পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের প্রিয় শহর রাজধানী ঢাকা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ থেকে প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ জনবহুল শহরের তালিকায় সাত নম্বরে স্থান পেয়েছে। প্রায় পৌনে ৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিওর নাম। এরপর যথাক্রমে ভারতের দিল্লি, চীনের সাংহাই, সাওপাওলো, মেক্সিকো ও কায়রোর নাম রয়েছে। ২ কোটি ২ লাখ ৮৩ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে ঢাকার পরের স্থানটি রয়েছে ভারতের মুম্বাই শহরের। এক কোটির অধিক জনসংখ্যাবহুল নগরীগুলো মেগাসিটি নামে খ্যাত। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মেগাসিটিতে আবাস গড়ে তোলার সাথে সাথে সব শ্রেণির মানুষের ক্রমবর্ধমান আবাসনে এসব শহরের পরিধি ও জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। শহরের পরিধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর রাস্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের পরিধি ও জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে এর অবকাঠামো, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কৃষি উৎপাদন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গার্মেন্ট রফতানিখাতের উপর ভর করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রাজধানী শহরটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দেশবাসীর জন্য এ বাস্তবতা খুবই আক্ষেপের বিষয়।
মেগাসিটিসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরগুলো সর্বদা নানা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে থাকে। শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বায়ুর মান, পানিদূষণ, গণপরিবহন ব্যবস্থা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, জননিরাপত্তা, জীবন যাপনের সাধারণ খরচ ইত্যাদি ইস্যুগুলো নিয়ে প্রতিবছর আলাদা আলাদা র্যাংকিং হয়ে থাকে। বিশ্বের বাসযোগ্যতার এসব র্যাংকিং তালিকার সর্বনিম্ন সারিতে স্থান পাচ্ছে ঢাকা। বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকাতেও ঢাকার অবস্থান শীর্ষ ৫টি শহরের মধ্যে থাকছে। আবার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায়ও উঠে এসেছে ঢাকার নাম। নিউইয়র্ক ভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান মার্সারের দেয়া গত জুনমাসের প্রতিবেদনে ঢাকাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের বসাবাস ও জীবনযাপনে ব্যয়ের দিক থেকে ঢাকা শহর নাকি ওয়াশিংটন ডিসি বা দুবাইয়ের খরচের থেকেও বেশি। অন্যসব উপদ্রব বাদ দিলেও যেখানে ঢাকা শহরে যানবাহন চলাচলের গড় গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি, সেখানে ঢাকায় বিদেশিরা পর্যটন বা বিনিয়োগ করতে কেন আসবেন, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশ, চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্য, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও ব্যয় যে কোনো শহরে পর্যটন ও বিনিয়োগ আকর্ষণের নিয়ামক শক্তি হিসেবে গণ্য। ঢাকা শহর এ ক্ষেত্রে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।
বিশ্বের শহরগুলোতে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাপের উপর ভিত্তি করে একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রকাশিত হয়ে থাকে। বাতাসে পিএম১০, পিএম২.৫, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড(এনও২), কার্বন মনোক্সাইড(সিও), সালফার ডাইঅক্সাইড(এসও২) এবং ওজোন(ও৩) গ্যাসের হারের ভিত্তিতে নির্ধারিত ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ক্ষতিকর স্তরের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করছে। একিউআই ইনডেক্সে বিশ্বের গড় দূষণ মাত্রা যেখানে ২০০-এর কাছাকাছি, সেখানে ঢাকায় এর মাত্রা ‘সিভিয়ার’ ৪৮৯। মোঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী রাজধানী ঢাকা ভারতভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হয়ে ওঠার পর থেকে তা অপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েই চলেছে। দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সংকট, নদীভাঙ্গনসহ নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ রাজধানী ঢাকায় ভিড় করছে। শহরের অবৈধ বস্তি ও অপরিকল্পিত আবাসনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নাগরিক শৃঙ্খলা ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এক ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে। পরিবেশগত বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের নদী দূষণ, ভরাট ও নিম্নভূমি দখল, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, আবাসনের বেপরোয়া তৎপরতা থামছেই না। দশকের পর দশক ধরে সমন্বিত নগর পরিকল্পনা ড্যাপ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় ঢাকার বসবাসযোগ্যতা উন্নয়নে বাতাসের মানোন্নয়ন, সুপেয় পানি, সুয়্যারেজ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকার জনসংখ্যা এখনো টোকিও-সাংহাইয়ের চেয়ে অনেক কম হলেও বসবাসযোগ্যতা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার দিক থেকে ঢাকা অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও সম্ভাবনার দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে। ঢাকার জনসংখ্যা অবকাঠামো নাগরিক সুযোগ-সুবিধাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের শীর্ষ দাবি। তাই, যেকোনো মূল্যে দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি ঢাকাকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।