Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্বল শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের আত্মসমর্পণ

বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৭১/৪ শ্রীলঙ্কা : ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে পরাজিত

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

পরিসংখ্যানকে ভুলে বর্তমান সময়ের আঙিকে তাকালে যে কেউই বলতে পারে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অবস্থান কেমন। একবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবা মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকাটাতো স্রেফ ইতিহাস। সে দলের কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনেও নেই, বাংলাদেশের সেই আগের ভঙ্গুর অবস্থাও নেই। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও বিষয়টি দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট। যেখানে বাংলাদেশ ঠিক ওপরেই অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়ার মতো দল। সেখানে লঙ্কানদের পেছনে শুধু জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড কিংবা নেপালকেই চোখে পড়ে। আরও দূরে তাকালে খুঁজে পাওয়া যাবে এবার বাছাই পর্বে কিছুটা চমকে দেওয়া পিএনজি, ওমান আর সিঙ্গাপুরকেও। আর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে দলটি নেই বাংলাদেশের ধারে-কাছেও। হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটে নেই কোনো চেনা মুখ। তারপরও সেই ‘দুর্বল’ শ্রীলঙ্কার অখ্যাত কয়েকজনের সম্মিলিক প্রচেষ্টায় লজ্জার হার দিয়ে সুপার টুয়েলভ যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশ!

গতকাল শারজায় ফিল্ডিংয়ের সময় হাতে যেন মাখন মেখে নেমেছিলেন লিটন দাস! না হলে এভাবে কেউ ক্যাচ ফসকে দেয়? পুরো শারজাহ স্টেডিয়াম স্তব্ধ। এক বার নয়, দুবার একই ভুল। ক্যাচ ফসকালো তো ফস্কে গেলো ম্যাচটাও। যার খেসারতস্বরূপ হার দিয়েই বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ অভিযান শুরু হলো বাংলাদেশের।

১৭১ রানের বড় সংগ্রহ গড়েও ম্যাচটা জমিয়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংগ্রহটা ১৮.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়েই টপকে গেলো শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেটের জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হলো দাসুন সানাকাদের! অথচ গতকাল দিনের আলোতে দু-একটা ভুল না হলে ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েই ফিরতে পারতেন রিয়াদরা। ক্যাচ মিস, বাজে ক্যাপ্টেন্সি আর বেহিসেবি বোলিংয়ে হারল বাংলাদেশ।

শারজাহর ফ্ল্যাট উইকেটের কথা হয়তো অনেকেই বলবেন। কিন্তু লিটন যেভাবে দুটো ক্যাচ ফেললেন, তারপর আর ম্যাচ জেতা যায় না। প্রথমে আফিফ হোসেনের ভানুকা রাজাপাকসের তুলে দেওয়া ক্যাচ ছাড়লেন লিটন। তার দুই হাতের ফাঁক গলে বল আবার বাউন্ডিারিতেও চলে গেলো। ১৪ রানে জীবন পান রাজাপাকসে। পরে যিনি খেলেন দুর্দান্ত ফিফটির ইনিংস। এরপর ফের সেই লিটনের ভুল। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা চারিথ আসালাঙ্কাকে ফেরানোর সুযোগ যখন সামনে তখন আবারও ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল বাতাসে তুলে দেন আসালাঙ্কা। দৌড়ে আসা লিটনের হাতেই গিয়ে পড়ল বল। কিন্তু হাতে মাখন থাকলে কি আর কিছু ধরা যায়? সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন আসালাঙ্কা। তখন তার রান ৬৩। এরপর সেই দুই ব্যাটসম্যানেই ব্যাটেই জিতল শ্রীলঙ্কা। রাজাপাকসে ৩১ বলে ৫০ রানে ফিরলেও আসালাঙ্কা দলকে জিতিয়ে অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৮০ রানে!

ক্যাচ মিসের সঙ্গে বাজে অধিনায়কত্বও ছিল রিয়াদের। যখন সাকিব বল হাতে সাফল্য পাচ্ছিলেন তখন দুই ওভার করিয়েই সরিয়ে নেন তাকে। খেলা যখন প্রায় শেষ তখন মুস্তাফিজের ফিরেও আর কিছুই করার ছিল না! যদিও নাসুমের দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন কুশল পেরেরাকে (১)। এরপরই ভয় ধরিয়ে দেন চারিথ আসারাঙ্কা-পাথুম নিশাঙ্কা! এই জুটিটা ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। তার একই ওভারে ফেরেন নিশাঙ্কা (২৪) ও আভিষ্কা ফার্নান্দোকে (০)। একইসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিকও বনে গেলেন তিনি। তার শিকার সংখ্যা ৪১। ৩৯ উইকেট শিকারি শহিদ আফ্রিদি নেমে গেলেন দুইয়ে। কিন্তু এরপর জয়ের নায়ক হয়ে উঠা হয়নি সাকিবের।

এর আগে টস ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না বাংলাদেশের। টস হারলেও অবশ্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজে জিতলেও শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের কথা ভেবে অধিনায়ক টসের সময় বলেও ফেললেন টস জিতলে আগে ব্যাটিংই নিতেন তিনি। শাপেবরই হলো। টস হারলেও শুরু থেকেই বাংলেদেশের রান তুলে গেছে দ্রুত। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭২, পরের ১০ ওভারে ৯৯! শেষটাতে এসে ঝড় তুলে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক ৩৭ বলে ৫৭ রান অপরাজিত। ইনিংসে চার ৫টি, ছক্কা ২টি। মাহমুদউল্লাহ ৫ বলে ১০। তাদের হাত ধরেই শেষ ৬ ওভারে আসে ৬৪। চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায় বাংলাদেশ!

তবে রান তোলার এই পথটা সহজ ছিল না। পেসার তাসকিন আহমেদের বদলে একাদশে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে নিয়ে মাঠে নামা দল শুরুতে ছিল সতর্ক। ফর্মে না থাকলেও আরেকটা সুযোগ পেলেন লিটন দাস। তবে এবারও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলেন কোথায়? ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট!

এভাবেই ৬.৩ ওভারে নাঈমের বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ পায় ফিফটি। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেললেও এবার হতাশ করেন সাকিব আল হাসান। দলের সেরা ক্রিকেটার ৭ বলে ১০ করে ফিরলে কিছুটা সময়ের জন্য চুপসে যায় শারজাহর গ্যালারি! তবে লড়ে গেছেন তরুণ নাঈম শেখ। ৬ চারে ৫২ বলে ৬২ রান করা নাঈম শেখকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন এই শ্রীলঙ্কান। কিন্তু অন্যপ্রান্তে ঝড় তুলতে থাকেন অফ ফর্ম কাটিয়ে উঠা মুশফিক। ৩২ বলে চার ৪টি, ছক্কা ২টিতে পূর্ণ করেন হাফসেঞ্চুরি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন তিনি। আহ, ১১ ইনিংস পর ফিফটি। আর ইতিহাস জানাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৪ ইনিংস খেলে এটিই মুশির প্রথম ফিফটি!

সবই যেন বিফলে গেল। ভাল একটা পুঁজি পেয়েও ঠিকঠাক কাজে লাগানো হলো না। হিসেব ছাড়া বোলিং আর ক্যাচ মিসের মহড়া দিলে তো এমনই হয়!



 

Show all comments
  • ash ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ৪:৩৭ এএম says : 0
    AI HOLO BANGLADESH TEAM !! AK GAME E JITLE, PORER GAME E AKDOM TENAYA JAY
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ বাংলাদেশ

৬ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ