Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় মেয়েকে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রতিবেশী লাইলি আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল কুমিল্লার দেবিদ্বারের ট্রাক্টরচালক আমির হোসেনের। লাইলির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় নিজের শিশুকন্যা ফাহিমাকে (৫) হত্যা করেন বাবা আমির হোসেন। পরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই লাইলির প্ররোচনায় নিজের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন। এমনকি ফাহিমাকে হত্যার পর স্ত্রীকেও হত্যা কিংবা ডিভোর্স দিয়ে লাইলিকে নিয়ে সংসার শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার।

মেয়েকে খুনের পর বাবা নিজেই নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করেন, বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করেন। থানায় জিডি ও মামলা দায়ের করেন। পরে শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের পর ব্যবহৃত বস্তার সূত্র ধরে বাবা আমির হোসেনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শিশুটির বাবা আমির হোসেন, রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন, মোসা. লাইলি আক্তার ও সোহেল রানা।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ৭ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। ফাহিমার বাবা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ হওয়ার পর ভিকটিমের বাবা আমির ৭ ও ৮ নভেম্বর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে। এমনকি ৮ নভেম্বর ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন ফকির-কবিরাজকেও খবর দেয়। ১৪ নভেম্বর দেবিদ্বারের এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে থেকে নিহত ভিকটিমের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঘাতক বাবা আমির বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় শিশুটির বাবাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহত ফাহিমার বাবা আমিরের সঙ্গে গ্রেফতার লাইলির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ৫ নভেম্বর লাইলি ও আমিরকে ফাহিমা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি ও আমির উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং লাইলি এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমিরকে চাপ দিতে থাকেন।

লাইলির প্ররোচনায় ৬ নভেম্বর ঘাতক আমির অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করার জন্য ধারালো ছুরি ও হত্যার পর লাশ লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করেন। পরে তারা ফাহিমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ৭ নভেম্বর বিকেলে কৌশলে চকলেট কিনে দেওয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে ফাহিমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাইলির উপস্থিতিতে আমির তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্ব প্রথম নিজেই মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আমির। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে পায়ে ও শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরে বাবা আমির নিজেই ফাহিমার গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মেয়েটির লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর ঘরে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার লাশ দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।

বস্তার সূত্রে বাবাসহ হত্যাকারীরা শনাক্তের বিষয়ে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল লাশটি। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‌্যার ও গোয়েন্দার সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যায়। সেখানে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখেন র‌্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমিরসহ বাকিদের।



 

Show all comments
  • আহসান ফারুক টাঙ্গাইল ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    এই রকম পাষণ্ড বাবা যেন কারো না হয় ।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Aliul Azim ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    কিভাবে পারল একজন বাবা?
    Total Reply(0) Reply
  • Ariyan K L ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    শিশুটি নিষ্পাপ মায়া ভরা চেহারা দেখলে যে কেউ তার প্রতি স্নেহ জাগবে। কিন্তু ওই নর পিশাচ কি করে নিজের রক্তকে মেরে ফেলতে পারল!!!তাও কি নৃশংস হত‍্যাকান্ড। এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটা ও কি কম সাজা হবে না?
    Total Reply(0) Reply
  • Chandra Shekhar Biswas ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    কতটা নিষ্ঠুর হলে এই কাজ করা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Bimol Sarkar ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    নিউজ টা পরে আমি বাকরুদ্ধ? আমারা মানুষ রা এতো এতো নিকৃষ্ট? ভাবতেই পারছিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • SB Farhad Reza ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    আহ পরকীয়া! মাসুম বাচ্চাটাকেও শেষ করে দিলি।
    Total Reply(0) Reply
  • Zunaid Twasin ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    এটা হবেই কেয়ামতের আলামত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Ahmed ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৫৬ এএম says : 0
    হায় হায়!!! মানুষের মায়া মমতা কোথায় গেল!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfujur Rahman ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩৪ এএম says : 0
    শিশুটি নিষ্পাপ মায়া ভরা চেহারা দেখলে যে কেউ তার প্রতি স্নেহ জাগবে। কিন্তু ওই নর পিশাচ কি করে নিজের রক্তকে মেরে ফেলতে পারল!!!তাও কি নৃশংস হত‍্যাকান্ড। এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটা ও কি কম সাজা হবে না?
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahman ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৫৮ এএম says : 0
    সহ্য করার মতো নয়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। এই বয়সী ছোট শিশু কতই না আদরের। মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই বাবা পাগল হয়। কিভাবে সম্ভব? ছোট শিশুটি বাঁচার জন্য বারবার ব্যর্থ শক্তি প্রয়োগ করেও ব্যর্থ। সন্তানের সর্বোচ্চ নিরাপদ আশ্রয়স্হল মা-বাবা। সেখানে কারও নিরাপত্তাহীন চরম কষ্টের। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন,আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Kawsar Siddiqui ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০০ এএম says : 0
    খুন জগন্য কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৩১ এএম says : 0
    ওদের সর্বউচ্চ সাস্তী হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ