মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বুধবার কার্বন নিঃসরণ কমাতে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে নেট জিরোর লক্ষ্য অর্জনে অর্থায়ন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ২০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আগামী বছর থেকে অন্য দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের উন্নয়নে অর্থায়ন বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্বের আর্থিক সম্পদের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, এমন সাড়ে চার শ কোম্পানি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার চলতি শতকের শেষে দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ১৩০ নিযুত কোটি (ট্রিলিয়ন) ডলার। তবে কয়লাসহ জ্বালানি খাতে বর্তমানে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ চীন ও জাপান এই সমঝোতায় অংশ নেয়নি। এ ছাড়া নেট জিরো অর্জনে বেসরকারি খাত কীভাবে অর্থায়ন করবে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে, তা নিয়েও নতুন করে উদ্যোগ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে ২০৪০ সালের মধ্যে নেট জিরোর লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই উদ্দেশ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে খেলাধুলার আয়োজনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথাও এদিন ঘোষণা করা হয়।
তবে সম্মেলনস্থলের বাইরে গ্লাসগো শহরের নানা প্রান্তে বিক্ষোভকারীরা ব্যাংক ও অন্যান্য বহুজাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মুনাফালিপ্সার কারণে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করে। সম্মেলনস্থলের বাইরে জলবায়ু সংকটের জন্য ঔপনিবেশিকতা দায়ী বলে ফেস্টুন বহন করেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাঁরা বলছেন, কার্বন গ্যাস নিঃসরণ বন্ধের জায়গায় তার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার নীতি তাঁদের সমাজকে ভেঙে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। খনিজ সম্পদ আহরণ, বাণিজ্যিক কৃষি এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোক্তারা তাদের ভূমি গ্রাস করছে।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অর্থায়নের বিষয়ে কাজ করা আন্দোলনকারী সংগঠন মার্কেট ফোর্সেসও সোচ্চার। তারা দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ২০২১ সালে সর্বাধিক বিনিয়োগকারী ব্রিটিশ ব্যাংক বার্কলেজকে লজ্জা দিতে গ্লাসগোতে প্রতিষ্ঠানটির শাখাগুলোর ভবনের দেয়ালে সেঁটে দিয়েছে নানা পোস্টার। পরিবেশবাদীরা বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং লোকদেখানো কিছু পরিবেশবান্ধব বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের অতীত দূষণকে আড়াল করতে বা গ্রিনওয়াশিং করতে চাইছে। এবারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে এসব কোম্পানির বেশ কটিই প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব পরিচয় ব্যবহার করে যেসব কোম্পানি নৈতিক বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়তে চায়, সেসব কোম্পানি যাতে জলবায়ুর ক্ষতি করে তা আড়াল করতে না পারে (গ্রিনওয়াশিং), সেটা তদারকির জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার কথাও গতকাল কপ ২৬-এ ঘোষণা করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবেলিটি স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (আইএসএসবি) নামের এই প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালে তার প্রথম সমীক্ষা রিপোর্ট দেবে, যাতে বড় বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশগত ভূমিকা তুলে ধরা হবে। ৩৬টি দেশ এই আইএসএসবি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বলে কপ ২৬ সভাপতির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি ও উচ্চ হারে গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণকারী শিল্প এবং পরিবেশ বিপন্নকারী প্রকল্পে মুনাফার জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ উৎসাহিত করার নীতি নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋশি সুনাক ঘোষণা করেছেন যে তিনি চান অর্থবাজারের হিসাবে লন্ডন নেট জিরোর নীতিগুলো গ্রহণ করবে। ব্যাংক-বিমা-বিনিয়োগসহ আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন ২০২৩ সালের মধ্যে তাদের কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণে ভারসাম্য আনতে কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তার পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। তবে এই নির্দেশনা বাধ্যতামূলক হবে না।
পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গ্রিনপিস বলেছে, উদ্যোগটি ভালো হলেও তা শুধুই বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। কেননা, পরিকল্পনায় এমন ফাঁক রাখা হয়েছে, যাতে কোম্পানিগুলো যেভাবে ব্যবসা করছে, সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারবে। বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলছে যে জীবাশ্ম জ্বালানি, সেই জ্বালানিতে নিযুত কোটি ডলারের যে বিনিয়োগ প্রবাহ চলছে, তাতে এই ঘোষণা খুব একটা ব্যত্যয় ঘটাবে না। তারা দাবি করে, এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিবিসি স্কটল্যান্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির নতুন কোনো অনুসন্ধান ও উত্তোলন বন্ধ হওয়া উচিত। সূত্র: রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।