Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেজরসহ ৮৫ সেনা নিহত

মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সেনা হামলা বাড়ি-ঘরে আগুন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মিয়ানমারে সাগাইং অঞ্চলে জান্তাবিরোধীদের হাতে মেজরসহ ২৫ সেনা নিহত হয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। সাগাইংয়ে এ নিয়ে মাত্র তিনদিনে ৮৫ সেনার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী কাওলিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেএলপেডিএফ) প্রচারমাধ্যম কওলিন রেভোল্যুশনের (কেআর) বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী। বুধবার কাওলিনের কিয়ুনবিন্থা গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় প্রথমে ৪০ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানালেও পরে আরও ২০ সেনার মৃত্যুর খবর জানায় কেআর। এরপর বৃহস্পতিবার কাওলিনের পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আরও ২৫ জান্তা সেনা নিহত হওয়ার খবর দেয় গ্রুপটি। এতে তিন বেসামরিক প্রতিরোধযোদ্ধাও প্রাণ হারান। খবরে বলা হয়, দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বহু বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছেন বাসিন্দারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চিন রাজ্যের থান্টলাং শহরে স্থানীয় আত্মরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এরপরই ভারী গোলাবর্ষণ চালায় সেনারা। থান্টলাং থেকে পালিয়ে আসা এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির। তিনি বলেন, এক সেনা সদস্যকে আটকের জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ‘ওই এলাকা প্রচণ্ড গোলাগুলির কথা জানতে পেরেছি। সাধারণ মানুষের উপর কামান নিয়ে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এতে ৮০ থেকে একশ’ ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে’। সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও জানান, ‘আমরা জানি না আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা’। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, পাহাড়ের ভেতরে থাকা বাড়ি-ঘর থেকে কালো ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গেছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সেনারা হামলার পর কমপক্ষে ১০০ বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়রা সেখানে আর ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এই সংস্থাটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রেখেছে সেনারা। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারের বেশি মানুষ। আল-জাজিরা এ খবর জানায়। শহরের এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার স্থানীয় জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীরা এক সৈন্যকে বন্দী করে। পরে সামরিক বাহিনী ওই শহরের ওপর গোলা বর্ষণ শুরু করে। সংবাদমাধ্যম দুটি জানায়, সামরিক বাহিনীর হামলায় শহরের ১৬৩টি বাড়ি ও দুইটি গির্জা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এদিকে শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গোলা বর্ষণে শহরে তাদের কার্যালয় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং ১০ কর্মীর সকলেই শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সহিংসতার কারণে সৃষ্ট এই ধ্বংসযজ্ঞ সম্পূর্ণ অর্থহীন। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে সহিংস সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকের সামান্য জমা সম্পদও ধ্বংস হয়েছে।’ থান্টলাঙ শহরে প্রায় ১০ হাজার লোকের আবাস ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর চিন রাজ্যে হামলার কারণে শহরটির বাসিন্দারা নিজেদের আবাস ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সন্ধানে চলে গেছে।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদাও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পরে ১ আগস্ট জরুরি অবস্থার মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং। গত বছরের নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী। সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া অহিংস বিক্ষোভকে সামরিক উপায়ে জান্তা সরকার দমন করতে গেলে বিক্ষোভকারীরাও বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র হাতে নেয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট দেশের সাধারণ মানুষকে সামরিক জান্তার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ও সশস্ত্র তৎপরতায় সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে মিয়ানমারে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী ও বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে দেশটিতে মানবাধিকার নজরদারি করা সংস্থাগুলো জানায়। অপরদিকে সামরিক বাহিনী নিহতের এই সংখ্যা অস্বীকার করে আসছে এবং সংঘর্ষে বিপুল সৈন্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। ইরাবতী, আল-জাজিরা, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Shahjahan Rana ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২২ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • আবু বকর সিদ্দীক ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২২ এএম says : 0
    সবই আল্লাহর ইচ্ছা
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hasan ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২৩ এএম says : 0
    আল্লাহ রহিঙ্গাদের হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছেন। আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। এটা অতিসত্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abu Siddek ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২৩ এএম says : 0
    আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর যে অত্যচার করা হয়েছে তার প্রতিদান
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmad Maimun ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২৩ এএম says : 0
    রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ফলাফল ।
    Total Reply(0) Reply
  • প্রত্যয় প্রতীতি ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২৪ এএম says : 0
    আসুন আমরা সম্মিলিতভাবে ভারতের নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে # হ্যাশট্যাগ করি!! যাতে বিশ্ব বিবেকের মুখোশ উন্মোচন হয় #SaveTheMuslimIndia #SaveTheMuslimIndianWomen #SaveTheIndianMuslimMosque #SaveTheMuslimIndiaHolyQuran #Stop_Communal_Attack #Save_Tripura_Muslims #TripuraMuslimsWantSafety #SaveTripuraMuslims #WeDemandSafety #WeDemandJustice #SaveTripuraMuslims #BoycottBJPRSSTerrorism #BoycottHindutvaTerrorism #BoycottHindutvaTerrorismGovernment #BoycottIndianHindutvaTerrorist
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Ayub Ali ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ২:০১ পিএম says : 0
    আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর যে অত্যচার করা হয়েছে তার প্রতিদান
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ