Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লজ্জায় শুরু, লজ্জায় শেষ

অর্জন বলতে ওমান-পিএনজি!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ৫ নভেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশ : ১৫ ওভারে ৭৩
অস্ট্রেলিয়া : ৬.২ ওভারে ৭৮/২
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে পরাজিত
বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে মিরপুর স্টেডিয়ামকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মাঝ আকাশে সেই ছবিই ড্রোনের মাধ্যমে তোলা হয়েছে একেবারে নিখুঁতভাবে। না, বাস্তবে এমনকিছুই হয়নি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নখদর্পহীন পারফরমেন্সে এমন দৃশ্যই ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নিছক বিনোদন মনে হলেও ছবিটি যেন প্রতীকী অর্থে বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অদক্ষতা, অযোগ্যতাকে।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘নিজের ভালো পাগলেও বোঝে’। বিসিবি কি নিজের ভালোটা বুঝতে পারেনি? নাকি টি-টোয়েন্টিতে ঘরের মাঠে সিরিজ জেতাই ছিল তাদের দৃষ্টিতে বড় অর্জণ? মিরপুরে নিজেদের মনেরমতো উইকেট বানিয়ে আশানুরূপ ফল অর্জণ করে বিশ্বকাপে যে কিছুই করা যাবে না-তার আভাস আগেই মিলেছিল। রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় প্রসঙ্গে সাকিব আল হাসানতো কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন, ‘এমন উইকেটে খেললে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে!’

আসলেই তো। ক্যারিয়ার শেষ না হলেও চলমান (বাংলাদেশের জন্য শেষ) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফরমেন্সে লজ্জায় লাল হতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে বরং কঠিন মনে হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেয়া। এইতো বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদশে। ছন্নছাড়া ব্যাটিয়ের পরও অন্তত একটা জায়গায় ‘সন্তুষ্ট’ হতে পারেন। সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা থেকে তো রক্ষা পাওয়া গেছে! টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেটাও ঘটেছিল বিশ্বকাপে। ২০১৬ সালের আসরে সেবার ৭০ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। আর এবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গুটিয়ে গেলো ৭৩ রানে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় ডুবেছে মাহমুদউল্লাহরা।

গতকাল বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেমেছিল বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। অ্যাডাম জাম্পা একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। যেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস শামীম হোসেনের, ১৯ রান। তিনি ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন কেবল নাঈম শেখ (১৭) ও মাহমুদউল্লাহ (১৬)।

ব্যাটারদের অসহায় আত্মসমর্পণের পর ‘কানের কাছ দিয়ে গুলি গেছে’। লজ্জার রেকর্ডের খাতা নতুন করে খুলতে হয়নি। ২০১৬ বিশ্বকাপে কিউইদের বিপক্ষে ৭০ রানই হয়ে থাকলো সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড। এ নিয়ে দশমবারের মতো একশ রানের নিচে অলআউট হল বাংলাদেশ।

মাত্র ৭৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নারদের তান্ডবে মুস্তাফিজদের পাত্তাই দেয়নি অজিরা। রান রেটের কথা মাথায় রেখেই শুরু থেকেই বাউন্ডারি মারতে থাকেন ফিঞ্চ, ওয়ার্নার। ৫ ওভারের আগেই দলের রান পঞ্চাশ পার! ফিঞ্চের আগ্রাসনের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশের বোলিং শিবির। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে তাসকিনের আঘাতে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন ফিঞ্চ। তবে ২০ বলে ৪০ রানের ইনিংসে জয়ের ভীতটাও গড়ে দেন অজি অধিনায়ক।

এরপর জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে ১৪ বলে ১৮ রানে শরিফুলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ওয়ার্নার। তবে বাকি কাজটা সহজেই সেরে ফেলেন মিশেল মার্শ! ৮ উইকেট আর ১৩.৪ ওভার বাকি থাকতে বিশাল জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও এক হারে তাদের পয়েন্ট ৬। সমান ম্যাচে সমান জয়-পরাজয় নিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা আছে তিনে। গ্রæপে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রোটিয়ারা খেলবে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অন্যদিকে অজিদের মুখোমুখি হবে এবারের আসরে নিজেদের মেলে ধরতে না পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই বলাই যায়, তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে অজিরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ দল বিশ্বমঞ্চের লড়াইয়ে নামার আগে দেশবাসীকে দেখিয়েছিলেন সেমিফাইনালের স্বপ্ন। অথচ প্রথম রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ওমানের বিপক্ষে খেলেছিল ‘অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনাল’। এরপর পাপুয়া নিউগিনির ম্যাচতো ছিল এককথায় ‘অঘোষিত সেমিফাইনাল’। কেন বলছি একথা? কারন হারলে তখনই বিদায় ঘটতো বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহরা সেমিফাইনালের স্বপ্ন বলতে কি পিএনজির ম্যাচটিকেই বুঝিয়েছিলেন!

তবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে একটি ম্যাচও জিততে না পারা দলটির জয় না হলেও শেষ ম্যাচে অন্তত লড়াই দেখার আশা ছিলো সমর্থকদের। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গেছে যেনো ভিন্ন এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে। বিদায় বেলায় ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ন করে নাস্তানাবুদ হলো মাহমুদউল্লাহর দল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ বাংলাদেশ

৬ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ