শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
‘আমি এই বাংলার পাড়াগাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর’ শিরোনামে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী নবম জীবনানন্দ কবিতা মেলা। বরেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গনে কবিকুঞ্জ আয়োজিত কবিতামেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। শুক্রবার বেলা ১১টায় মেলার উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবিকুঞ্জ সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক।
জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও কবিকুঞ্জ পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করেন জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট , রাজশাহী। এরপর মেলার ভাবকবিতা , আবৃত্তি , দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশনা , স্বাগত সম্ভাষণ , শোক প্রস্তাব পাঠ ও এক মিনিট নীরবতা পালন , মোড়ক উন্মোচন ও শুভেচ্ছা বক্তৃতা প্রদান পর্ব অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । স্বাগত বক্তব্য দেন কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার , বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য কবি আসাদ মান্নান , কবি মাকিদ হায়দার প্রমুখ। এসময় কবিকুঞ্জ মুজিব সংকলন ও কবিকুঞ্জ সংকলন - ২০২১ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ . এইচ . এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন , এক সময় রাজশাহীতে ব্যাপক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা হতো। ১৯৭৫ ‘ র পরবর্তী সেই ধারা থমকে যায়। তখন সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা প্রকৃত মুসলমানদের কাজ আখ্যা দিয়ে নানা অপপ্রচার করা হয় এবং ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে হাজার বছরের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। বর্তমানে এই অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সুখের বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অসামপ্রদায়িক পরিবেশ বজায় রাখতে কবিকুঞ্জের এই কবিতা মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজন কার্যকর ভুমিকা পালন করছে। আগামীতে এমন আয়োজন আরো বৃহত্ পরিসরে হবে বলে আশা করি । মেলার উদ্বোধক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন , কবিরা কখনো চলে যায় না। কবিরা অনন্ত জীবন্ত। তাঁরা এক খন্ড জীবনের পর অনন্ত জীবনে চলে যায়। তেমনি এক খন্ড জীবন থেকে অনন্ত জীবনে চলে গেছেন কবি জীবনানন্দ। তিনি বেঁচে আছেন তাঁর অনবদ্য কবিতায়। মেলার উদ্বোধন ঘোষণায় কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন , ভালো থাক মন , ভালো থাক আপন , জীবনানন্দ কবিতা মেলার উদ্বোধন ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি এবং কবি ও গবেষক অধ্যক্ষ ড . তসিকুল ইসলাম রাজা। স্বাগত বক্তব্য দেন কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার। উদ্বোধনী অধিবেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার , বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য কবি আসাদ মান্নান , কবি মাকিদ হায়দার সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা , কবি ও লেখকবৃন্দ , রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কবিকুঞ্জের কোষাধ্যক্ষ আলমগীর মালেক। অনুষ্ঠানে কবিকুঞ্জ মুজিব সংকলন ও কবিকুঞ্জ সংকলন - ২০২১ বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। মেলার প্রথম দিন বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ১ম , ২য় ও ৩য় পর্বে আবৃত্তি , কবি ও কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশিদ ও কথাসাহিত্যিক মামুন হুসাইনের বক্তৃতা এবং কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ। কবিতাপাঠের মাধ্যমেই শেষ হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান ।
কবিতা মেলার দ্বিতীয় দিন ১৩ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কবিতা ভ্রমণ , বিকাল ৪টায় কবিতাপাঠ , কথাসাহিত্যিক জাকির তালকুদারের বক্তৃতা , আমন্ত্রিত বাচিকশিল্পীদের কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি অুনষ্ঠিত হয়। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কবিকুঞ্জ পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ বছর কবিকুঞ্জ পদক পেলেন কবি আমিনুল ইসলাম। রাজশাহীর ‘ কবিকুঞ্জ ’ প্রদত্ত উঁচুমানের সাহিত্য পুরস্কার ‘ কবিকুঞ্জ পদক ২০২১ ’- এ ভূষিত হয়েছেন নব্বই দশকের শক্তিমান কবি আমিনুল ইসলাম। তাকে কবিকুঞ্জ এর ভাষায় ‘ সমকালীন বাংলা কবিতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ’ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আমিনুল ইসলাম কাব্যবৈচিত্র্য ও নিজস্ব কাব্যভাষা অর্জনের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন। তার কবিতা নিয়ে কবি - গবেষকগণ প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন ।
কবিতামেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর সনত্কুমার সাহা। কবিকুঞ্জ সভাপতি অধ্যাপক কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক এঁর সভাপতিত্বে কবিকুঞ্জ পদক ২০২১ ঘোষণা করেন কবিকুঞ্জ সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। এ বছর কবিকুঞ্জ পদক - ২০২১ পেয়েছেন কবি আমিনুল ইসলাম। পদক প্রাপ্ত কবির জীবনী পাঠ করেন শামীমা ডেইজী লিপি। সম্মাননা পত্র পাঠ করেন কবিকুঞ্জ যুগ্ম সম্পাদক শাহনাওয়াজ প্রামানিক সুমন। কবিতামেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর সনত্কুমার সাহা ‘ কবিকুঞ্জ পদক - ২০২১ ’ কবি আমিনুল ইসলামের হাতে তুলে দেন। কবি আমিনুল ইসলাম কবিকুঞ্জ তথা রাজশাহীবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন — ‘ এই অর্জন আমার একার না , সকল কবিতাযোদ্ধার। আমার আরো দায়িত্ব বেড়ে গেলো। তিনি সবার দোয়া চেয়ে বলেন — আমি যেন আরো ভালো লিখতে পারি দোয়া করবে , পাশে থাকবেন ।
এযাবত প্রকাশিত তার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২০টি , প্রবন্ধগ্রন্থ ২টি এবং ছড়ার বই ৩টি। তিনি ইতোপূর্বে বহু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন যার মধ্যে ‘ বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার ২০১০ ’, ‘ নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩ ’, ‘ এবং মানুষ পুরস্কার ২০১৭ ’ এবং ‘ দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ ’ উল্লেখযোগ্য । ‘ আমি এই বাংলার পাড়াগাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর ’ শিরোনামে কবিকুঞ্জ কোষাধ্যক্ষ আলমগীর মালেক এঁর সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন , বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কবি ফরিদ আহমদ দুলাল , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর কবি অনীক মাহমুদ , কবি ও সম্পাদক মাহমুদ কামাল , লেখক জাকির তালুকদার , কবি আসাদ মান্নান , কবি মাকিদ হায়দারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা , কবি ও লেখকবৃন্দ , রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।