Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইট-পাথরের উন্নয়নের চেয়ে মানুষের নিরাপত্তা ও সুশাসন জরুরি

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

গত একদশকে পদ্মাসেতুসহ বেশ কিছু মেগাপ্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে মাইলফলক অর্জন করেছে দেশ। এসব মেগা প্রকল্পের সবগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন কল্পে যেসব ফ্লাইওভার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল তা অনেক আগেই বাস্তবায়িত হলেও ঢাকার যানজট নিরসন হয়নি। এখন ঢাকায় যান চলাচলের সাধারণ গড় গতি ঘন্টায় ৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি, যা মানুষের পায়ে হাঁটার গতির সমান। কথা ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সময় ৭ ঘন্টা থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টায় নেমে আসবে তা হয়নি। এখনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও আরিচা মহাসড়কে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে একেকটি মহাসড়ক দুইলেন থেকে চারলেনে উন্নীত করার পরও তার যথার্থ সুফল পাচ্ছে না মানুষ। ওদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও খবর বেরিয়েছে, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে বিশ্বে সবচেয়ে নি¤œমানের অবকাঠামো নির্মিত হয় বাংলাদেশে। কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় অনেক বেশি। মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় উন্নত দেশগুলোর চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। চারলেন মহাসড়ক নির্মাণে যেখানে প্রতি কিলোমিটারে ভারত-পাকিস্তানে খরচ হয় ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার, চীনে খরচ হয় ১৩ থেকে ১৬ লাখ ডলার, সেখানে বাংলাদেশে একযুগ আগে গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের প্রতি কিলোমিটারে খরচ ২৫ লাখ ডলার হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ লাখ ডলার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ লাখ ডলার এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার। অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের এই আধিক্যের জন্য বিশ্বব্যাংকের তরফে মূলত দুর্নীতির চক্রকেই দায়ী করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট হয়ে যাচ্ছে। জনগণের রাজস্ব ও বৈদেশিক ঋণে নির্মিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মূলত কোনো সরকারের বাহবা কুড়ানোর তেমন কিছু নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ঠিকমত খরচ হয়েছে কিনা, উন্নয়ন বাজেটের নামে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে কিনা, উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়ণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব। সব মানুষের জন্য সুশাসন এবং উন্নয়নের সুফল নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই উন্নয়নের মানদন্ড গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি জিইয়ে রেখে দেশে উন্নয়নের কোনো মডেলই জনগণের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। উন্নয়ন মানে ইট-কাঠ-পাথরের উন্নয়ন নয়। পর্ণ কুটিরেও নিশ্চিন্তে, দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে সুখে-শান্তিতে ঘুমানো যায়। আবার প্রাসাদোপম বাড়ীর রাজকীয় শান-শওকতেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের ঘুম আসে না। এ জন্য আমাদের উপমহাদেশের ছোট্ট প্রতিবেশী ভূটানের দেখানো একটি উন্নয়ন মডেলকে এখন আন্তর্জাতিক বিশ্ব গ্রহণ করেছে। প্রায় ৫০ বছর আগে ভূটানের রাজা ওয়াংচুক পুঁজিবাদী বিশ্বের প্রথাগত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবের বদলে জিএনএইচ (গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস) ইনডেক্স চালুর কথা বলেছিলেন। যেহেতু শুধু অর্থবিত্ত মানুষকে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারে না। অতএব, যেসব বিষয়ে কাজ করলে জনগণের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও নিরাপত্তাবোধ তৈরী হবে দেশের সরকারকে সেদিকেই বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ কারণেই এক সময় যেনতেন প্রকারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হলেও পরবর্তিতে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। সেখান থেকে এখন গ্রীন ডেভেলপমেন্ট বা পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত উন্নয়নের রূপরেখার কথা বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিগত আকাক্সক্ষা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে সবার জন্য সমঅধিকারের ভিত্তিতে আইনগত সুরক্ষা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ও আধ্যাত্ম্যবোধ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। শুধু অর্থবিত্ত দিয়ে সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা পাওয়া না গেলেও জাতিসংঘের তত্ত্বাধানে পরিচালিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্সে প্রথম ১০টি দেশের তালিকায় উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের ক্ষুদ্র দেশগুলোই স্থান পাচ্ছে। ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, লুক্সেমবার্গ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও ধনী। তবে কোনো অর্থনৈতিক-সামরিক পরাশক্তি দেশই সুখী দেশের তালিকার প্রথম সারিতে কখনো স্থান পায়নি। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে জরিপের ভিত্তিতে চলতি বছর বিশ্বের ১৪৯টি দেশের হ্যাপিনেস ইনডেক্সে ভারত তলানিতে অবস্থান করছে। তালিকায় ভারত ১৩৯তম স্থান লাভ করেছে। ভারত, পাকিস্তান (১০৫), মিয়ানমার (১২৬), শ্রীলঙ্কা (১২৯), বাংলাদেশ (১০১) এবং চীন ৮৪তম স্থান লাভ করেছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ ভারত-পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা-মিয়ানমারের চেয়ে সুখী। জাতিসংঘের এই তালিকায় ২০ বছর ধরে পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের শিকার আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে অসুখী মানুষের দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। যদিও এই তালিকাই সুখী জনপদ মূল্যায়নের শেষ কথা নয়।
আমরা অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছি, আমরা ডিজিটালাইজেশনের কথা বলছি, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেলের কথা বলছি, লাখো মানুষের প্রাণ বিসর্জনের স্বাধীনতা যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি এ দেশের মানুষের আস্থা ও প্রতিশ্রæতির কথা বলছি, অথচ এসব কোনো ক্ষেত্রেই আমরা টেকসই উন্নয়নে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন দেখছি না। গত বছরের করোনা মহামারীতে লকডাউন-শাটডাউনে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা মূলধন হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে। এসব মানুষ মধ্য আয়ের তালিকা থেকে ছিটকে নিম্নবিত্ত ও অতি দরিদ্র তালিকায় স্থান পেয়েছে। অথচ এ সময়েও দেশের ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্টে কয়েক হাজার নতুন কোটিপতি নাম যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক মিলিয়ন মানুষের আয় কমে গেলেও সেসব মানুষকে ঠকিয়ে কয়েক হাজার মানুষ নিজেদের আয় বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানে কিছুসংখ্যক মানুষের আয়বৃদ্ধি নয়। আয়বৈষম্য বেড়ে গিয়ে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে, তা সাধারণ দরিদ্র মানুষকে নীরব দুর্ভীক্ষের দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশে বর্তমানে নিত্যপণ্যের অব্যহত মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তেমন একটি নীরব দুর্ভীক্ষাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। শত বছরের দুর্ভীক্ষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, খরা-বন্যায় খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হওয়ার চাইতে খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বন্টন ব্যবস্থায় লুন্ঠন-নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই দরিদ্র মানুষ দুর্ভীক্ষের শিকার হয়েছে। আমাদের দেশে বাম্পার খাদ্য উৎপাদনের পরেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনা। ফসল তোলার ভরা মওসুমে প্রতিবেশী দেশ থেকে নি¤œমানের চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে ধানের মূল্যে ধস নামিয়ে কৃষককে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। আবার লাখ লাখ টন খাদ্যসশ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার পর প্রতিবেশী দেশ হঠাৎ করেই রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মজুদদার-মুনাফাবাজ ব্যবসায়ীদের মূল্যস্ফীতির সুযোগ দিয়ে জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপতৎরতা ধারাবাহিকভাবেই চলছে। পণ্যমূল্য বাড়িয়ে কোটি মানুষের পকেট থেকে প্রতিদিন শতকোটি টাকা মুনাফাবাজদের হাতিয়ে নেয়ার এই অবারিত সুযোগ দরিদ্র মানুষের সুষম উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে চরমভাবে ব্যহত করছে।
দেশে ডিজিটালাইজেশনের কথা খুব জোরের সাথে বলা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে লকডাউনের বাস্তবতা সারাবিশ্বেই মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার জন্য ইন্টারনেট ও অনলাইন সার্ভিসের উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। এই সুযোগে বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বড় অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। মানুষ অনলাইন নির্ভর কেনাকাটা ও পরিষেবার প্রতি ঝুঁকলেও অনলাইন নির্ভর ব্যবসা তথা ই-কর্মাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় কতিপয় ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান দেশের সাধারণ গ্রাহক-ভোক্তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় ই-কর্মাসে গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থার কথা বলা হলেও সেই তৃতীয় পক্ষ নাকি আরেকটি চতুর্থ পক্ষকে সেই দায়িত্ব দিয়েছিল। কথিত সেই চতুর্থ পক্ষ নাকি একটি আনরেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠান এবং ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধেও গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ই-কর্মাসের প্রতারণা ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন গণমাধ্যমের সাথে নাগরিকের নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানি- ভোগান্তির আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে। সাম্প্রতিক সময়ের প্রায় সবগুলো সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব মূল ভূমিকা পালন করেছে। রামু, নাসির নগর থেকে শুরু করে নানুয়ার দিঘীপাড়ে হিন্দু মূর্তির পায়ের উপর কোরআন রাখা বা জেলে পল্লীতে আগুন দেয়ার আগে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্টের ভূমিকা দেখা যায়। গত এক দশকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক তৎপরতায় ফেসবুক পোস্ট বা আক্রমণের নেপথ্যে নেতৃত্বদানকারিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে খুব একটা সফল হয়নি সাইবার গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ-সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার আগে ডিজিটালাইজেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।
এ সপ্তাহে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পটুয়াখালির পায়রা নদীর উপর নির্মিত পায়রা সেতুর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি মেগার প্রকল্প এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল প্রকল্প দ্রæত এগিয়ে চলেছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প চালু হলে দেশের মানুষের চলাচল ও জীবনযাত্রায় বড় ধরণের পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে আশা করা যায়। তবে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দমনপীড়ন, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রমাবনতি, সামাজিক-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে আন্ত:দেশীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের খেলা বন্ধের ঐক্যবদ্ধ জাতীয় রাজনৈতিক প্লাটফর্ম দেখা যাচ্ছে না। দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থান না থাকায় দেশের মেধাবী তরুণরা লেখাপড়া ও কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত তরুণরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। সামুদ্রিক দুর্বিপাকে অনেকের সলিল সমাধি হচ্ছে। অনেকে বিদেশি কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে বিদেশের কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এহেন চিত্র বাংলাদেশের ভাবমর্যাদার জন্য হানিকর। এটা অর্থনৈতিকভাবে প্রাগ্রসর, ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ দাবির সাথে মানানসই নয়। গত জুলাই মাসে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট অ্যাকসেস অ্যান্ড পারফরমেন্স এনালিসিস কোম্পানী ওকলার প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ ১৩৫তম অবস্থান লাভ করেছে। ইন্টারনেটের গতিতে প্রতিবেশী দেশগুলো তো বটেই, এমনকি সিরিয়া, সুদান, উগান্ডা, সোমালিয়া, ইথিওপিয়াও বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রায়োগিক দিক হচ্ছে গতির প্রতিযোগিতা। বিশ্বের সব দেশ থেকে পিছিয়ে থেকেও আমরা ডিজিটালাইজেশনের রাজনৈতিক গলাবাজি শুনছি। গণতান্ত্রিক সূচকে গত একযুগ ধরে বাংলাদেশ হাইব্রিড রিজিম ক্যাটাগরিতে ক্রমশ নি¤œগামী। চলমান করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং করোনা ভ্যাক্সিনেশনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত হতাশাজনক। দেশে আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিহিংসা ও নির্মূলের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদলে সমঝোতা, সম্প্রীতির রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানব পাচার, অর্থপাচার ও বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে এসব বিষয়ের উন্নয়নে কাজ করা সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সর্বোচ্চ দায়িত্ব। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সব দল ও ভোটারদের জন্য অংশগ্রহণমূলক করার কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। সারাদেশে স্থানীয় নির্বাচনের নামে একচেটিয়া, একদলীয় ভোটরঙ্গ চলছে। শত শত ইউনিয়ন পরিষদে বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার এহেন দূরবস্থা দূর করার কার্যকর রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা


আরও
আরও পড়ুন