Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে সবুজ বাজি ফাটানোর অনুমতিতে বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৫৬ এএম

কালীপুজো এবং দীপাবলির সময় ভারতে বিপুল পরিমাণ বাজি ফাটানো হয়। যার জেরে দূষণের মাত্রা কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। দীপাবলিতে গ্রিন ক্র্যাকার ফাটানোর অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সবুজ বাজি কি আদৌ হয়, প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদেরা।

গত কয়েকবছর বাজি ফাটানো নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। আদালত বিভিন্ন রাজ্যে বাজি ফাটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এবছরও কলকাতা হাইকোর্ট সবরকম বাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক রায়ে বলেছে, শুধুমাত্র গ্রিন ক্র্যাকার বা সবুজ বাজি ফাটানো যাবে। অর্থাৎ, পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। প্রশ্ন উঠেছে, পরিবেশবান্ধব বাজি কি আদৌ তৈরি করা সম্ভব? নামজাদা পরিবেশবিদদের মতে, সবুজবাজি আসলে সোনার পাথরবাটি। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই।

ন্যাশনাল এনভারয়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি) একসময় সবুজ বাজি তৈরির পদ্ধতি জানিয়েছিল। যেখানে বেরিয়াম-সহ একাধিক বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। শব্দের মাত্রাও বেঁধে দেয়া হয়েছিল। নিরি-র গবেষকেরা এমন বাজি তৈরি করে জানিয়েছিলেন, কেবলমাত্র ওই ধরনের বাজিই তৈরি করা যাবে। স্থির হয়েছিল, নিরি বিভিন্ন বাজি তৈরির কারখানাকে ওই ধরনের বাজি তৈরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট দেবে। নিরির লোগো ব্যবহার করে ওই কারখানাগুলি সবুজ বাজি তৈরি করতে পারবে। এখনো পর্যন্ত নিরি ভারতের কতগুলি সংস্থাকে ওই সার্টিফিকেট দিয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের। ফলে বাজারে আদৌ সবুজ বাজি আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সবুজ বাজি বলে আসলে কিছু হয় না। অন্য বাজির তুলনায় সবুজ বাজিতে দূষণের মাত্রা সামান্য কমে। ফলে একে গ্রিন না বলে অরেঞ্জ বলা যেতে পারে। সাধারণ বাজি যদি লাল, অর্থাৎ চরম ক্ষতিকারক হয়, তাহলে নতুন ধরনের বাজি তার চেয়ে সামান্য কম ক্ষতিকারক বা কমলা মাত্রার বাজি। পরিবেশবান্ধব সবুজ হতে পারে না। সুভাষের কথায়, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমি হতাশ। এতদিন ধরে বাজি এবং দূষণ নিয়ে যে আন্দোলন হলো, তা এর ফলে বড়রকম ধাক্কা খেলো।’ একসময় শব্দবাজি নিয়ে গোটা দেশে আন্দোলন করেছেন সুভাষ। বাজি এবং দূষণ সংক্রান্ত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাবেক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘একটা বড় রসগোল্লা না খেয়ে দুইটি ছোট রসগোল্লা খেলে শরীরে সুগারের মাত্রা কমে না। তেমনই একটি অতি দূষণ ছড়ানো বাজি না ফাটিয়ে দুইটি কম দূষণ ছড়ানো সবুজ বাজি ফাটালে পরিবেশ রক্ষা পায় না। এটা সহজ বিজ্ঞান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আমি হতাশ।’ পরিবেশকর্মী নব দত্তের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা আরো বড় চিন্তার। তার দাবি, অধিকাংশ বাজি তৈরির কারখানার সবুজ বাজি তৈরির লাইসেন্স নেই। কিন্তু এই সুযোগে তারা প্যাকেটে সবুজ বাজির লেবেল লাগিয়ে বাজারে ছেড়ে দেবে। মানুষও সেই বাজি কিনে যতখুশি পোড়াবে।

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য জানিয়েছে, সবুজ বাজি ছাড়া অন্য কোনো বাজি পুড়লে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুভাষের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ জানবেন কী করে, সবুজ বাজির লেবেল থাকলে মানুষ বুঝবেন কী করে, তার ভিতর সত্যিই সবুজ বাজি আছে কি না! পুলিশ যদি ধরেও তারা লেবেল দেখিয়ে দেবেন। আর ততক্ষণে দূষণ যা হওয়ার হয়ে যাবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ