নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দীর্ঘ দিন ধরেই চূড়ায় বসে লাসিথ মালিঙ্গা। লঙ্কান কিংবদন্তি ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকে তাকে ছোঁয়ার অপেক্ষা সাকিবের বহুদিনের। ক্ষণ গণনা চলছিল গত মাসের নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে। ওই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের পর একটি মাইলফলকের জন্য ছিল এক উইকেটের অপেক্ষা, আরেকটির জন্য দুই উইকেট। কিন্তু পরের দুই ম্যাচ যায় নিস্ফলা, শেষ ম্যাচে বিশ্রাম পেয়ে একাদশের বাইরে। অবশেষে কাক্সিক্ষত সেই মাইলফলকের দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান। তা-ও আবার বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই! বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শীর্ষ উইকেটশিকারী এখন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। ৮৪ ম্যাচ খেলে ১০৭ উইকেট নিয়ে অবসরে গেছেন মালিঙ্গা। সাকিব তাকে ছাড়িয়ে গেলেন ৮৯ ম্যাচে। এই পথচলায় মুকুটে যুক্ত করেছেন নানন রঙিন পালক।
তবে দিনটি উদযাপনের কোনো উপলক্ষ্যই পাননি এই অলরাউন্ডার। স্কটল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটের লজ্জার হারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছেন বাংলাদেশ। সাকিব-মেহেদী-মুস্তাফিজদের আলো ছড়ানো বোলিংয়ে স্কটিশদের ১৪০ রানে গুটিয়ে দিয়েও বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে ৬ রানে হারের কলঙ্ক নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা (১৩৪/৭)।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটেও সেরাদের একজন। সবুজ গালিচায় বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ব্যাট-বল হাতে গড়েছেন অজস্র রেকর্ড। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কত কিছুতে তিনিই প্রথম, কত রেকর্ডের যে চূড়ায় বসেছেন। এবার তার অর্জনে যোগ হলো বেশ কয়েকটি সাফল্য। গতকালও যদিও বাড়তে যাচ্ছিল অপেক্ষা। প্রথম দুই ওভারে উইকেটশূন্য। তবে কিপটে বোলিংয়ে মাত্র ৮ রান দিয়ে অবশ্য চাপ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। প্রথম বলে ১ রান দিলেন। স্ট্রাইকে এলেন বেরিংটন। এরপরই তো স্মরণীয় সেই দুটি বল। সীমানায় রিচি বেরিংটনকে আফিফ হোসেনের তালুবন্দী করিয়ে পেয়েছিলেন প্রথম উইকেট। দুই বল পরই মাইকেল লিস্কও একইভাবে সাকিবের শিকার লিটন দাসের হাতে। আর তাতেই ছাড়িয়ে যান মালিঙ্গাকে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এই জোড়া উইকেটে আরও একটি মাইলফলকে নাম লেখা হয়ে যায় সাকিবের। গড়েন অনন্য একটি কীর্তিও। তিন সংস্করণ মিলিয়ে সাকিবের উইকেট এখন ৬০০টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট শিকারি ২৩তম বোলার তিনি, তবে বাঁহাতি স্পিনে তিনি মাত্র দ্বিতীয় স্পিনার। ৭০৫ উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবার ওপরে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি।
তবে একটি জায়গায় সাকিব অনন্য। ব্যাট হাতে ১২ হাজারের বেশি রানও করেছেন তিনি। ১২ হাজার রান আর ৬০০ উইকেটের যুগলবন্দী নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের আর কারও! ১২ হাজার তো আসলে অনেক বেশি, ১০ হাজার রানও নেই আর কারও। ৬০০ উইকেটের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি রান এখন ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেবের। ৬৮৭ উইকেটের সঙ্গে তার রান ৯ হাজার ৩১। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্তত ১০ হাজার রান করেছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের পর সবচেয়ে বেশি উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের, ৫৭৭টি।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি ও সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটে এই ফরম্যাটে উইকেটের সেঞ্চুরি আছে কেবল এই দুজনেরই। ৯৯ উইকেট নিয়ে শত উইকেটের অপেক্ষায় নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি। ৯৮ উইকেট নিয়ে অবসরে যাওয়া পাকিস্তান কিংবদন্তি শহিদ আফ্রিদী আছেন চারে। আর চমক জাগিয়ে অল্প দিনেই ৯৫ উইকেট নিয়ে তাদের কাতারে সামিল রশিদ খান। ৫১ ম্যাচে এই কীর্তির সামনে থাকা এই আফগান লেগির সামনেও সুযোগ আছে এই বিশ্বকাপেই সাকিবদের ছোঁয়ার!
২০০৬ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রথম উইকেটটা নিয়েছিলেন সাকিব। ৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। প্রথম ৫০ উইকেট নিয়েছিলেন ৪২ ম্যাচ ও ১০ বছর সময় নিয়ে। পরের ৫০ উইকেট পেতেও তার খেলতে হয়েছে ৪২ ম্যাচ। তবে পরের ৫০ উইকেট পেতে সাকিবের লেগেছে মাত্র ৫ বছর।
এবার অনন্য আরেক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব। এবারের আসরে আর মাত্র ৮ উইকেট নিতে পারলেই বিশ্বকাপে শীর্ষ উইকেট শিকারি হয়ে যাবেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৩৪ ম্যাচ খেলে ৩৯ শিকারে সর্বোচ্চ উইকেট পাকিস্তানের বুমবুম তারকা আফ্রিদির। ৩১ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নিয়ে দুইয়ে মালিঙ্গা। ২৩ ম্যাচে ৩৬ উইকেট শিকারী পাক স্পিনার সাঈদ আজমল আছেন তিনে। আরেক লঙ্কান সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও পাকিস্তানের ওমর গুল সমান ৩৫ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ সংখ্যা কম থাকায় এগিয়ে ম্যাথুজ। গতকালের দুটি নিয়ে সাত নম্বরে থাকা সাকিবের উইকেট সংখ্যা যে দাঁড়ালো ৩২-এ!
বিশ্বমঞ্চে ১০ উইকেট নেওয়ার কাজ খানিকটা কঠিনই। তবে পুরনো পরিসংখ্যান সাকিবকে উদ্দীপ্ত করতেই পারে! ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিব পেয়েছিলেন ১০ উইকেট। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে বাঁহাতি স্পিনার পেয়েছিলেন ৮ উইকেট। পরপর দুই আসরে সাকিবের এমন বোলিং পারফরম্যান্স আশা জাগাচ্ছে, এবারই হয়তো কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির আসনে বসে পড়বেন সাকিব। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টির সব বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছেন সাকিব। ২৬ ম্যাচে গড় (৬.৬৪) আর ইকোনমিও যে ঈর্ষনীয় (১৯.৫৩)!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।