বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জয়পুরহাটে মারাত্মক ভাবে বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদী জ্বর ও টাইফয়েডের প্রকোপ। এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের। এদিকে আইসিডিডিআরবির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি জয়পুরহাটে গত সাতদিন থেকে কারণ খুঁজতে মাঠে কাজ করছে।
জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর চাপ বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসা নিতে আসছেন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ২২টি। সেখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৪৭জন। শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের বারান্দা এবং করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকেই বাড়তে থাকে টাইফয়েডের প্রকোপ। আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন ও খোলা খাবার খাওয়ার কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে বলে জানান চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই অন্তত ৫০ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশু ও বিভিন্ন বয়সের রোগীরা ছুটে আসছেন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে। ৭-১০ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার সগুনা গ্রামের নয় বছরের শিশু শাহানা ও কাদোয়া ঢোলপাড়া গ্রামের পাঁচ বছরের সুমাইয়া, আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ মহব্বতপুর গ্রামের নয় বছরের সাব্বির হোসেন, সৈকত পাঁচবিবি উপজেলার জীবনপুরের সাদ্দাম। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাতদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। হাসপাতালের বারান্দায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি এলাকার বেশিরভাগ শিশুই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানান তারা।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লাভলী ইয়াসমিন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জনেরও বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ১৪০থেকে ১৭০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন প্রতিদিন। রোগীদের করিডোর ও বারান্দার মেঝেতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদের সঙ্গে আসা লোকজনের ভিড়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইউসুফ আলী এবংশিশু বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা ইয়াসমিন জানান, খোলা খাবার ও পানির কারণে এই রোগ হয়। এজন্য খাওয়া আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বাথরুম থেকে বের হয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও টাইফয়েড হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জানান, এই রোগ খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গত দুই সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১৫০০ রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিনের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি সবাইকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে ।
জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী জানান, এ রোগের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাইকে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তিনি। হঠাৎ করে এই রোগ বেড়ে যাওয়ায় আইসিডিডিআরবি থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এর কারণ খুঁজতে মাঠে কাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।