পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের দুর্দশার অন্ত নেই। এখানে বসবাসকারি কয়েক লাখ লোক সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। ভাঙাচোর রাস্তা, পানিবদ্ধতা, সড়কে বাতি না থাকা, বর্জ্য ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা ও পয়ঃনিস্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ওয়ার্ডগুলো। বলা যায়, একটি বসবাস অনুপযোগী এলাকায় পরিণত হয়েছে। আশা করা হয়েছিল, নতুন ওয়ার্ডগুলো সিটি করপোরেশনের সাথে যুক্ত হলে দ্রুত এর উন্নয়ন হবে এবং মূল শহরের অংশে পরিণত হবে। এলাকার মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটবে। তবে তাদের এ আশা পূরণ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার একটি মেগা প্রকল্প উত্তর সিটি করপোরেশন হাতে নিলেও বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের সাথে যুক্ত হওয়া অনুন্নত এই এলাকাগুলোর উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় গত বছরের ১৪ জুলাই। প্রকল্পটি পাস হওয়ার ১৫ মাসের মধ্যে ছাড় হয়েছে মাত্র ৯৪ কোটি টাকা। পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়ায় এলাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় কেন অর্থছাড় করছে না, তার কোনো উত্তর দিতে পারছেন না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছেন, অর্থমন্ত্রণালয় কেন অর্থ ছাড় করছে না, তা আমাদের প্রশ্ন করে কি লাভ। অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ প্রশ্ন করুণ। তারা বলেছেন, কেন উন্নয়ন হচ্ছে না, জনগণের এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমরা দিতে পারি না। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বলেছেন, আমাদের আশপাশের ওয়ার্ডের উন্নয়ন হচ্ছে, অথচ আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে না। আমাদের কাছে খারাপ লাগে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করলেও মেয়র আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অর্থমন্ত্রণালয় শিঘ্রই অর্থ ছাড় করবে। এরপর কাজ শুরু হবে। ধীরে ধীরে পাল্টে যাবে এসব এলাকার চিত্র। ঢাকার অন্যান্য এলাকার চাইতে উন্নয়ন ও সুপরিকল্পিত হবে নতুন ১৮ ওয়ার্ড। মেয়র আশার কথা শোনালেও, এসব এলাকার মানুষ তাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কবে ভোগ করতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশে প্রকল্পের অর্থছাড়ে বিলম্ব বা গাফিলতির বিষয়টি নতুন নয়। জনসম্পৃক্ত অনেক প্রকল্পের কাজই অর্থসংকটের কারণে স্থবির হয়ে থাকে। এতে জনদুর্ভোগের সীমাপরিসীমা থাকে না। নতুন ১৮ ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়নের কথা শুনি। তবে সে উন্নয়নের ছোঁয়া জনগণের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে বছরের পর বছর লেগে যায়। আশা করা হয়েছিল, নতুন ওয়ার্ডগুলো রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত হলে এখানের জীবনমানের যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনি শহরের ওপর থেকে কিছুটা হলেও চাপ কমবে। দেখা যাচ্ছে, প্রকল্প নেয়া এবং অর্থবরাদ্দ হলেও তাতে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াত এবং বসবাসের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এসব এলাকা থেকে মূল শহরে যাতায়াত শুরু করেছে। তাদের এই যাতায়াতের পথ এতটাই ভঙ্গুর যে তা দিয়ে চলাচল এক প্রকার অসম্ভব। এতে তাদের শিক্ষাজীবন যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি এলাকার মানুষের ভোগান্তিও চরমে উঠেছে। সিটি করপোরেশনের এলাকা, অথচ এ এলাকার মানুষ তার সুবিধা থেকে মাসের পর মাস ধরে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। শুধু নতুন ওয়ার্ডই নয়, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখন রাজধানীর সড়ক দিয়ে চলাও দায় হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় মূল সড়কের সিংহভাগ দখল হয়ে রয়েছে। সরুগলির মতো সড়ক পথে যানবাহন চলতে গিয়ে সীমাহীন যানজটে নগরবাসী নাকাল হয়ে পড়ছে। কবে তাদের এই দুর্ভোগ লাঘব হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এমনিতেই অনেক আগে রাজধানী বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তা বাসযোগ্য করে তোলার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং দিন দিন বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ শহরের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। অথচ আমরা কয়েক বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। রাজধানীর এই চিত্র যদি বজায় থাকে, তাহলে কি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না?
সরকার বড় বড় মেগাপ্রকল্পের কাজ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে নিলেও চলমান জনসম্পৃক্ত প্রকল্পগুলোকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তা নাহলে, অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থছাড়ে গড়িমসির কারণে উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ থেমে থাকবে কেন? মাসের পর মাস এ এলাকার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বরাদ্দকৃত অর্থছাড় দিতে অর্থমন্ত্রণালয়ে অসুবিধা কোথায়? এলাকার উন্নয়নে বর্তমান মেয়র ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তারা বরাদ্দকৃত পর্যাপ্ত অর্থছাড় না হওয়ার কারণে উন্নয়ন কাজ শুরু করতে পারছেন না। আমরা মনে করি, নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু করে এলাকার লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে দ্রুত অর্থছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসের পর মাস এলাকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগের শিকার হবে, সেটা কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।