পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, মাছ, মুরগী, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সব্জি, তরিতরকারী পর্যন্ত এমন কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না। গত এক মাসে চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। ভরা মওসুমে চালের দাম বাড়ার বাস্তবতায় সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয় কয়েকশ আমদানিকারককে। ১.৬৯ মিলিয়ন টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। এই চালের কতটা এতদিনে আমদানি হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যানে না মিললেও চালের বাজারে আমদানির কোনো শুভ প্রভাব পড়েনি। সাধারণ মানুষের মোটা চালের দাম ৪৫ টাকার নিচে নয়। দেশি মশুরের ডাল ক’দিন আগেও প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রী হয়েছে। এখন ১১০ টাকা। আটা ২ কেজির প্যাকেট সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। চিনির দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় উঠেছে। মাছ-গোশতের দাম বাড়লেও ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। ব্রয়লার মুরগীর প্রতিকেজির দাম ১২০ টাক থেকে ১৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ডিমের প্রতিডজনের দাম ১১০ টাকা। ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রী হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের এক আঁটি শাক। কোনো তরকারীর কেজি ৪০-৫০ টাকার কম নয়। পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম রীতিমত টেক্কা দিয়েছে। ক’দিন আগেও পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রী হয়েছে। এখন বিক্রী হচ্ছে ৭০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম প্রতিকেজি ২০০ টাকা। প্রায় যাবতীয় নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি গরীব, নিম্ন ও বাঁধা আয়ের মানুষসহ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনকে রীতিমত দুর্বিসহ করে তুলেছে। মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে এদেশের মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা এমন যে, কোনো জিনিসের দাম বাড়লে, সহজে তা কমে না। উৎপাদন ও সরবরাহের প্রাচুর্যেই কেবল কোনো কোনো জিনিসের দাম কমতে দেখা যায়। পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কোনো কিছুর দাম বাড়লে তা কমানোর ব্যাপারে সরকারের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। উল্টো কখনো কখনো ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।
বিশ্বজুড়েই কৃষিপণ্যের দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে জ্বালানি তেল, গ্যাস ইত্যাদির দামও ক্রমবর্ধমান। এর প্রতিক্রিয়া বিশ্বের সকল দেশের মতো আমাদের দেশেও পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কিছু পণ্যের দামও বাড়ছে, যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। চালের দামের কথাই ধরা যাক। বলা হয়ে থাকে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। জনগণের বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদিত হচ্ছে। যদি একথা সত্য হয়, তবে চালের দাম যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকছে না কেন? কেনই বা প্রতি বছর লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। এত আমদানির পরও চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সামর্থ্যরে মধ্যে আসছে না কেন? চাল হোক আর অন্যান্য পণ্যই হোক, এসবের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং নিরূপায় ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ লুটে নেয়। পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মূল্যবৃদ্ধি করে অন্যায় মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কার্যত কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। কোনো শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সরকার আসলে ব্যবসায়ীদের বান্ধব সরকার, যার নীতি হলো, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তেল-চিনির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতার কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিলে সরকার সেই দামের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করার জন্য তাদের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে আমাদের আমদানিকৃত উৎপাদিত পণ্যের দামও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। কিন্তু পণ্যের বেঁধে দেয়া দাম কতটা সঙ্গত, তাও একটা প্রশ্নও বটে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৫৩ টাকা। এটা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে কি সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে?
বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বঅর্থনীতি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখন বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ কিছুটা নমনীয় হওয়ায় সব কিছুই ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে। উৎপাদন আমদানি, রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্যি চাঙ্গা হচ্ছে। যোগাযোগ-যাতায়াত বাড়ছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড সচল ও গতিশীল হচ্ছে। এ সময় জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যাবতীয় উৎপাদন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করবে। পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যাবে। এসব প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের দেশও মুক্ত থাকতে পারবে না। আগামীতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, সেটা প্রায় অবধারিত। এও ঠিক, ভবিষ্যতে সব দেশেই আমদানি-রফতানি বাড়বে। পণ্যমূল্যের স্ফীতি ঘটার আশংকা থাকবে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই আমদানি বেড়ে যাওয়ার ডলারের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। টাকার মান ডলারের তুলনায় কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যস্ফীতির হার আগামীতে বাড়বে এবং তাতে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। আশংকিত পরিস্থিতির এ প্রেক্ষাপটে সরকারকে এখনই গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। কীভাবে সফলতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তার পরিকল্পনা ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে, উৎপাদনে ও কর্মসংস্থানে যার সুফল পাওয়া যাবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের জন্য এটা অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।