নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে অনেক বড় এক আক্ষেপের নাম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশের উড়ার কথা ছিল। স্বপ্নের ডানা মেলে দৃষ্টিসীমানার বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২৪০ বলের ক্রিকেটটা বাংলাদেশের কাছে এখনো অজানা, দুর্বোধ্য, রহস্যময়, জটিল!
ব্যর্থ একটা বিশ্বকাপ কাটানোর পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের দূরাবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সর্বত্রই চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে এখনো পরাশক্তি হয়ে উঠতে পারেনি, কেন এ ফরম্যাটে বাংলাদেশের হিসাব মেলে না?- পাঠকদের দৃষ্টিতে সেই সব উত্তর খুঁজতেই আজকের এই লেখা।
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর সবারই খুব খারাপ লাগছে এবং দীর্ঘ ১৪ বছরের সেই না পাওয়ার কষ্ট, বেদনা, যন্ত্রণা রীতিমত ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভক্তরা। হতাশা, দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকেই হচ্ছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
হতাশাজনক পারফরম্যান্সে সবারই নজর কেড়েছে বাংলাদেশ দল। মাঠে এবং মাঠের বাইরের বিভিন্ন কান্ডে সমালোচনাও কম হয়নি। এমন ভরাডুবির পর ক্রিকেটের কতটা উন্নতি হয়েছে, খেলোয়াড়দের মানসিকতা, অ্যাপ্রোচ, বোর্ডের দায়বদ্ধতা, কোচদের দায়িত্ব এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলাধুলার সংবাদগুলোর কমেন্ট বক্সে ক্ষোভের প্রকাশটাই বেশি দেখা গেছে। কখনো কখনো তা শালীনতা ও ভব্যতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জাতির আশা আকাঙ্খার আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশের ঐক্য ও সম্প্রীতিরও প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো ক্রিকেটের এই দূরাবস্থা নিয়ে নানা মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়ায় ভাসছে নেট দুনিয়া।
বাংলাদেশের পারফরমেন্সে চরম হতাশ হয়েছেন খেলা দেখতে আসা আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের ম্যাচ উপভোগ করতে আসা আশিকুল আকবর নামে এক যুবক একটি গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ‘ভীষণ লজ্জা লাগছে। এখানে বসে থাকতে লজ্জা লাগছে। চিন্তা করেনতো যারা এতো টাকা দিয়ে মাঠে বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছে তাদের কি অবস্থা! তার মতো বেশির ভাগই লজ্জা আর অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার ধুন্ধুমার লড়াই। অথচ এ ফরম্যাটে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় গড়পড়তা স্কোর নিয়ে। ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দ্যে শট খেলতে পারেন না। বল কখন উঠবে, কখন নামবে সেই চিন্তাতেই শেষ! বল সহজে ব্যাটে আসবে, গতি থাকবে, বাউন্স হবে এমন উইকেট টি-টোয়েন্টির আদর্শ।
সমালোচকরা বলেন, এবারের বিশ্বকাপে প্রমাণ হয়েছে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের কার্যকর ও লাগসই কৌশল ভাল জানা নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। জিততে কী কী কাজ করা প্রয়োজন? সেই করনীয় কাজগুলো ঠিকমত আত্মস্থ নেই ক্রিকেটারদের।
ক্রিকেটভক্তরা মনে করেন, ওপেনিং ব্যাটিং, বোলিং এবং মিডল ও লেট অর্ডারের কিছু পজিশনে নতুন মুখের সন্ধান ছাড়া উন্নতি সম্ভব না- এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সে কঠিন সত্যের দেখা মিলেছে। সত্য উপলব্ধির সময় চলে এসেছে। সবার আগে দরকার বোর্ড নীতি নির্ধারকদের সত্যিকার উপলব্ধি এবং ভুল শুধরে আগামীতে ভাল করার পথ খুঁজে বের করা। দল সাজানো ও কম্বিনেশন ঠিক করায়ও আছে ভুলভ্রান্তি। কেন এ ব্যর্থতা? কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে? এগুলো খুঁজে বের করা দরকার।
সে যাইহোক, এসব ব্যর্থতার দায় কী শুধুই ক্রিকেটারদের? না কোচিং স্টাফ ও টিম ম্যানেজমেন্টেরও আছে। সে সব খুঁটিয়ে বের করা খুব জরুরি। এখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে যাদের জাতীয় দল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যে তাদের কাজটা দক্ষতার সাথে পালন করতে পারছেন না! হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, বোলিং কোচ ওটিস গিবসন, ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্সদের কোচিংয়ে যে সত্যিকার ও কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উন্নতির জন্য বর্তমান কোচিং স্টাফ যে যথেষ্ট নয়- তাও জানা-বোঝা হয়ে গেছে।
এদিকে বাজে পারফরমেন্সের মধ্যে ‘আয়না’ মন্তব্য করে ফেসবুকে ব্যাপক ট্রলের শিকার হন মুশফিকুর রহিম।চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারার পর মুশফিক বলেন, ‘ক্রিকেটারদের সমালোচনা যারা করেন, তাদের উচিত আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেয়া।’ এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে কেউ তাকে ‘আয়নাবাজ’ আবার কেউ ‘আয়নাপুরুষ’ নামে ডাকা শুরু করে।
সামাজিক মাধ্যমে বাজে পারফরমেন্সের কারণে ট্রলের শীর্ষে স্থান করে নেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস করায় তোপের মুখে পড়েন লিটন।শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে দুটো ক্যাচ ধরতে পারেননি তিনি। দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা ও ট্রলের শিকার হন লিটন।
বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর তাদের বেশ কিছু পরামর্শ দেন পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা। তাদের এই পরামর্শ দ্রুতই আলোচনার শীর্ষে পরিণত হয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, মিসবাহ-উল হক ও ওয়াহাব রিয়াজরা।
চার জনেরই অভিমত বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্লো উইকেটে না খেলে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করতে হবে। বোর্ডেরও দায়বদ্ধতা আছে এমনটাই মনে করেন তারা। কোচ পরিবর্তন করলেই ফলাফলে পরিবর্তন আসবে না এমনটাই ইঙ্গিত করেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সিস্টেমের উন্নতি না করতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি হবে না এমনটাই ইঙ্গিত দেন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। যদিও সেসব পরামর্শ পছন্দ হয়নি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীসের। তবে পাকিস্তানি তারকা ক্রিকেটার এসব পরামর্শকে অনেকেই সমর্থন করেন।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক বোলিং কোচ ওয়াসিম আকরাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালোবাসে ক্রিকেট। কিন্তু দেশটির ক্রিকেট বোর্ড মনে করে তারা সবচেয়ে ভালো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। আপনারা ক্রিকেট বোর্ড চালাতে পারেন, কিন্তু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নন। কোচ নিয়োগ দিলেই তো সবকিছু হয় না।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই দূরাবস্থার পেছনে অনেকেই বিসিবি সভাপতির ব্যর্থতা দায় করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন সৌম্য-লিটনদের বাজে পারফরমেন্স নিয়েও। বিশ্বকাপ থেকে দেশকে অবিশ্বাস্য কিছু এনে দেওয়া তো দূরের কথা, নিজেদের সামর্থ্যটুকুও দেখাতে পারেননি সৌম্য সরকার-লিটন দাসরা। চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ার পরও মুশফিকরা উল্টো দেশের ক্রিকেটভক্তদের ‘আয়নায় মুখ’ দেখতে বলেছেন।
ফেসবুকে সমালোচনা করে অনেকেই লিখেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আবেগ নিয়া খেলার অধিকার কারো নাই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট উন্নতি করতে হলে প্রথম কাজ করতে হবে রাজনৈতিক মুক্ত বোর্ড পরিচালনা তার পর দেখবেন বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেক ভালো খেলছে। বিসিবি ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে বর্তমান যারা আছে অনেকেই অযোগ্য লোক। পুরো কোচিং স্টাফ চেইঞ্জ করে। সালাউদ্দিনকে হেড কোচ করে। মুহাম্মদ রফিককে স্পিন কোচ করে কোচিং স্টাফ সাজানো হক। মাশরাফিকে ভালো কোনো পদে বসিয়ে দেওয়া হোক যেখান থেকে মাশরাফি ভালো সিদ্ধান্ত গুলো নিতে পারবে। মাত্র এক বছরের ভিতরে আমরা বিশ্বের ২য় অথবা তৃতীয় দল হয়ে উঠবো ইনশাআল্লাহ।
আশরাফুল ইসলামের পরামর্শ, ‘‘বাংলাদেশের ক্রিকেট তখনি ভাল হবে বিসিবি সভাপতি ম্যাশ ভাই, পরিচালক দল নির্বাচক সবাই কে পরিবর্তন করতে হবে যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ম্যাশ ভাইকে সহযোগিতা করবে রফিক, আকরাম বাশার পাইলট, আশরাফুল আফতাব, বর্তমান কোচিং স্টাফ পুরাটাই চেনজ করতে হবে, সালাউদ্দিনকে ব্যাটিং কোচ হিসেবে রেখে বাকি সব কোচ উন্নত মানের বাহির থেকে আনতে হবে, যাদের মান থাকবে প্রথম সারির।
হতাশা আর বেদনা থেকে রাজেদুল ইসলাম রাজু লিখেছেন, ‘‘গত ৬ টা বছর বিনিয়োগ করে কি লাভ হলো, তারমানে বিসিবি প্লেয়ারদের স্কিল নিয়ে কাজ করেনা, যারা বিকেএসপিতে বা ঘরোয়াতে একটু বেশি ভালো করে, শুধুমাত্র তাদের সেই মেধাকে কাজে লাগায় জাতীয় দলে সুযোগ দিয়ে, মেধা শেষ হলেই বাদ, অথচ ভূরি ভূরি ক্রিকেটার আছেন বিশ্বে, যারা মেধা নিয়ে আসেনি এত সময় আর পরিশ্রম এবং সঠিক গাইডলাইন তাদেরকে কিংবদন্তি করেছে।বিসিবি প্যানেলকেই বর্জন করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।