পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গতকাল মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হয়েছে সপ্তম টি-২০ বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ হিসেবে অভিহিত টি-২০ বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরটি বসেছিল ২০১৬ সালে। তখন আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দুই বছরের পরিবর্তে চার বছর পরপর টি-২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। করোনাকারণে যথাসময়ে সেটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতে এই আসরটি বসার কথা থাকলেও করোনার তৃতীয় ঢেউ দেশটিতে আঘাত হানায় শেষ পর্যন্ত ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৭ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২১ দিন চলবে এই আসর। এতে ১৬টি দল অংশ নেবে। দুই দেশের চার ভেন্যুতে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৪৫টি। প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হবে চারটি দলকে। অবশিষ্ট ১২ দল নিয়ে হবে সুপার টুয়েলভ রাউন্ড। স্মরণ করা যেতে পারে, ক্রিকেটের পাঁচদিনের টেস্ট ও ৫০ ওভারের একদিনের টুর্নামেন্টের পর টি-২০ টুর্নামেন্ট আত্মপ্রকাশ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, ভবিষ্যতে টেস্ট ও ওডিআই’র জনপ্রিয়তা পড়ে যেতে পারে। আরো বাড়তে পারে টি-২০’র প্রিয়তা। যা হোক, ক্রিকেটামোদীদের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিকর ও আনন্দের বিষয় যে, বিলম্বে হলেও এবং কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও বিশ্বব্যাপী করোনাসংক্রমণ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে টি-২০ বিশ্বকাপের আসরটি অবশেষে শুরু হতে পেরেছে। আমরা এই টুর্নামেন্টের সফল অনুষ্ঠান ও সমাপ্তি কামনা করি।
ক্রিকেট, সন্দেহ নেই, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রিয় মানুষের সংখ্যা অগণন। তো সত্তে¡ও স্বীকার করতে হবে, ক্রিকেট নেশন হিসেবে খ্যাত দেশের সংখ্যা হাতে গোনা। সেই স্বল্প সংখ্যক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এটাও কম আত্মশ্লাঘার বিষয় নয়। একদা বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। বলতে দ্বিধা নেই, সেই স্থান এখন দখল করে নিয়েছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরম্যাটে অত্যন্ত কম সময়ে একের পর এক কৃতিত্ব প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে ক্রিকেট নেশন হিসেবে দেশের যেমন প্রতিষ্ঠা ঘটছে, তেমনি জনগণ পর্যায়ে তা বিপুল প্রিয়তা অর্জন করেছে। যে কোনো বিজয় কিংবা বড় দলকে হারানোর ঘটনা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে যেভাবে উদ্বেলিত করে, আনন্দে অতিশয্যে ভাসিয়ে দেয়, তা থেকে বুঝা যায়, ক্রিকেট এ দেশে কতটা জনপ্রিয়। টি-২০’র চলমান আসরে বাংলাদেশ দল কেমন করবে, তা নিয়ে ভাবনা স্বাভাবিক। সবাই আশা করে, দল যেন ভালো করে। ভালো যে করবে, তেমন একটা ধারণা সঙ্গতকারণেই করা যায়। টি-২০ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল টানা তিনটি সিরিজ জয় করেছে। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। ২-১, ৪-১, ৩-২ ব্যবধানে তিনটি সিরিজ জেতার এই হিসাবটি বাংলাদেশ দলকে উজ্জীবিত করবে, সেটা বলাই বাহুল্য। ক্রিকেটের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জেতা চাট্টিখানি কথা নয়। তাদের হারানোর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ দল তার শক্তি ও সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। এটা যেমন দলের অনুপ্রেরণার একটি দিক, তেমনি এ কথাও মনে রাখতে হবে, ওমানে বাছাই পর্ব পার হয়েই তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার টিকিট পেতে হবে। প্রবল আত্মবিশ্বাস, কুশলীনৈপূণ্য ও দৃঢ়চিত্ততা বিজয় অর্জনের নিয়ামক। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ দল এই নিয়ামকগুলো ভালোভাবে প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে।
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। বলা হয়, এটা গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। আসলে দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে জিতবে, আগাম তা বলা যায় না। তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী দলটিও দুর্বল দলটির কাছে হেরে যেতে পারে। ক্রিকেটে হরমামেশাই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। চলতি টি-২০ বিশ্বকাপের আসরেও এমন আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। খেলায় হারজিত থাকবেই। তবে ভালো খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দল ভালো খেলা উপহার দেবে, এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যদি উঠতে পারে তবে আরো বেশি কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব। বাংলাদেশ দল তারুণ্য নির্ভর। তবে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক প্রমুখের মতো অভিজ্ঞ ও বিশ্বমানের ক্রিকেটারও রয়েছেন। তরুণদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দেয়া ছাড়াও এই অভিজ্ঞ ও দক্ষ ক্রিকেটারদের ওপর ম্যাচ জেতার বিষয়টি বিশেষভাবে নির্ভর করছে। বিজয়ের জন্য তারা সবকিছু উজাড় করে দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। ক্রিকেটাররা দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। দেশের সুনাম, সুখ্যাতি ও পরিচিত বেড়েছে তাদের কারণে। পক্ষান্তরে দেশও তাদের অনেক কিছু দিয়েছে। সম্মান, মর্যাদা, অর্থ ইত্যাদি কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। এই প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটাররা তাদের সর্বোচ্চটা দেবেন, সেটাই কাম্য। বর্তমান টি-২০ বিশ্বকাপ দলের কারা আগামী টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবেন, কেউ বলতে পারে না। ধরে নিতে হবে, এটাই তাদের শেষ টি-২০ বিশ্বকাপ। ধরে নিয়েই তাদের পারফর্ম করতে হবে। কোনো মান-অভিমান, দ্ব›দ্ব-বিরোধ যেন তাদের প্রভাবিত করতে না পারে, সেদিকে তাদের খেয়াল রাখতে হবে। ক্রিকেটে ছন্দটা ধরে রাখা বড় কথা। এটা ধরে রাখতে পারলে সাফল্য অধরা থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।