যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
করলা মৌসুমী সবজী হলেও এখন সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। মহান রব কত সুন্দর আর সুনিপুন করে এই পৃথিবীকে তার বান্দাদের জন্য সাজিয়েছেন। এখানে টক, মিষ্টি, ঝাল, তিতা আরো কত স্বাদের উপকরণ দিয়েছেন। প্রত্যেকটির মধ্যে আলাদা আলাদা গুন উপকারিতা রেখেছেন। কী এক অপরূপ সৌন্দর্য। করলা একটি তিক্ত সবজী হলেও অনেক উপকারিতায় তার জুড়ী নেই। আজ আমরা করলার গুনাগুন জানার চেষ্টা করব।
পুষ্টি মান: ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে, ক্যালরি ৩৪, লিপিড ০.০২ গ্রাম, সোডিয়াম ১৩ মিঃগ্রাম, পটাশিয়াম ৬০২ মিঃগ্রাম, শর্করা ৭ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৯০ গ্রাম, প্রোটিন ৩.৬০ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৫.৬ মিঃগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪২ মিঃগ্রাম, লোহা ১ মিঃগ্রাম, পাইরিডক্সিন ০.৮০ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯৪ মিঃগ্রাম।
উপকারিতা:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় করলা রাখলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ উন্নতি ঘটবে। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করলা খেলে করলায় থাকা বিভিন্ন উপাদানা শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে ছোট বড় অনেক রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
২. ওজন কমায়: করলার একটি অল্প ক্যালোরিযুক্ত খাবার। করলার সুষম উপাদান ওজন কমানোয় যাদুকরী ভূমিকা পালন করে।
৩. লিভারের কার্জ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গবেষনায় জানা যায়, করলা খাওয়া মাত্র শরীরে বিশেষ কিছু এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে যার কারণে লিভারের কার্জর্ ক্ষমতা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, করলায় উপস্থিত উপাদান লিভার ফেলিওর হওয়ার সম্ভাবনাকেও কমি দেয়।
৪. হজম শক্তি বাড়ায় : করলা খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। এতে করে খাবার হজম ভালো হয় এবং পেটও পরিষ্কার থাকে। সেই সাথে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়।
৫. ত্বকের সৌন্দর্যে: করলা থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরের বলিরেখা দূর করে দেয়। শরীরের ত্বক টানটান হয়ে উঠে। ত্বককে করে লাবণ্যময় সুন্দর।
৬. ডায়াবেটিস রোগে: করলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যাদুর মত কাজ করে। করলার জুস সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা করলা অথবা করলার রস খেলে ডায়াবেটিসে ভাল উপকার মিলে।
৭. ফুসফুস ভাল রাখতে: করলার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকে। এই রস অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার করে। অর্থ্যাৎ শ্বাস জনিত সকল সমস্যা দূর করতে করলা বেশ কার্যকর।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধে: করলায় উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে পারে সেদিকে নজর রাখে। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং ক্যান্সারের নতুন কোষ জন্মে বাধা প্রদান করে।
৯. উচ্চ রক্তচাপে: করলা অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসাতে বেশ ভাল কাজ করে।
১০. গায়ের বল বাড়াতে: করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরের স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
১১. রক্ত পরিস্কারক: সুস্থ ভাবে বাঁচতে হলে চাই পরিশুদ্ধ রক্ত। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে রক্তের পরিশুদ্ধতার দিকে খেয়াল দেয়া জরুরী। প্রতিদিন করলা খাওয়ার গড়ে তুলুন। তাহলেই উপকার মিলবে। কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত ব্লাড পিউরিফাইং এজেন্ট রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. পেটের রোগ সারাতে: করলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি নানাবিধ স্টমাক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য আঁশ শরীরে প্রবেশ করা মাত্র গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ বাড়িয়ে। ফলে নানাবিধ পেটের রোগ কমতে শুরু করে।
১৩. দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে: কাঁচা করলা অথবা করলার রস খাওয়া শরীরে করলে শরীরে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিনের ঘাটতি পূরণ করে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আজকাল মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, কর্মব্যস্ততা ইত্যাদির কারণে আমাদের চোখের উপর অনেক চাপ পড়ছে। তাই চোখকে বাঁচাতে করলা খাওয়া প্রয়োজন।
১৪. পাইলস সারাতে: প্রতিদিন সকালে ১০০ গ্রাম করলা খান। দেখবেন এক মাসেই পাইলসের যন্ত্রণা একেবারে কমে যাবে। কাঁচা করলা খাওয়ার পাশাপাশি করলা গাছের মূল বেটে পেস্ট তৈরী করে সেই পেস্ট পাইলসের উপর লাগাতে পারলে আরও তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।
১৫. গুঁড়া কৃমির উপদ্রবে: গুঁড়া কৃমির উপদ্রবে প্রতিদিন সকাল বিকাল করলা/উচ্ছে পাতার রস ১-২ চামচ করে খেলে কৃমির উপদ্রব শেষ হয়ে যায়।
১৬. অরুচি দূর করতে: কোন কারণ ছাড়াই মুখে অরুচি। এমতাবস্থায় করলা পাতার রস সকাল বিকাল ১-২ চামচ করে খেলে অরুচি দূর হয়, ক্ষুধা বাড়ায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
১৭. এলার্জি সারাতে: এলার্জি সারাতে প্রতিদিন সকাল বিকাল ২ চামচ করে করলা পাতার রস খেলে এলার্জি ভাল হয়।
১৮. পুরনো ঘা: পুরনো ঘা শুকাচ্ছে না। এমতাবস্থায় করলা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে। করলার লতা পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে ঘা ধুয়ে দিতে হবে। তাহলে অল্প দিনেই ঘা শুকিয়ে যাবে।
১৯. বসন্ত সারাতে: বসন্ত রোগে .০৫-১৩ গ্রাম হলুদের গুঁড়ার সাথে ১ চা চামচ করলা পাতার রস মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে করে গুটি তাড়াতাড়ি বের হবে এবং শুকিয়ে যাবে।
২০. বাত সারাতে: ৩ চামচ উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে তাতে পানি মিশিয়ে সকাল বিকাল খেলে বাত ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়।
মুন্সি আব্দুল কাদির
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।