Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে কবি ইকবালকে সম্মান দেখিয়ে বিপাকে উর্দু শিক্ষকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১১ পিএম

ভারতের একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ তাদের পোস্টারে বিখ্যাত উর্দু কবি মুহাম্মদ ইকবালের ছবি ব্যবহার করার পর দক্ষিণপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপে সেই ছবি প্রত্যাহার করে নিজেদের ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়েছে।

কবি মুহাম্মদ ইকবাল, আল্লামা ইকবাল হিসেবেই বেশি পরিচিত। মুহাম্মদ ইকবালের বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা’-র রচয়িতা। মৃত্যুর পরে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় কবিরও সম্মান পেয়েছিলেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) উর্দু বিভাগ প্রতি বছর ৯ই নভেম্বর কবি ইকবালের জন্মদিন 'উর্দু দিবস' হিসেবে পালন করে থাকে, এবারেও ওই দিনটিতে তারা একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিল।

সেই ওয়েবিনারের পোস্টারে কবি ইকবালের ছবি কেন আছে এবং কেন বিএইচইউ-এর প্রতিষ্ঠাতা পন্ডিত মদনমোহন মালব্যর ছবি নেই, তা নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ জানায় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) - যারা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের ছাত্র শাখা। এই ইস্যুতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাধিক বিক্ষোভ-সমাবেশও আয়োজন করে। একজন পাকিস্তানি নায়ককে কেন বিএইচইউ সম্মান দেখাবে, সেই প্রশ্ন তুলে কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেয়া হয়।

এবিভিপি-র সমর্থক একজন রিসার্চ স্কলার পতঞ্জলি পান্ডে দ্য হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকাকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানের ই-পোস্টার বা নোটিশে মহামনা মালব্যজির ছবি থাকবেই - এমন কী উর্দু দিবসও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘সেই জায়গায় মালব্যজির ছবি সরিয়ে সেখানে আল্লামা ইকবালের ছবি বসিয়ে উর্দু বিভাগ ঘোরতর অন্যায় করেছে বলে আমরা মনে করি’, বলেন বিএইচইউ-এর ওই গবেষক।

প্রসঙ্গত, ১৯০৪ সালে লেখা ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা’ কবি ও গীতিকার হিসেবে আল্লামা ইকবালকে তুমুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল - আজকের ভারতেও গানটি ভীষণভাবে সমাদৃত। কবি ইকবাল অবশ্য পরে দ্বিজাতি তত্ত্বের একজন প্রবল সমর্থক হয়ে ওঠেন, ভারত ভাগ করে আলাদা পাকিস্তান তৈরির পক্ষেও জোরালো দাবী জানাতে শুরু করেন। সাতচল্লিশে পাকিস্তান সৃষ্টির বছরদশেক আগেই লাহোরে তার মৃত্যু হয়েছিল - পরে তিনি স্বাধীন পাকিস্তানের জাতীয় কবিরও সম্মান পেয়েছিলেন।

এহেন আল্লামা ইকবালকে সম্মান জানানোর কারণে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে উর্দু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আফতাব আহমেদ শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, অধ্যাপক আহমেদকে ‘সতর্ক করে’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিও দিয়েছে এবং উর্দু বিভাগের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্তও।

ইতোমধ্যে আল্লামা ইকবালের ছবিসমেত ওয়েবিনারের যে ই-পোস্টারটি ফেসবুকে ছিল, তা সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর বিশ্বদ্যিালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন বিজয় বাহাদুর সিং তার অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে মদনমোহন মালব্যর ছবি দিয়ে ওই ওয়েবিনারের নতুন একটি ই-পোস্টার টুইট করেন। সেই সঙ্গেই তিনি লেখেন, ‘এর আগের যে পোস্টারটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে তাতে অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী!’

বিএইচইউ-র জনসংযোগ কর্মকর্তা রাজেশ সিং পরে জানিয়েছেন, উর্দুর বিভাগীয় প্রধানের কাছে কৈফিয়ত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন। কীভাবে মদনমোহন মালব্যর ছবি না-দিয়ে তারা কবি ইকবালের ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করেছিল, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিএইচইউ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে - যার নেতৃত্ব দেবেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান মায়াশঙ্কর পান্ডে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ