পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুবশক্তি সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজ পরিবর্তনের জন্য চাই গতি, শক্তি ও প্রগতি। যারা পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে চলে এবং কূপমণ্ডূকতার আশ্রয় নেয়, তাদের দ্বারা সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই কালে কালে যুবকরাই উড়িয়েছে পরিবর্তনের বৈজয়ন্তী। পৃথিবীতে যুগে যুগে যুবকরাই এগিয়ে এসেছে এবং বিভিন্ন বিপ্লব ঘটিয়েছে। যুবক দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ সকল অধিকার আদায়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
যুব সমাজের প্রচেষ্টা বদলে দিয়েছে বিশ্বকে। যুবশক্তি অপার সম্ভাবনাময়। যুবশক্তির সম্পৃক্ততা ছাড়া বিশ্বের কোথাও কখনো কোনো সংগ্রাম, সংস্কার বা বিপ্লব সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে ভেসে উঠবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এদেশের যুব সমাজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সিপাহি বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, নীলকরদের বিরদ্ধে বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এ দেশের যুবসমাজই এগিয়ে এসেছে।
যুবশক্তির এই গুরুত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চারটি জিনিসের প্রয়োজন। তা হচ্ছে, নেতৃত্ব, ম্যানিফেস্টো বা আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন। এই প্রয়োজনীয়তা থেকে তিনি যুব শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনের মাধ্যমে দেশের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব থেকে প্রিয় রাজনৈতিক শিষ্য। বাংলাদেশের পললভূমিতে ‘ম্যাকিয়াভেলিয়ান প্রিন্স’ শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তিনি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অস্থির যুবসমাজকে সৃজনশীল খাতে প্রবাহিত করতে।
শেখ ফজলুল হক মনি বিশ্বাস করতেন, নতুন দেশ ও সমাজের চিন্তা করলে পরিকল্পিত কার্যপন্থার বিকল্প নেই। দক্ষ রাজনীতিবিদের একটু ভুলের কারণে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে নিক্ষিপ্ত হতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব ও বৈশ্বিক রাজনীতির ওপর তার প্রগাঢ় জ্ঞান ছিল। তার লেখা প্রবন্ধ ‘বিপ্লবের পরে প্রতিবিপ্লব আসবে’ পড়লেই বোঝা যায় বিশ্ব রাজনীতির সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট।
স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত্ব ভাষণে ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন: ‘ওয়াদা কর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবি। ...আমি যেখানে আছি, সেখানে কেন তোরা উহা বন্ধ করিতে পারবি না। ... চোখের আড়াল হলেই তোরা লটর-পটর করিস। কিন্তু তোরা লটর-পটর না করিলে আর কেহ লটর পটর করিতে পারিবে না। তাই আবার বলিতেছি, আমার বাণী যেন নীরবে নীভৃতে না কাঁদে।’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমিক যুবসমাজ হতে হলে, যোগ্যতা, দক্ষতার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা, দায়িত্ব-কর্তব্যবোধসহ দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।
সময়ের হাত ধরে আজ যুবলীগের দায়িত্বে শেখ ফজলুল হক মনি’র বড় ছেলে। সর্বশেষ যুবলীগের সপ্তম কাউন্সিল ২৩ নভেম্বর (২০১৯) ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল। পিতার আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশপ্রেম ও সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় মানবিক যুবলীগের সুখ্যাতি অর্জনে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ কাজ করছেন। সকল বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মনির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। বলা চলে, শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে এবার যুবলীগের নতুন যাত্রা শুরু, যে যুবলীগ এখন ‘মানবিক যুবলীগ’। এই যাত্রায় পরশের পাশে তারুণ্যনির্ভর ত্যাগীরা যুবলীগকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেল।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই প্রথম অভিব্যক্তিতে সকলের মন জয় করে নেন শেখ ফজলে শামস্ পরশ। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন। আমার বাবা মনি বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তার কন্যার দেশের প্রতি হৃদয়ের ভালবাসা থেকে আমি সাহস পাই। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে পালন করব।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নতুন এ নেতৃত্ব যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুবলীগ কর্মীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নানামুখি কার্যক্রম শুরু করে। করোনা মহামারিতে আতঙ্কিত পুরো দেশ যখন ঘর বন্দী, ঠিক তখন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম খান নিখিল সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, সর্বস্ব নিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা মেনে তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল সাংগঠনিক পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়ান। কোনো কোনো জায়গায় রান্না করা খাবারও পথচারী ও উদ্বাস্তুদের মাঝে বিতরণ করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফনে যখন পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত পিছুপা হয়েছে, তখন যুবলীগের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। দায়িত্ব নিয়েছে মৃতদেহের গোসল থেকে শুরু করে জানাজা এবং দাফনের। ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা দিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া সমগ্র দেশে যুবলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, অক্সিজেন সেবা ও অসহায়দের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা নিয়ে এ দু’জনকে যুবলীগের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেটা পূরণে তারা শতভাগ সফল হবেন বলে আমার বিশ্বাস। যার স্বাক্ষর তারা এরই মধ্যে রেখে চলেছেন। এ মুহূর্তে যেকোন সমীকরণে পরশ-নিখিল নেতৃত্বে যুবলীগ তার চিরায়ত জনকল্যাণ মূলক রাজনৈতিক ধারায় রয়েছে, এটা দৃঢ়ভাবে বলা যায়। তুলে ধরতে পেরেছে সংগঠনের ঐতিহ্য ও গৌরব।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ শুরু থেকেই সকল বাধা চূর্ণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের জন্য যুবসমাজকে সংগঠিত করার দায়িত্ব পালনে যত্নবান ছিল। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে এই শক্তিমান যুবশক্তিকে ব্যবহার করা ও সঠিক পথ নির্দেশ দেওয়া একটি কঠিন কাজ। যুবলীগ এই কাজটি অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পাদনের চেষ্টা করছে। এর সুফলও লাভ করছে সর্বস্তরের মানুষ। আমরা আশা করি, তারুণ্যের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা-চেতনা এগিয়ে নেবে সোনার বাংলাকে। গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি যুব সমাজের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ঐতিহ্যবাহী যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
লেখক: উপ তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।