Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করলার উপকারিতা

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

করলা এমন এক সবজি যার কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। যোড়শ শতক শুরু হওয়ার আগে এ তথ্য জানিয়ে গিয়েছিলেন চীনের বিখ্যাত চিকিসৎক লি শেনঝেন। জানিয়ে গিয়েছিলেন করলা, শরীর থেকে গরম বের করে দেয়। শরীরকে ঠান্ডা রাখে। করলা অবসাদ-শ্রান্তি-ক্লান্তি দূর করে। দেহে প্রাণোচ্ছলতা তৈরি করে দেহের মধ্যকার বিষবর্জ্যকে সাফসুতরো করে›।

গারভার ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল রিসার্চের ডায়াবেটিস এবং স্থূলত্বরোধ বিভাগের অধিকর্তা ডা. ডেভিড জেমস জানিয়েছেন, ‹আণবিক স্থরে যোগ্যতা যাচাই করে এটি এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা মহৌষধ। এখন দেখতে হবে করলা কোষের মধ্যে কিভাবে কাজ করে।› ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে ইনসুলিন নির্ভর নন এমন ১০০ জন ডায়াবেটিকের উপর করলা খাওয়ার প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, করলায় সুগার কমে। দেবী অহল্যা ইউনির্ভাসিটিতে ২০০৮ সালে করলার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঔষধ অর্ধেক মাত্রায় খাইয়ে দেখা গিয়েছিল, ঔষুধের মতো করলাও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হাফ ডোজ ঔষুধের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে ফুল ডোজ করে দিচ্ছে। এ পরীক্ষা করা হয়েছিল ৫২ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের উপর। মেটফরমিন বা গ্লিবেনক্ল্যামাইড খাওয়ানোর পাশাপাশি খাওয়ানো হয়েছিল করলার নির্যাস। কাউকে কাউকে খাওয়ানো হয়েছিল মেটফরমিন এবং গ্লিবেনক্ল্যামাইড, দুইই সঙ্গে করলার নির্যাস। আয়ুর্বেদে ডায়াবেটিকদের নিয়মিত করলার রস খেতে বলা থাকলেও এতদিন আবছা একটি ধারণা থেকে করলা খেতে বলা হতো ডায়াবেটিকদের। এবার সে অসচ্ছতা দূর হলো। টাইপ টু ডায়াবেটিকে ভুগছেন যাঁরা, তাদের জন্যতো বটে, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিকদের জন্য ও উপকারী করলা ও করলার রস।

ফিলিপিনসের স্বাস্থ্য দফতর ডায়াবেটিকদের করলা খাওয়ার সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে, করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ত্রিধারায়। করলায় থাকা ইনসুলিন সম পলিপেপটাইড পি এবং অ্যালকালয়েড তথা ক্ষারীয় উপাদান ব্লাড সুগার কমায়। করলার থাকে অলিয়ানোলিক এসিড গ্লাইকোসাইড। এটি টাইপ টু ডায়াবেটিকদের মধ্যে অস্ত্র তথা নাড়িভুঁড়ি থেকে সুগার শোষণে বাধা দিয়ে গ্লকোজ (সুগার ) সংবহনী তৎপরতা এবং ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। করলা অগ্নাশয়ের বিটা সেলের সংখ্যাধিক্য ঘটিয়ে ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় । করলায় থাকে চারনাতিন নামে বিভিন্ন স্টেরয়েডের সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া একটি যৌগ বা উপাদান যেটি ব্লাড সুগার কমানোর ঔষুধ টুলবুটামাইডের চেয়ে বেশি কার্যকর ও শক্তিধর। ফিলিপিনসে এখন সবাই জানে, করলার রস ও করলা খেলে সুগার নিয়ত্রণে থাকে দারুণভাবে।

করলা এইচ আই ভি আক্রান্তদের জন্যও উপকারী। এটি এইডসের মরণ ভাইরাসকে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে দেয় না। ঔষুধের পাশাপাশি তাই করলা ও করলার রস খেতে বলা হয়। করলা পাচক রসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে হজমশক্তি বাড়ায়। পিত্ত রস বাড়িয়ে দিয়ে চর্বির বিপাকক্রিয়া তন্দুরস্ত করে।

গ্যাসটিকের সমস্যায়ও করলা উপকারী। বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের শুশ্রূষায় করলা উপকারী। করলা অন্ত্র তথা নাড়িভুঁড়ির শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। আয়ুর্বেদে আছে করলা উচ্ছাপাতার রস খেলে মদ্যাসক্তি কমে, অর্শে উপকার পাওয়া যায়, কলেরার সময়ও উপকার মিলে। ঋতুস্রাবের কষ্ট লাঘব করে করলা। করলায় প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, করলা হাইপারটেনশন তথা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মাংসের কিমার সঙ্গে করলার সেদ্ধ মিশিয়ে নিয়ে সস-কেচআপ দিয়েও খান অনেকে। থাইল্যান্ডে এভাবে খাওয়া হয়। করলা রুচি বাড়ায়। খিদে বাড়ায়। ভোজ খাওয়ার আগে করলা খান। শরীর গরম হবে না।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করলার উপকারিতা

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ