Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রচণ্ড চাপে পড়বে জনজীবন

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালনি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গণপরিবহনের শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশের গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রেখেছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু গণপরিবহনেও ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে বিপিসি বলেছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। বিপিসি গত পাঁচ মাস ধরে লোকসান দিচ্ছে। তাই দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ববাজারে যখন দাম কম ছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি। এখন তাহলে বাড়ানো হলো কেন? তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কম থাকায় বিপিসি বিগত ৭ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। পাঁচ মাস লোকসান দিয়ে ডিজেল-কেরোসিনের দাম এক লাফে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়বে।

জ্বালানি তেলের দাম এমন এক সময় বাড়ানো হয়েছে যখন বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, সবজিসহ সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকারণে কোটি কোটি মানুষ যেমন দরিদ্র হয়েছে, তেমনি অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছে কিংবা তাদের আয় কমে গিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসি ও বিইজিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকারণে দেশে নতুন দরিদ্র হয়েছে ৩ কোটি ১৪ লাখ মানুষ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের চলমান জীবনযাপনের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে। সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। তাদের পক্ষে বাড়তি খরচ যোগানো সম্ভব হবে না। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রায় সর্বত্র পড়ে। যাতায়াত থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন, কৃষি উৎপাদন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায়। শিল্প উৎপাদনেও ব্যতিক্রম হয় না। এসবের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে মানুষের ওপর। সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে তার ক্ষতি পোষানোর মানসিকতা রয়েছে। অথচ সরকারের কাজ জনগণের জীবনযাপন কতটা সহজ রাখা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেয়া। তার কাজ ক্ষতি পোষানো বা ব্যবসা করা নয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিপিসি কেবল তার লোকসানের দিকে নজর দিয়েছে, লাভ যে করেছে, সেদিকে দৃষ্টি দেয়নি। বাংলাদেশে যেদিন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেদিনই ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ৫ থেকে ১০ রুপি কমিয়েছে। আমাদের দেশে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে এবং তা শিঘ্রই কমার সম্ভাবনা নেই। আমাদের জ্বালানির সিংহভাগই আমদানি নির্ভর। ফলে দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। তবে তা অসহনীয় পর্যঅয়ে বৃদ্ধি করা মোটেও উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কী ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, তা সুবিবেচনা করে বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া উচিৎ ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার মধ্যেও সরকার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতিকে ভেঙ্গে পড়া থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পেরেছে। তবে এর ক্ষতি থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণের পর সবকিছু স্বাভাবিক হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতিতে তারা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর সুদূর প্রসারি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরিবার ও সমাজে পড়বে। আয় বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে সরকারের উচিৎ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা। জ্বালানি তেলের ওপর যে শুল্ক রয়েছে, তা ছাড় দিয়ে দাম কমানো যেতে পারে। নিত্যপণ্যের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায়, এজন্য সেসব পণ্যের ওপরও শুল্ক ছাড় এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। তাদের জীবনমান যদি অবনমিত হয়, তবে সরকারের উন্নয়ন কর্মপ্রয়াস প্রশ্নবিদ্ধ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনজীবন

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন