Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৪ মাসে সম্পূর্ণ কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করলেন তরুণী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন উনিশ-বছর বয়সী লাজুক ফাতিমা সাহাবা। শুধু আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবই না, তার এই সাফল্যের কথা শুনে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপরিচিত জনেরাও। ফাতিমা থাকেন দক্ষিণ ভারতের কেরালার কান্নুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা এবং ক্যালিগ্রাফির প্রতি ছিল তার বিশেষ ঝোঁক। প্রায়ই তিনি ছবি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। তারাও তাকে উৎসাহ দিতেন।

ক্লাস নাইনে পড়ার সময় তিনি লিপিবিদ্যা বা ক্যালিগ্রাফির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে থাকেন। এ বিশেষ বিদ্যার প্রতি ভালবাসার টানে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ক্যালিগ্রাফিতে হাত পাকাতেন। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একটু রেস্ট নিয়েই আঁকার কাজ শুরু করতেন বলে জানান তিনি।

তিনি জানালেন, ছোটবেলায় তিনি বন্ধুদের হাতে মেহেদি এঁকে দিতেন। বন্ধুরা তার নকশা খুব পছন্দ করতো। এর কারণ হলো আমি যেসব মেহেদি ডিজাইন করতাম সেগুলো হতো একেবারেই ভিন্ন ধরনের। এভাবেই আমি ক্যালিগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। আরবিতে এত ধরনের সুন্দর নকশা রয়েছে যা একজন শিল্পীর জন্য খুবই আকর্ষণীয়।

ফাতিমা এখন তার শিক্ষা আর ক্যালিগ্রাফিতেই বেশি সময় ব্যয় করেন। পাশাপাশি বন্ধুদেরও সময় দেন তিনি। তাদের সাথে নানা রকম মজা করেন। তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব ভাল লাগে। তাদের সাথে কথা বলে খুব আনন্দ পাই’। ‘এমনিতে আমি একটু লাজুক ধরনের। কিন্তু এখন আমাকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা হয় তা আমার ভালই লাগে। মনে হয় আমার পরিশ্রমের মূল্যটা হাতে হাতে পাচ্ছি। আমার সম্পর্কে মানুষ ভাল ভাল কথা বললে কার ভাল না লাগে বলুন’?

তিনি বলছেন, কোরআন মাজীদ এবং আয়াতগুলো তাকে বরাবরই মুগ্ধ করতো। তাই সেরা ক্যালিগ্রাফ লিপি দিয়ে তিনি কোরআনের কপি করতে চাইছিলেন। ফাতিমা বলেন, প্রথম দিকে একটা বা দুটো আয়াত কপি করতাম, মা-বাবা খুব প্রশংসা করতেন। আয়াতগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতাম। কিছুদিন পর দেখা গেল আমার পরিচিত জনেরা সেসব ফ্রেম কিনে নিচ্ছেন। আর আমি মনের আনন্দে তাদের জন্য আঁকতে থাকলাম। এতে করে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমিও যে কিছু একটা করতে পারি, আমি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করি। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার সময় ফাতিমা সাহাবা তার পরিবারের সাথে ওমানে থাকতেন। এক ছোট বোন এবং এক ছোট ভাই আর মা-বাবা নিয়েই তার পরিবার। এক সময়ে তার পরিবার ভারতে ফিরে আসে। কান্নুর জেলার কোডাপারমবা শহরে তাদের বাস। স্কুল শেষ করার পর ফাতিমা কলেজে ছবি আঁকা শিখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ইন্টিরিয়ার ডিজাইন পড়া শুরু করেন। এখন কান্নুরের কলেজেই তিনি ইন্টিরিয়ার ডিজাইন পড়ছেন। তিনি বলেন, সুযোগ থাকলে প্রতিটি মানুষেরই উচিত তিনি যে পেশা পছন্দ করেন তা বেছে নেওয়া এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা।

মেয়ের জন্য খুবই গর্ব অনুভব করেন ফাতিমা সাহাবার বাবা-মা। তারা বলেন, খুব গর্ব হয় তাদের মেয়ের এই সাফল্যে। মা নাদিয়া রউফ বলেন, ‘আল্লাহ’র রহমতে ফাতিমা তার সব কাজ শেষ করতে পেরেছে। আমরা সবাই খুবই গর্বিত তার জন্য। সে খুবই পরিশ্রমী এক মেয়ে। সে যাই করুক খুব মন দিয়ে তা করে’।

ফাতিমার বাবা আব্দুর রউফ বলছেন, ‘আল্লাহ্’র কাছে হাজার শোকর গুজার যে এরকম একটি মিষ্টি আর ধর্মভীরু একটি মেয়ে তিনি আমাদের দিয়েছেন’।

ফাতিমা বলেন, তার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার অভিভাবকরা কখনই পেছপা হন না। মানুষ যখন তার কাজ নিয়ে প্রশংসা করেন তখন বাবা খুবই খুশি হন। ‘কোরআন নকলের ব্যাপারটি প্রথমদিকে আমি শুধু আমার মা-বাবা আর বন্ধুদেরই বলেছি। কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কাউকে একথা জানাতে চাইনি’।

কোরআনের ক্যালিগ্রাফির কাজে হাত দেওয়ার আগে ফাতিমা সাহাবার বাবা একজন মওলানার সাথে কথা বলেন। তিনি জানতে চান, ফাতিমা কোরআন নকল করতে পারেন কিনা। তবে এ নিয়ে কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকার ফলে ফাতিমাকে অনুমতি দেওয়া হয়। বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
    মনে হয় মেয়ে টি ফরজগার মেয়ে,ভালো একটি মেয়ে ওকে স্ত্রীর বানাবে,সে ভাগ্যবান হবেন,সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন,
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
    মনে হয় মেয়ে টি ফরজগার মেয়ে,ভালো একটি মেয়ে ওকে স্ত্রীর বানাবে,সে ভাগ্যবান হবেন,সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন,
    Total Reply(0) Reply
  • Milad Alamgir ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
    কুরআনের কপি বললে বিষয়টি আরো সুন্দর হতো।আলহামদুলিল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Jewel ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
    হে মানব জাতি! আমি তোমাদের কাছে দু'টি বস্তু রেখে গেলাম, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ, তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আল্লাহর আল-কুরআন , দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার সুন্নাত।(বিদায় হজ্জের ভাষণ)
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:১৯ এএম says : 0
    MashaAllah. Good job . Carry on your work. Praying for more success
    Total Reply(0) Reply
  • Md Arif Hossain ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:২০ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ বোন। আল্লাহ আপনাকে আছিয়া (আ.), মরিয়ম (আ.), আয়েশা (রা.) ও ফাতেমা (রা.) দের সাথে জান্নাত নসিব করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Mamun ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:২০ এএম says : 0
    অনেক কষ্টের পর যখন সাফল্যতা পাওয়া যায় তখন অতীতের কষ্ট গুলো কে আর কষ্ট মনে হয় না।যদি ও তার কোন কষ্ট অনূভুত হয় নি কারণ সে কাজটি অনেক আনন্দের সাথে করেছে।আর অনন্দ ই হবে না কেন যেখান তার কাজে মহান আল্লাহ ই খুশি।আসলে এইরকম প্রতিভাবান,এক্সেপশনাল কাউকে দরকার এই পৃথিবীতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ataur Rahman ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৩৮ এএম says : 0
    Thank,s
    Total Reply(0) Reply
  • Harunur Rashid ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১২ এএম says : 0
    A true master in making! May Allah bless your work and you. You are the role model for lots of girls and boys around the world. Some credit goes to your caring parents, I am sure they must have encouraged you to do what you do best.
    Total Reply(0) Reply
  • khan Muhammad Safiullah ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৭ এএম says : 0
    Al-hamdulillah, MashaAllah.It is very excellent idea,Allah accept this Good job from Fatema Sahaba. Carry on your work. Praying for more success.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুরআন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ