নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
অবশেষে আশঙ্কাটাই সত্যি প্রমাণিত হলো। মিরপুরের উইকেটের সুবিধা পেতে পেতে অভ্যস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হোঁচট খেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই। আজ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের কাছে হেরে গেলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার আগেই বিদায় নিতে হবে বাংলাদেশকে! প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের পর এমন শঙ্কাতেই বাংলাদেশ দল। অথচ এই বিশ্বকাপ মিশনের আগে টানা তিনটি সিরিজ জয়ের পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই ওমানে পাড়ি জমিয়েছিল দলটি!
জিম্বাবুয়ে থেকে ২-১ ব্যবধানে জিতে ফিরে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকেও ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল এই দলটিই। অথচ, গতকাল ম্যাচের শুরুতেই সাইফউদ্দিনের ধাক্কা, মেহেদী ও সাকিবের ঘূর্ণি; ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল স্কটল্যান্ড। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষ করতে পারা আর টেনেটুনে ১০০ রান করাই যেন মনে হচ্ছিল স্কটিশদের জন্য বহুদূরের কোনো লক্ষ্য। তখন দলের হাল ধরে ক্রিস গ্রিভস। মার্ক ওয়াটের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়ে প্রথমে ১০০ রান পার করে দিয়েছেন। ২৮ বলে ৪৫ রানে দলকে এনে দেন ১৪০ রানের লড়াকু স্কোর। ১৪১ রানের টার্গেট খুব একটা বড় চিন্তার কারন হবার কথা ছিলনা বাংলাদেশের জন্য। অথচ জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই স্কটিশ বোলিংয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ ওভার ফুরিয়ে যাওয়ার আগে ৭ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছিল ১৩৪ রান। দলের অভিজ্ঞ তিন সেনানী সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ছাড়া আর কারো ব্যাটেই আসেনি রান। তবে তাদের নামের পাশে বলের বিপরীতে রান ছিল বড্ড বেমানান। পরিণতি, ৬ রানের কলঙ্কজনক হার।
মাত্র অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে সেই দলটিই কি-না স্কটল্যান্ডের মতো আন্ডারডগের কাছে হেরে গেছে? তাহলে সমস্যাটা কোথায়? তার উত্তর কিছু দিন আগেই একটি অনুষ্ঠানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দিয়েছিলেন যথার্থই। তিন সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসে বুঁদ না হয়ে অভিজ্ঞ চোখে সেদিন দেশের এই পোস্টার বয় দেখেছিলেন ক্রিকেটের সর্বনাশই। অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এমন উইকেটে আর কয়েকটা ম্যাচ খেললে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে।’ এমন উইকেট বলতে তিনি বুঝিয়েছিলেন বাংলাদেশ হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটকেই। যে উইকেট নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘ দিনের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিগত কয়েক বছর ঘরেই শুধুমাত্র দলকে জেতানোর টার্গেট নিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে নিজেদের পছন্দমতো উইকেট বানিয়ে চলেছে যে উইকেট কোনভাবেই আন্তর্জাতিক মানদন্ডের মধ্যে পড়েনা। বিশেষকরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশকে আরও বেশি পরিপক্ক করার জন্য যথার্থ আন্তর্জাতিক মানের উইকেট তৈরির কথাটি কখনোই বিসিবি কর্মকর্তাদের মাথায় আসেনা। যার খেসারত দলটিকে দিতে হচ্ছে কড়ায় গন্ডায়। মিরপুরের ঘরোয়া মাঠে নিজেদের পছন্দের উইকেটে সবাইকে সিরিজ হারিয়ে অভিনন্দন আর উৎসবের জোয়ারে ভেসে যাওয়াটাকেই বিসিবি ধারাবাহিকভাবে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর সমালোচনাকে বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে বিসিবি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার আগেই একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের জন্য। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের সময় বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে হলেও বিসিবির উচিত ছিল মিরপুর স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মানের স্পোটিং উইকেট তৈরি করা। সেটা করা হলে ম্যাচের ফলাফল যাইহোক না-কেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অন্তত মারমুখী ব্যাটিং করার একটা সুযোগ পেতো যেটা হতো বিশ্বকাপের আগে দলের প্রকৃত অনুশীলন। কিন্তু বিসিবি সেদিকে কর্ণপাতই করেনি। দেশের ক্রিকেটকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। তা-না হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভয়াবহ সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই মিরপুরে নিজেদের পছন্দমতো বানানো উইকেট, ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো খেলার মহোৎসব এবং আম্পায়ারদের নির্লজ্জ্ব পক্ষপাতিত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে অনেক বড় প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলেন বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। অক্টোবর-নভেম্বরে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব আসরে থাকবে না এমন উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো সিরিজেই ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে যেখানে স্পোর্টিং উইকেটই প্রাধান্য পায় আইসিসি ইভেন্টে সেটা পাবে আরো বেশি করে। আর তাই এ দুটি সিরিজকে সামনে রেখেই স্পোর্টিং উইকেটের আবদার ছিল ডমিঙ্গোর। এমনকি নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগেও ১৫০-১৬০ রানের উইকেট আশা করেছিলেন এই প্রোটিয়া কোচ। তবে তা পাননি বলে সম্প্রতি আক্ষেপ ঝরেছে তার কণ্ঠে। অথচ আমাদের আছে গামিনি ডি সিলভার মতো অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ পিচ কিউরেটর। অথচ মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট তৈরিতে কিউরেটরের কোন স্বাধীনতা নেই। বিসিবি কর্তাদের ইচ্ছা ও নির্দেশমতোই তাকে উইকেট বানাতে হয়।
মিরপুরের বাইশগজ বরাবরই মন্থর বলে একটা কথা চালু আছে। উঁচু-নিচু বাউন্স, বল থেমে আসার জন্য দ্বিধা নিয়ে খেলতে হয় ব্যাটসম্যানদের। মূলত ২০১৭ সালে হোম অব ক্রিকেটের মাঠ সংস্কারের পর থেকেই মাঠ সবুজের গালিচা তকমা হারিয়ে বাদামি রং ধারণ করেছিল নতুন করে সাজানোর পর। আউটফিল্ড এর অবস্থা বাজে হয়ে পড়েছিল। সেসময় সিরিজ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়া আউটফিল্ড নিয়ে প্রকাশ্যেই অভিযোগ জানায়। তাতে মাঠের ভাগ্যে জোটে আইসিসির দু’টি ডিমেরিট পয়েন্টও। এখানে খেলতে এসে, কিংবা ম্যাচ দেখে মিরপুরের উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন দেশি-বিদেশি তারকাদের অনেকেই। গত বিপিএলেই উইকেট নিয়ে সমালোচনা করে জরিমানা গুণেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে এনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেট এইভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিসিবি কর্তারা। এ ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফল স্কটল্যান্ড ও তার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হার। এর দায়টা এককভাবে নিতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেই। উইকেট নির্মাণের দায়িত্ব পিচ কিউরেটরের। তবে বোর্ডের নির্দেশই বিশ্বস্ত আজ্ঞাবহকারীর মতো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দুই সিরিজেই নিম্নমানের পিচ তৈরি করেছেন তিনি। আর এমনটি করে সিরিজ জয়ের বাহবা নিতে গিয়ে দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ যে ডেকে এনেছেন বিসিবিকর্তারা, তার খেসারত গোণার পর্বতো শুরু হয়েই গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।