২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
অটিজম
স্বাভাবিক সুস্থ আর দশটা শিশুদের মতো শারীরিকভাবে পরিপূর্ণ সক্ষম হলেও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ এবং আচরণগত সমস্যা থাকে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারটিই “অটিজম” নামে পরিচিত। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা অটিজম হলো শিশুদের মানসিক স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া যা উল্লেখযোগ্যভাবে শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ এবং আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে। অটিজম সমস্যাটি অনেকগুলো সমস্যার সমম্বয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকে। একত্রে অনেকগুলো সমস্যা বিরাজ করে বলে এটিকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলা হয়।
ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল (ডিএসএম)-৫ এর নির্দেশনা অনুযায়ী, যে সকল শিশুর জন্মের প্রারম্ভিক থেকে স্থায়ীভাবে সামাজিক যোগাযোগ ও সামাজিক ভাব আবেগ প্রকাশে ঘাটতি এবং সীমাবদ্ধতা, পুনরাবৃওিমূলক আচরণ, আগ্রহ বা কার্যকলাপ বিরাজ করে তাদেরকেই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা অটিজম আক্রান্ত শিশু হিসেবে সনাক্ত করা হয়।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসর্ডার নির্ণয়কারী মানদন্ড সমূহ ঃ
২০১৩ সালের ১৮ মে তারিখে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন দ্বারা প্রকাশিত ডায়াগনস্টিক এন্ড স্ট্যাটিসটিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসর্ডাস (ডিএসএম-৫) এর পঞ্চম সংস্করণ অনুযায়ী অটিজম স্পেকট্রাম ডিসর্ডার নির্ণয়কারী মানদন্ড সমূহ নিম্নরুপঃ
শিশুর মধ্যে বর্তমানে বা পূর্বের ইতিহাস দ্বারা একাধিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ এবং সামাজিক ভাবের বিনিময়ে স্থায়ীভাবে ঘাটতি হিসেবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা সুস্পষ্ট হয় (বৈশিষ্ট্য ১, ২ এবং ৩ অবশ্যই পূরণ করতে হবে) ঃ
সামাজিক- মানসিক (আবেগগত) পারস্পরিকত্বের ঘাটতি বিভিন্ন মাত্রায় থাকে, উদাহরণ স্বরুপ- অস্বাভাবিক সামাজিকতার প্রকাশ, যথোপযুক্ত কথোপকথনে ব্যর্থতা, আগ্রহের ঘাটতি, আবেগ দ্বারা প্রভাবিত করায় অক্ষমতা, আবেগ, ভালোবাসা বা আনন্দের বিষয়সমূহের বিনিময়ে ঘাটতি, সামাজিক ভাবের আদান-প্রদানের সূচনা ও শেষ করায় ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হওয়া।
নৈমিত্তিক যোগাযোগমূলক আচরণের ও সামাজিক ভাবের বিনিয়মে ঘাটতির বিভিন্ন মাত্রাসমূহ, উদাহরণ স্বরুপ- মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগের মধ্যে সম্বনয়হীনতা, চোখে চোখ রাখায় ও শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের ভাষা বুঝায় অক্ষমতা; চোখের চাহনি ও অঙ্গভঙ্গিতে অস্বাভাবিকতা থাকা, অঙ্গভঙ্গি বোঝার এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগের অভাব, মুখের অভিব্যক্তি ও অমৌখিক যোগাযোগের পরিপূর্ণভাবে অভাব পরিলক্ষিত হওয়া।
যেকোন ধরনের সম্পর্ক স্থাপন, সম্পর্কগুলো বজায় রাখা ও বুঝতে পারায় বিভিন্ন মাএায় সমস্যা হওয়া, উদাহরণস্বরুপ- ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে সম্মিলিত আচরনে সমন্বয় সাধনে ঘাটতি ও আচার আচরণ বুঝতে সমস্যা হওয়া, কল্পনাপ্রবণ খেলাগুলোতে অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা, সমবয়সীদের সাথে খেলাধূলায় অনাগ্রহী হওয়া, বন্ধু তৈরীতে সমস্যা বা অনাগ্রহী হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হওয়া।
শিশুর মধ্যে বর্তমানে বা পূর্বের ইতিহাস দ্বারা একাধিক প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, আগ্রহ এবং ক্রিয়াকলাপগুলোর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে যেকোন দুইটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা সুস্পষ্ট হওয়াঃ
একগুয়ে বা পুনরাবৃত্তিমূলক অঙ্গভঙ্গি, যেকোন বস্তু বা বাচনভঙ্গিতে পরিলক্ষিত হতে পারে উদাহরণ স্বরুপ- (একগুয়ে শরীরবৃত্তীয় নাড়ন, খেলনা সমূহ সারিবদ্ধভাবে সাজানো, ঘূর্ণীয়মান বস্তুতে আসক্তি, একই কথা বারংবার বলা বা স্বীয় অমূলক বাক্যাংশে আবদ্ধ থাকা)।
অভিন্নতার উপর আস্থা, একই রুটিনে অভ্যস্ততা অথবা আনুগতিক আনুগত্য রীতিনীতির অনুকরণীয়তা, মৌখিক-অমৌখিক আচরণ আড়ষ্ঠতা উদাহরণ স্বরুপ- (অতি ক্ষুদ্র পরিবর্তনগুলির ক্ষেত্রে চরম দুশ্চিন্তা ও বিরক্ত হওয়া, রুপান্তরের সঙ্গে অস্বস্তিবোধ করা, অনমনীয় গতানুগতিক চিন্তাভাবনা, অভিবাদন ধর্মানুষ্ঠান নিদর্শন অনমনীয় আনুগত্য, প্রতিদিন একই রুটিনে থাকা বা নিয়মমাফিক প্রতিদিন একই খাবার খাওয়া)।
অত্যাধিক সীমাবদ্ধ,তীব্র অস্বাভাবিক সুনির্দিষ্ট আগ্রহে আবদ্ধতা ও অনুসরণে অস্বাভাবিকতা( উদাহরণ স্বরুপ- অস্বাভাবিক বস্তুর সাথে দৃঢ় শক্তিশালীভাবে সংযুক্ত থাকা, আগ্রহের প্রতি অতিব তীব্রতা বা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকা)।
স্নায়ুবিক ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলো অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত মাএায় তীব্র বা ক্ষীণ থাকা, পারিপ্বার্শিক অবস্থানে থাকা স্নায়ুবিক ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর বস্তুর প্রতি আগ্রহ থাকা উদাহরণস্বরুপ-(ব্যথা বা তাপমাত্রার অনুভূতিতে চরম অস্বাভাবিকতা, নির্দিষ্ট শব্দ বা স্পর্শ অনুভূতির প্রতি অবাস্তব আসক্তি ও প্রতিক্রিয়া, অযথাই হাসা বা কোন বস্তু অযথাই স্পর্শ করা বা গন্ধ নেয়া, কোন আলো বা ঘূর্ণীয়মান বস্তুর দেখার জন্য দর্শন ইন্দ্রিয়ের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করা)।
উপসর্গগুলো ও লক্ষণগুলো অবশ্যই শিশুর ক্রমবিকাশের প্রারম্ভিক কালীন সময়ে বিদ্যমান থাকতে হবে ( কিন্তু যতক্ষণ না সামাজিক চাহিদার সীমা বা ক্ষমতা অর্জন করে ততক্ষণ এগুলো স্পষ্ট নাও হতে পারে বা বিরুপ বা বিকৃতভাবে পরবর্তীতে সামাজিক কৌশলগুলো পরিলক্ষিত হতে পারে।
উপসর্গগুলো ও লক্ষণগুলো চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই শিশুর বর্তমানে কার্যকরী সামাজিক, পেশাগত বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বৈকল্যতা সৃষ্টি করবে।
উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো ও লক্ষণগুলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা বা সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ও অটিজম স্পেকট্রাম ডিসর্ডারের আর্বিভাব প্রায়ই একত্রে ঘটে থাকে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ও অটিজম স্পেকট্রাম ডিসর্ডারের রোগ নির্ণয় শিশুর ক্রমবিকাশের ধারা অনুসারে পৃথকভাবে সঠিক উপায়ে করতে হবে। (সংকলিত)
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদেরকে সঠিকভাবে সনাক্ত ও চিকিৎসা সেবায় সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আপনার অটিজমে আক্রান্ত শিশুটির সঠিকভাবে সনাক্তকরণ ও অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাহাত খান
জুনিয়র কনসালন্টেট, অকুপেশনাল থেরাপি ও ইন্চার্জ অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা
শিশুবিভাগ, সিআরপি, সাভার, ঢাকা।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭১১০৩৯৪৮৬
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।