Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লজ্জার হারে বিদায় বাংলাদেশের

বাংলাদেশ : ১৮.২ ওভারে ৮৪ দ.আফ্রিকা : ১৩.৩ ওভারে ৮৬/৪ ফল : দ.আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

টি-টেয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লজ্জার হারে প্রথম দল হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায় নিলো বাংলাদেশ। গতকাল আবুধাবিতে দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটা ছেলেখেলা খেলেছে টাইগারদের নিয়ে। সাকিব-মুস্তাফিজহীন বাংলাদেশকে প্রোটিয়ারা মাত্র ৮৪ রানে অলআউট করে দিলে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণই করতে হয় মাহমুদউল্লাহর দলকে। চলতি বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়ারা অনেকটা তুড়ি মেরেই দেয় বাংলাদেশকে। মাহমুদউল্লাহদের মাত্র ৮৪ রানের পুঁজি ৩৯ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় জয় পেয়ে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন টেম্বা বাভুমাররা।

হতাশা আর হতাশা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে একরাশ হতাশাই উপহার দিয়ে দিলো। লাল-সবুজ পতাকার দেশটির জনগণের আবেগের কোন মূল্যই দিলেন না মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমরা। উল্টো সবাইকে ‘আয়নায় মুখ’ দেখতে বললেন তারা। আসরের সুপার টুয়েলভ পর্বে আগের তিন হারে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চাপহীন এক ম্যাচের প্রত্যাশায় ছিল গোটা বাংলাদেশ। কিন্তু কোথায় কি! উল্টো চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাহমুদউল্লাহরা জাতিকে উপহার দিলেন বিব্রতকর এক পরিস্থিতির। কাগিসো রাবাদা, আনরিক নরকিয়ার পেসে কোন জবাবই দিতে পারলেন না তারা। মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরই ম্যাচ অনেকটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে তাসকিন আহমেদ অন্ধকারে আলো হয়ে আনুষ্ঠানিকতা খানিকটা দেরি করিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের নায়ক তাদের বোলাররাই। বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিতে মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল নরকিয়া। প্রথমেই বাংলাদেশের ইনিংস তছনছ করা রাবাদা ২০ রানে নেন ৩ উইকেট।

টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট করতে নেমে যেন অনেকটা অসহায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মরা ঘাসে আচ্ছাদিত উইকেটে পেসারদের বাড়তি লাফানো বল, সিম মুভমেন্টে অসহায় দেখালো লিটন দাস-সৌম্য সরকারদের। রাবাদার বাড়তি বাউন্সে হকচকিয়ে ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিম, নরকিয়ার বাড়তি বাউন্সে কোনমতে শরীর বাঁচিয়ে ধরা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসের ঝাঁজে বাংলাদেশের পুরো ইনিংস জুড়েই ছিল এমন কাঁপাকাঁপি। স্্েরাতের বিপরীতে ঠিকই লড়ছিলেন লিটন দাস। তবে থিতু হওয়া এই ব্যাটার ৩২ বলে ২৪ রান করে তাবরাইজ শামসির স্পিন বিষের শিকার হলে মন ভাঙে লাল-সবুজের ক্রিকেটভক্তদের। আগে-পরের আসা যাওয়ার মিছিলে কিছুটা আলো ছড়ালেও দলকে খুব বেশি কিছু উপহার দিতে পারেননি লিটন। সর্বোচ্চ রান আসে শেখ মেহেদীর ব্যাট থেকে। আটে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী ২৫ বলে করেন ২৭। আর ২০ বলে ১১ করেন শামীম পাটোয়ারি। এই তিন জন ছাড়া বাকিদের স্কোর টেলিফোন ডিজিট। আর কেউ দুই অংকের ঘরে নিজেদের স্কোর তুলতে পারেননি।

মরা ঘাসের উইকেটে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য এলেন কাগিসো রাবাদা। পরে ওই স্পেলে বাংলাদেশের ভিতও নাড়িয়ে দেন তিনি। লিটন তার বল থেকে কাভার ড্রাইভে এক বাউন্ডারি পেলেও বাকিরা কিছুই করতে পারেননি। এইডেন মার্ক্রামের বাজে ফিল্ডিংয়ে কেশব মহারাজের বলে এক বাউন্ডারি পাওয়া ছাড়া ধুঁকছিলেন নাইম। প্রথম আগ্রাসী শট মারতে গিয়েই বিদায় নেন তিনি। রাবাদাকে পুল করতে গিয়ে মিড অন পার করতে পারেননি। পরের বলেই অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বিদায় নেন সৌম্য। তাকে অবশ্য রিভিউ নিয়ে ফেরায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মুশফিকও ফিরতে পারতেন প্রথম বলেই। অল্পের জন্য তার ক্যাচ ফিল্ডারের হাতে পড়েনি। তাতে লাভ হয়নি। তিন বলেই শেষ মুশফিক। রাবাদার বাড়তি বাউন্সারে হকচকিয়ে সিøপে ক্যাচ দেন। সেই ক্যাচ দারুণভাবে লাফিয়ে ধরেন রেজা হেনড্রিকস।

দেশের ক্রিকেট পাগল জনগণের আবেগকে নিয়ে খেলতে থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের খেলা দেখে মনে হয়েছে ‘সবে মাত্র’ শুরু করেছে তারা। তা না হলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের এমন ছিরি! ক্রিজে এসেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাননি তিনি। পুরোটা সময় ধরে ধুঁকছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক ৯ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে আনরিক নরকিয়ার লাফানো বলে গ্লাভস ছুঁইয়ে দেন ক্যাচ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর আফিফ হোসেন এসে প্রথম বলেই উদ্ভট এক শট খেলতে যান। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস বল ছাড়ার আগেই ক্রিজ থেকে বেরিয়ে শট খেলতে গেলে বোল্ড হয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন আফিফ। ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ। রানের চাকা তখন বেশ শ্লথ। ১০ ওভারে কেবল ৪০ রান। তরুণ শামীম পাটোয়ারিকে নিয়ে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টায় লিটন। কিন্তু তার বিদায় স্পিন বিষে। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর বোলার তাবরাইজ শামসি। মায়াবি এক ফ্লাইটে লিটনকে বিভ্রান্ত করেন তিনি। ফ্লিক করতে যাওয়া লিটন এলবিডব্লিউতে শেষ। তিনি যখন ফিরছেন দ্বাদশ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৪৫। এরপর শেখ মেহেদী-শামীম মিলে আনেন আরও ১৯ রান। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে নামা শামীম বিপদজনক পরিস্থিতিতে আহামরি কিছু করতে পারেননি। শামসির বলে ক্যাচ দেন ২০ বলে ১১ করে। আটে নেমে শেখ মেহেদী পরে একাই কিছু রান বাড়িয়েছেন। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাও তার ব্যাট থেকেই আসে। ১৯তম ওভারে নরকিয়াকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

৮৫ রানের লক্ষ্যে নেমে তাড়া ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সেমির আশা বাড়াতে রানরেট ছিল তাদের মাথায়। প্রথম ওভারেই তাদের একটু হোঁচট দেন তাসকিন। তার কাট করে ভেতরে ঢোকা দারুণ এক বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রিজা হেনড্রিকস। কুইন্টেন ডি কক তিন বাউন্ডারিতে কাজ দ্রুত সারার আভাস দেন। প্রোটিয়া কিপার ব্যাটসম্যান তাড়াহুড়োর অপ্রোচেই শেখ মেহেদীর বলে হন বোল্ড। টানা স্পেলে নিজের তৃতীয় ওভারে এইডেন মার্ক্রামকে সিøপে ক্যাচ বানিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন তাসকিন। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট তার। রাসি ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে বাকি কাজ সারতে কোন সমস্যা হয়নি বাভুমার। তবে জয়ের ৫ রান আগে ছক্কা মারতে গিয়ে ফেরেন ২২ রান করা ডুসেন। অধিনায়ক বাভুমা ৩১ ও ডেভিড মিলার ৫ রানে থাকেন অপরাজিত। শেষ পর্যন্ত ১৩.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ৮৬ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা পায় সহজ জয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ বাংলাদেশ

৬ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ