Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মসজিদ-মাদরাসার পাশে ‘ময়লার ডিপো’

ডিএসসিসির পূর্ব নন্দীপাড়া এলাকা ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, লেখাপড়া ব্যাহতের আশঙ্কা ৩ শতাধিক মাদরাসা শিক্ষার্থীর

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পূর্ব নন্দীপাড়া এলাকায় পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের কথা বলে জায়গা নিয়ে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ময়লার ডিপো। নির্মাণাধীন ওই ময়লার ডিপোর অনতিদূরে রয়েছে মসজিদ ও মাদরাসা। বসতবাড়ি ও মসজিদ-মাদরাসার পাশে ময়লার ডিপো নির্মাণে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। এব্যাপারে স্থানীয় ৫ শতাধিক বাসিন্দার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র বরাবর। আবেদনপত্রের মাধ্যমে অভিলম্বে ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ বন্ধ করে সেখানে একটি পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের অনুরোধ করা হয়।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই এলাকার ১০০ গজের মধ্যে রয়েছে একটি মসজিদ ও মাদরাসা। এই মাদরাসায় লেখাপড়া করে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী। এখানে ময়লার ডিপো হলে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করা দূরহ হয়ে পড়বে। তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এখানে নন্দীপাড়া ও আশপাশের এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য একটি পানির পাম্প ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের কথা বলেন। এমনকি কাউন্সিলর আজিজুল হক শুক্রবার জুমার দিনে মসজিদের মুসল্লিদের সামনে প্রতিশ্রুতি দেন এলাকার স্বার্থে এখানে পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হবে। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে স্থানীয়রা একটি জায়গা খুঁজে বের করেন। যেখানে পাম্প অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলে সকলেরই সুবিধা হবে। পরবর্তীতে কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে জায়গা নির্ধারণ করা হলে কাউন্সিলর বিষয়টি গোপন করে ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) যেখানে ময়লার ডিপো নির্মাণের কার চলছে। সেই স্থনটি মূলত একটি পুরোপুরি আবাসিক এলাকা। চারপাশে রয়েছে আবাসিক বসবাসের জন্য বহুতল বাড়িঘর। বাসাবো থেকে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় যাওয়ার মূল সড়ক। সড়কের পাশে রয়েছে নানাবিধ পণ্যের দোকান। এই ব্যস্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গন্তব্যে চলাচল করে। এলাকাটি আবাসিক হওয়ায় রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত লোকজন এখানে বসবাস করেন। কিন্তু মূল সড়কের পাশে এমন স্থানে ময়লার ডিপো নির্মাণের কারণে এলাকাবাসীকে পড়তে হবে বিপাকে। ময়লার ডিপো নির্মাণ হলে দুর্গন্ধে এখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে স্থানীয়দের জন্য।
মাদরাসা শিক্ষকরা জানান, আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম আমাদের এলাকায় একটি পানির পাম্প ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে। পানির পাম্প ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলে তারা কাজ শুরু করে। কিন্তু পড়ে জানতে পারি এই জায়গায় ময়লার ডিপো করা হবে। এই খবর জনার পর এলাকার মানুষ খুবই আশাহত হই। আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এঘটনার মাধ্যমে এলাকার মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা চাই অভিলম্বে এই ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হোক। এই এলাকার দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা সমাধানের জন্য পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হলো আমাদের আপত্তি নেই।
এই এলাকার মো. ইয়াসিন হোসাইন বলেন, আমরা চাই অভিলম্বে ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ বন্ধ হোক। আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এখানে ময়লার ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। এই এলাকার সবারই একই চাওয়া যাতে এই কাজ বন্ধ করা হয়। এখানে ময়লার ডিপো হলে আমাদের বসবাসের অনেক অসুবিধা হবে।
বায়তুল আমান মদিনাতুল উলুম মাদরাসার কোষাধ্যক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, জুমআর দিনে মসজিদে দাঁড়িয়ে এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র করার প্রতিশ্রুতি দেয় কাউন্সিলর আজিজুল হক। তার কথায় আমরা জায়গা উদ্ধারের জন্য কাজ করি। কারণ তিনি এই এলাকার জনপ্রতিনিধি। তার সহযোগিতায় এলাকার মানুষের জন্য নির্মাণ করা হবে একটি পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তিনি সবাইকে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই স্থানে ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ শুরু করে এলাকার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। এই এলাকার পূর্বদিকে সরকারি অনেক জমি আছে। যেখানে এখনো কিছু করা হয়নি। এমনকি সেসব এলাকায় কোন বসতিও নেই, সেই এলাকায় ময়লার ডিপো করা হলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
বায়তুল আমান জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক রফিক হামজা শেখ বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুল হক এই মসজিদে জুমার দিনে এসে মুসল্লিদের জানিয়েছিলেন একটি জায়গা হলে পূর্ব নন্দীপাড়া এলাকায় পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে একটি জায়গা নির্বাচন করা হয়। সেই জায়গায় পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এই মোতাবেক উল্লেখিত জায়গায় কাজও শুরু করা হয়। কাজ শুরুর পর এলাকার লোকজনের মনে প্রশান্তি আসে এবার হয়তো নন্দীপাড়া ও আশপাশের এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু কাজ শুরুর পর যখন চার পাশের পিলার দাঁড়ায় তখন এলাকাবাসী বুঝতে পারে যে এখানে অন্য কিছু হচ্ছে। তখন আমরা জানতে পারি এখানে ডিএসসিসির ময়লার ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। এমনভাবে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে এজন্য আমরা এর প্রতিকার চাই। এবং খুব দ্রুত যাতে এই ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয় এটাই আমাদের দাবি। এব্যাপারে আমরা ডিএসসিসি মেয়র বরাবর আবেদনপ্রত্র দিয়েছি।
বায়তুল আমান মদিনাতুল উলুম মাদরাসা ও মসজিদের ইমাম, খতিব ও মাদরাসার মোহতামিম মুফতি মো. জাকির হোসাইন বলেন, আমরা সরকারের উন্নয়ন কাজের বিরোধিতার করছি না। আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য ও স্থানীয় মানুষের স্বার্থে প্রতিবাদ করছি। আমরা এই এলাকায় একটি পানির পাম্প অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কাউন্সিলরকে সহযোগিতা করেছি। তার ডাকে সারা দিয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের সবাইকে হতাশ করে এখানে ময়লার ডিপো নির্মাণ করছেন। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আমরা চাই এই এলাকার স্বার্থে এখানে ময়লার ডিপো নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হোক।
এব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুল হক বলেন, এখন মধ্য নন্দীপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা হয়। ময়লা ফেলার কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য একটি সরকারি হালটে পানির পাম্পসহ অন্যান্য যেকোন সরকারি প্রতিষ্ঠান করার জন্য মুসল্লিদের সামনে কথা বলেছিলাম। তাদের নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জায়গা বের করা স্থানে ময়লার ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে লক্ষ রাখা হবে কোন ধরনের দুর্গন্ধ যেন বের না হয়। আর মসজিদ কমিটি এবং স্থানীয় কিছু লোক এমনভাবে কাজ করছে যেন এই এটি না হয়। তারা মেয়রের কাছে অভিযোগও করেছে। ###



 

Show all comments
  • Alayer Khan ১৬ মে, ২০২২, ৪:৪২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের মুসলমানদের ধংসের জন্য নাস্তিকরা সরকারের ভেতরে খুবই সক্রিয় ভাবে কাজ করতেছে। এটা বন্ধ করতে আমাদের সকল মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ