নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডকেই মনে হয়েছে ‘কঠিন প্রতিপক্ষ’। সেই ‘কঠিন প্রতিপক্ষ’কে হারানো দূরে থাক, উল্টো ৬ রানে হেরে বাছাই থেকেই বিদায়ের শঙ্কা জেগেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের। পরে অবশ্য আর হোঁচট খেতে হয়নি। ওমান ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে গ্রæপ রার্নাসআপ হয়ে সুপার টুয়েলভের গ্রুপ ১-এ জায়গা করে নেয় টিম টাইগার্স। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হতো বাংলাদেশের। সংযুক্ত আরব অমিরাতের ‘উপমহাদেশীয়’ কন্ডিশনের বিচারে নামগুলো আসলেই বড়। সেই বিচারে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কাই তুলনামূলক ‘সহজ’ প্রতিপক্ষ।
তবে বাংলাদেশ যেভাবে সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হারল, তাতে যেকোন প্রতিপক্ষই এখন ‘প্রবল শক্তিশালী’। টানা দুই হারের পর বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল চারটায় শারজায় নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। অবশ্য দুইবারের চ্যাম্পিয়নদেরও সময়টা ভালো যাচ্ছেনা। সুপার টুয়েলভে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছে ক্যারিবিয়রাও। তাই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে উইন্ডিজ। কিন্তু বাংলাদেশ কি আসলেই জয়ের জন্য নামবে? নাকি আরেকটি হতাশা উপহার পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে ১৬ কোটি বাংলাদেশী? দ্বিতীয় প্রশ্নের আবির্ভাবের পেছনে একটাই কারণ- সাম্প্রতিক ফর্ম।
খেলার মাঠে নিষ্প্রভ থেকে সংবাদ সম্মেলনে ‘যা খুশি তা’ বললেই দায় এড়ানো যায় না। ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের কথাই যদি ধরি, শতকোটির জনসংখ্যার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেন তিনি। জিতলে পেতেন সংবর্ধনা, হারলে নীরবে সহ্য করতেন কটু কথা। কোন ধরনের হৈ চৈ তাকে কেউ করতে দেখেছেন কিনা সন্দেহ। তাইতো অবসর নেয়ার এক দশক পেরিয়েও সবার দৃষ্টিতে তিনি সম্মানের পাত্র। এই সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না। চাইলেই সমর্থকদের থামিয়েও দেয়া যায় না। এই সমর্থকদের কারণেই আজ সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা মুশফিকুর রহিম দেশের ক্রীড়াঙ্গণের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
দেশে কি শুধু ক্রিকেটই খেলা হয়? ফুটবল, কাবাডি, হকি, ব্যাডমিন্টনসহ অন্যান্য তারকাদের আমরা কতটুকু চিনি বা জানি? আসলে আমরাতো সেই খেলাই ঠিকমতো দেখি না। তাই কোন প্রত্যাশাও নেই। জিতলে শুধু একবার হাততালি। ক্রিকেটের কাছে প্রত্যাশা আছে বলেই এতো সমালোচনা। আর এই সমালোচনার জবাব মুখে নয়, বরং দিতে হবে মাঠে। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে। টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেই একটা আশা বেঁচে থাকে। কারণ ২০০৭ সালে টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দলটির বিপক্ষে একমাত্র জয়টি বাংলাদেশকে উদ্বুদ্ধ করবে। এরপর থেকে ক্রিকেটের তৃতীয় বড় ইভেন্টে বাছাই পর্বের বাইরে কোন জয় তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। যে হিসেবে বাংলাদেশ নামিবিয়ারও পেছনে!
বাংলাদেশের ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজও অপ্রস্তুত আর অগোছালো। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্যারিবীয়দের হারানোর এটাই ভালো সুযোগ। পরিসংখ্যানও বলছে সেই কথা। এই ফরম্যাটে অন্য যেকোন শীর্ষ দলের চেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্যের হার বেশি। দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১২ ম্যাচে টাইগারদের ৫ জয়ের বিপরীতে হার ৬ টিতে। অপরটি পরিত্যক্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স খুব একটা আশানুরুপ নয়। এখন পর্যন্ত ১১৭ ম্যাচে ৪৩টি জিতেছে তারা। ৭২ ম্যাচে হার ও দু’টি পরিত্যক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপে ২৯টি ম্যাচ খেলেছে এবং মাত্র সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাছাইপর্ব থেকেই ছয়টি জয় এসেছে।
অথচ বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দু’টিসহ তিনটি সিরিজ জয়ের পর এবার তারা ভালো কিছু করতে পারবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তুনিজেদের খেয়াল খুশি মতো উইকেট বানিয়ে পাওয়া ঐ জয়গুলো যে বুমেরাং হয়ে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে তা নিয়ে সম্প্রতি দু’টি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক ইনকিলাবে। সেই মন্তব্য প্রতিবেদনের শিরোনাম দুটি এ মুহুর্তে হয়তো সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। টানা সিরিজ জয় আর বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ‘সর্বনাশা উইকেটে অশনি সঙ্কেত’, ও বিশ্বকাপ চলাকালীন স্কটল্যান্ডের কাছে লজ্জার হারের পর ‘মিরপুরের উইকেটের খেসারত’। এখন প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতা মিলিয়ে নেয়ার পালা। যেখানে ‘আয়না’র মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রসঙ্গ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর দলপতি মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও ব্যাটিং ব্যর্থতার হাহাকার ফুটে ওঠে, ‘অবশ্যই আমরা ব্যাটিং নিয়ে হতাশ। এটি ভাল উইকেট ছিল, কিন্তু আমরা শুরুটা ভাল করিনি এবং মাঝে কোন পার্টনারশিপও ছিল না।’ অন্যদিকে নাসুম আহমেদের কণ্ঠেও যেন ফুটে ওঠে অসহায়ত্বের ছাপ, ‘সবারই ভালো কিছু করার চেষ্টায় আছে, কিন্তু আমাদের দ্বারা হচ্ছে না।’
তবে যেহেতু ক্যারিবীয়ানদেরও অবস্থা খুব একটা সুবিধাজনক না। তাদের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে একটি জয় তুলে নিলে হয়তো কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারবে টাইগাররা। তাছাড়া সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কোন বিকল্পও তো নেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।