ন উঠতে পারে। বলা বাহুল্য, সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সে ভূত তাড়ানো যায় না। বিটিআরসি যেন সেই পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। অথচ জনগণের সেবায় সব অস্বচ্ছতা দূর করে মোবাইলফোন নেটওর্য়াক কোম্পানীগুলোর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বিটিআরসি’র।

মোবাইলফোন অপারেটিং কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে করফাঁকি, অবৈধ লেনদেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, গতিশীল নেটওয়ার্কের প্রতিশ্রুতসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম-অস্বচ্ছতার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিটিআরসি’র তদন্তেও এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে। যেখানে ঢাকার মোবাইল কোর্ট অনিয়মের কারণে ওষুধেরর দোকান ও রে¯েঁÍারার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে থাকে, সেখানে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি অস্বচ্ছতার অভিযোগে বিটিআরসি কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানিকে নামমাত্র জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। ইতোমধ্যে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানীর বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকার করফাঁকির অনিয়ম ধরা পড়েছে। অন্যান্য কোম্পানীর বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের সঠিক ডাটা না দেয়া, মিনিটের হিসাব না পাওয়া, ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি না থাকাসহ নানা অভিযোগ প্রতিনিয়ত কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে উঠছে। বলা যায়, মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা ধরনের সেবা ও সুবিধার নামে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। দেশের মানুষ যতই মোবাইলফোন ও ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে, মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো যেন ততই বেপরোয়া হয়ে কোটি কোটি মানুষের পকেট কাটছে। গ্রাহকদের এসব অভিযোগ দেখার যেন কেউ নেই। দেশে কোটি কোটি মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকলেও সেবার মান ইন্টারনেটের গতি বিশ্বের অতি অনুন্নত দেশগুলোর চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। সরকার ডিজিটালাইজেশনকে অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলেও সরকারি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি তার সাথে তাল মিলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং উন্নত ও গতিশীল নেটওয়ার্ক ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির মহাসরণি থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ই-লার্নিং, ই-কর্মাস, ই-ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন, ই-গর্ভনেন্স এবং ইন্টারনেট আউটসোর্সিংয়ের সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে মোবাইলফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিসের গতি, মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোর অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম দূর করতে বিটিআরসিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে, দায়িত্বশীল ভূমিকা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন