Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবহেলিত খালে জনদুর্ভোগ

ডিএসসিসির ওয়ার্ড ৬৩

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ শনির আখড়া থেকে মৃধাবাড়ি খাল এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। দখল ও দূষণে এ এলাকার জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। প্রতিদিনকার ফেলা বর্জ্য ও ময়লা পানি যায় এই খালেই। মশার আতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে এই খাল। যে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কথা ছিলো সে খালের পানি দীর্ঘদিন বদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে রঙ ধারণ করেছে কালো। পুরো খালের পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে মশার লার্ভা। এক কথায় রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, অপরিকল্পিত ভবন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নং ওয়ার্ড।

জানা যায়, এই ওয়ার্ড এলাকা আগে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে কাজলারপাড়, ভাঙাপ্রেস, কাজীরগাঁও, মাতুয়াইল পশ্চিমপাড়া, মাতুয়াইল মাঝপাড়া, মাতুয়াইল উত্তরপাড়া ও মাতুয়াইল শরীফ পাড়া এসব এলাকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ ওয়ার্ড হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৭ সালের পূর্বে এটি মাতুয়াইল ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড ছিল। একই সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা বর্ধিত করলে এটি ৬৩ নং ওয়ার্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

ডিএসসিসির আওতাধীন হওয়ায় অনেক সুযোগ-সুবিধার আশার আলো দেখেছেন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তবে এলাকাবাসীর প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি বেশিরভাগই। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত ডিএসসিসির নতুন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডটি নগরীর এত কাছাকাছি অথচ উন্নয়ন অবকাঠামোতে এই এলাকায় রয়েছে দীর্ঘদিনের অবহেলা। এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় নেই কোন স্থায়ী কাঁচাবাজার। স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে যেতে হয় যাত্রাবাড়ী ও আন্যান্য এলাকায়। এই সুযোগ নিয়েই শনির আখড়া-মৃধাবাড়ি এলাকার খালটির পাড় দখল করে বসে দোকানপাট। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জমজমাট বাজার।

খালের পাড় দখল করে বাজার বসার কারণে স্থানীদের এই পথ দিয়ে চলাচলে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। রাস্তার মাঝেই নানা রকমের পণ্য নিয়ে বসে পড়েন দোকানিরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজির পাশাপাশি বসে মাছ-গোশতসহ নানা পণ্যের দোকান। মূলসড়কের নিচের রাস্তায় বসে কাপড়, জুতা, ব্যাগ, ব্যাল্টসহ বাহারী পণ্যের দোকান। এসব দোকানে কেনা বেচার কারণে যানজট লেগেই থাকে। আস্থায়ী দোকনগুলো প্রভাবশালীদের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত হলেও মাঝে মাঝে এখানে চলে কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু এ অভিযানে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তাঘাট এবং পানিবদ্ধতা এখানকার পুরাতন সমস্যা। অপরিকল্পিতভাবে ভবন গড়ে ওঠায় দিনে দিনে প্রকট হয়েছে ড্রেনেজ সমস্যা। সৃষ্টি হচ্ছে পানিবদ্ধতা। বেড়েছে মশার বংশ বিস্তার। মশা যেন এই এলাকা থেকে কমছেই না। মশার সমস্যা সমাধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ওষুধ দেয়। কিন্তু এখন যে ওষুধ দেয়া হয় তাতে কোন কাজ হয় না। সারা দিনই মশার উপদ্রব থাকে। তবে সন্ধ্যা থেকে সারা রাত মশার যন্ত্রণায় টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা।

স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, এই এলাকায় স্থায়ী কোন ভালো কাঁচাবাজার না থাকায় রাস্তার উপরেই বাজার বসে। এই রাস্তায় ব্যবসা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। তবে এখানে স্থায়ী বাজারের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।

শাহীন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের এই ওয়ার্ড এলাকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হলে আমরা অনেক কিছু নাগরিক সুবিধা পাওয়ার আশা করেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে নানা সমস্যার কারণে আমরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের এখানে মশার জ্বালায় টিকতে পারি না। পানিবদ্ধতা, দখল ও দূষণসহ রয়েছে নানান সমস্যা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম খান দিলু ইনকিলাবকে বলেন, আমার ওয়ার্ড এলাকায় মশক নিধনের জন্য মোট ১২ জন লোক ৬ জনে ভাগ করে নিয়মিত কাজ করছে। ১২ জন জনবল দিয়ে পুরো এলাকায় কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অমার এখানে মশা নিধন কর্যক্রমের জন্য আরও লোকবলের প্রয়োজন। তারপরও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। শনির আখড়া থেকে মৃধাবাড়ি খালের মশার লার্ভা নিধনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধ প্রয়োগ করেছি।

মাতুয়াইল উপ-পোস্ট অফিসের সামনে খালের নির্মাণ কাজ বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় এমন অবস্থা হয় যে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সোয়ারেজের পানি ও খালের পানি একাকার হয়ে যায়। খালের পানি বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে এতে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। তাই এই কাজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে বন্ধ রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ