Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে ফার্স্ট হওয়া লাগবে, এখন একমিনিট লস মানে ১ মার্ক পেছনে পড়ে যাওয়া

“খ” ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হাফেজ জাকারিয়া

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ পিএম

কথা গুলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “খ” ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া পটুয়াখালীর বদরপুর গ্রামের হাফেজ জাকারিয়ার বাড়ীর দেয়ালে লাগানো বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত নোটের পাশাপাশি নিজ হাতে লেখা এটি সংক্ষিপ্ত নোটের। আজ সকালে পটুয়াখালী শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী-ঢাকা মহাসড়কের বদরপুরের মোল্লা বাড়িতে গিয়ে কথা হয় হাফেজ জাকারিয়ার গর্বিত মা কাজী তাহেরা পারভীনের সাথে। তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নিজ কর্মস্থল দুধাল মৌ ফয়েজ হোসেন ফাজিল মাদ্রাসার যাওয়ার জন্য, সেখানে তিনি সহকারী মৌলভী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। স্বামী মো: শহীদুল ইসলাম সেলিম মোল্লা উইলস মার্কেটিং কোম্পানীর সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার হিসেবে মাওনা শ্রীপুর,গাজীপুরে কর্মরত রয়েছেন।

জাকারিয়ার বাড়ীর প্রত্যেকটি দেয়ালে, বাথরুমের সামনে লাগানো বেসিনের উপর আয়না থেকে খাবার টেবিলে বসার স্থানের উপর দেয়ালে সর্বত্রই বিভিন্ন শর্ট-নোট সহ পড়ালেখার বিষয়গুলি নিজ হাতে লেখে স্কচটেপ দিয়ে লাগানো রয়েছে। ঘরে প্রবেশের মুখে দেয়ালেই লাগানো রয়েছে ঢাবিতে ফার্স্ট হওয়া লাগবে। এখন একমিনিট লস মানে ১ মার্ক পেছনে পড়ে যাওয়া। “Nature finds way to ensure the survival of the fittest.”

২০০২ সালে নিজ গ্রামের বাড়ী পটুয়াখালীর বদরপুরে জন্ম গ্রহণ করেন জাকারিয়া। জাকারিয়ার মা তাহেরা বেগম ছেলের সাফল্যে প্রথমে মহান আল্লাহর কাছ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন ,“আল্লাহর রহমত না থাকলে সামনে আগানো সম্ভব নয়,আল্লাহর কাছে চেয়েছি মহান আল্লাহ শুনেছেন, আমার ছেলে মানুষের উপকার করতে পারে সমাজের উপকার করতে পারে, ইহকাল পরকালে সফলতা অর্জন করতে পরে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।” প্রাইমারীতেস্কুলে প্রধান শিক্ষক তার বিশেষ নজর দিতেন আমার ছেলের প্রতি, বাড়ীতে আমি তাকে পড়িয়েছি কোন প্রাইভেট পড়ায়নি।ছোট বেলা থেকে শান্ত শিষ্ট স্বভাবের তার ছেলে পটুয়াখালী জেলার বদরপুরের ১৫ নং দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রাথমিকের পড়ালেখা শুরু করে। সেখান থেকে ২০১১ সালে পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি প্রাপ্ত হয়ে জেলায় তৃতীয় স্থান লাভ করে। ধার্মিক পরিবারে সন্তান হিসেবে মা ও বাবা তাকে পরবর্তীতে ২০১২ সালে ভর্তি করিয়ে দেন পাংগাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসায় সেখানে সে ৬মাস পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে বাবার চাকুরীর সূত্রে ঢাকার শ্রীপুরের মাওনা জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় হেফজখানায় ভর্তি হয়ে ২০১৪ সালের মধ্যে হাফেজী পাস করেন। ২০১৫ সাল থেকে বাড়ীর মসজিদে খতম তারাবারি নামাজ পড়াতে শুরু করেন জাকারিয়া। পাশাপাশি সপ্তম শ্রেনীর পড়ালেখা জাকারিয়া বাড়ীতেই মায়ের তত্বাবধানে সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে ৮ম শ্রেনীতে পাংগাশিয়া নেছারিয়া মাদ্রাসায় পুনরায় ভর্তি হন সেখান থেকে ৮ম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্ত হন, লাভ করেন উপজেলায় দ্বিতীয় স্থান। ৯ম শ্রেনীতে ঢাকার ডেমরার শারুলিয়া দারুন নাজাত ছিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি পরীক্ষায় সহ্রসাধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যেপ্রথম স্থান লাভ করে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৮ সালে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ -৫ প্রাপ্ত হয়ে ঢাকা বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে। ২০২০ সালে আলিম পরীক্ষায় ঢাকা বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।

বদরপুরের পাশ্ববর্তী গাবুয়া গ্রামের কাজী বাড়ীর কাজী আ: খালেকের কন্যা সন্তান তাহেরা বেগম তার চাচা আদাবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী আ: দাইয়ানের প্রেরণায় আদাবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল,আলিম,ফাজিল কামিল মদীনাতুল উলুম মহিলা কামিল মাদ্রাসায় সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে হাফেজ জাকারিয়ার উচ্চশিক্ষিত মা ঢাকার ইডেন বিশ্ববদ্যালয় কলেজ থেকে ২০০২ সালে অনার্স এবং ২০০৪ সালে ইসলামী শিক্ষায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে বিয়ের পরে ফাজিল সম্পন্ন করার পরপরই বিয়ে হয় । দুই পুত্র সন্তানের জননী তাহেরা বেগম বলেন, স্বামীর সর্বাত্মক সহযোগীতায় আমার পড়ালেখা সম্পন্ন করি।স্বামী কর্মের কারনে সবসময়বাড়ীতে নাথাকলেও সবসময় জাকারিয়ার পড়ালেখার সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছেন পাশাপাশি বাড়ীর সকল আত্মীয় স্বজন সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছেন -যার কারনেই জাকারিয়ার এসফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

ভাল রেজাল্ট করা সন্তানকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য প্রেরণা দিয়েছেন ,এ প্রশ্নের জবাবে তার মা জানান,বড় প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাড়লে ভাল শিক্ষা পাবে ,পরবর্তী জীবনে সমাজের জন্য কিছু করার সুযোগ পাবে। ছেলে রাজনীতি করার ইচ্ছা পোষণ করেছে ভবিষৎতে ,এ প্রশ্নের জবাবে বলেন মানুষের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে রাজনীতি একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

জাকারিয়ার বাড়ীতে বসে তার মোবাইল ফোনে কথা হলে জাকারিয়া তার অনুভ’তি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান ,তার এই সফলতার পিছনে তার মায়ের অবদান শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ। ভবিষ্যৎ রাজনীতি করার ইচ্ছা পোষণের ক্ষেত্রে, ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি কেন নয় এ প্রশ্নের জবাবে বলেন ছাত্র অবস্থায় রাজনীতির সাথে জড়ালে পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আইন বিভাগে ভর্তি ইচ্ছুক জাকারিয়া জানান পড়ালেখা শেষ করে ভবিষ্যৎ বিচার বিভাগে নয়,আইন পেশার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাড়িয়ে মানুষের সেবা করাই তার লক্ষ।
কথা হয় বদরপুর ইউনিয়নের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: আবু জাফর তালুকদারের সাথে,তিনি জানান আমরা খুবই খুশী,জাকারিয়া খুবই ধার্মিক এবং নরম ভদ্র স্বভাবের ছেলে তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত।


জাকারিয়া যেই স্কুলে তার পড়ালেখা শুরু করেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান,জাকারিয়া একজন সহনশীল মনের মানুষ ছিল,সকলের সাথে মিলে মিশে চলতো । সবসময় ১ রোল ধারী জাকারিয়াকে দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে তাকে পড়ান তিনি,স্কুলের সাহিত্য চর্চা ,সহ খেলাধূলা এবং জাতীয় দিবসগুলিতে সাস্কৃংতিক অনুষ্ঠানে ভাল রেজাল্ট করতো সে। নজরুল ইসলাম, কান্নাজড়িত কন্ঠে জাকারিয়ার এ সাফল্যে গর্ব অনুভব করছেন বলে জানান।

হাফেজ জাকারিয়ার বাবা মো: শহীদুল ইসলাম সেলিম মোল্লা জানান,ছেলেকে আলেম বানাতে চেয়েছিলেন,মাদ্রাসায় পড়িয়েছি, ছেলে কোচিং করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছেলে আমাকে কথা দিয়েছে ভবিষ্যৎ কোরান হাদীস নিয়ে রিসার্স চালিয়ে যাবে।আমি নিরিবিলি পরিবেশের মানুষ রাজনীতি করিনা।ছেলে ভবিষ্যৎ রাজনীতি করতে চাইলে এটা তার বিষয়।



 

Show all comments
  • salman ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৪৯ এএম says : 0
    Masha Allah, aro boro hoow & Desh & Jatike Sotota daw. Nastik, Madrash berudhi der dekhia daawwwwww
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পটুয়াখালী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ