পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চুক্তি ভঙ্গ করে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম নামের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০টি ইঞ্জিনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করে সরবরাহ করেছে। ইঞ্জিনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের অভিযোগ ওঠার পর গত ১৪ মাসেও যন্ত্রাংশ বদল করেনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনগুলোই গত ৪ অক্টোবর গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এদিকে প্রথম ট্রিপেই ফেল করেছে ৩০০৩ মডেলের একটি ইঞ্জিন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইঞ্জিনটি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেয়া ঢাকা মেইলে সংযোজন করা হয়। সকালে তেজগাঁওয়ের কাছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, চুক্তি ভঙ্গ করে রেলের ১০ ইঞ্জিনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। এজন্য গত বছর আগস্টে দেশে এলেও ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়নি। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের প্রমাণও পেয়েছে। তবে ১৪ মাসেও নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বদলে দেয়নি হুন্দাই রোটেম। আবার হুন্দাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। রেলওয়ের তথ্যমতে, হুন্দাই রোটেমের সরবরাহকৃত ১০ ইঞ্জিনে টিএ১২ মডেলের অলটারনেটর সংযোজনের শর্ত ছিল। এগুলো তিন হাজার কেভিএ’র (কিলো ভোল্ট এমপিয়ার)। মূলত ইঞ্জিনগুলো ব্রডগেজে রূপান্তরের ব্যবস্থা রাখতে টিএ১২ অলটারনেটর সংযোজনের শর্ত দেয়া হয়। তবে চুক্তি ভঙ্গ করে ইঞ্জিনগুলোয় টিএ৯ মডেলের অলটারনেটর সংযোজন করে হুন্দাই রোটেম। এগুলো দুই হাজার কেভিএ’র। নিম্নমানের অলটারনেটর সংযোজনের ফলে পরবর্তীকালে ইঞ্জিনগুলো আর প্রয়োজনে ব্রডগেজে রূপান্তর করা যাবে না। এ অবস্থায় ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১৪ মাস অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। তবে এ সময়ের মধ্যে অলটারনেটর বদলে দেয়নি হুন্দাই রোটেম। এখন ইঞ্জিনগুলোর অলটারনেটর বদলে দেয়া সম্ভব কি না, তা জানাতে সম্প্রতি ছয় মাস সময় চেয়েছে হুন্দাই রোটেম। এতে অলটারনেটর পরিবর্তন, না হয় জরিমানা এ শর্তে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করেছে রেলওয়ে। এক্ষেত্রে অলটারনেটর বদলে দিলে ইঞ্জিনের পুরো মূল্য পরিশোধ করা হবে হুন্দাই রোটেমকে। অন্যথায় টিএ১২ সংযোজন না করায় জরিমানা হিসেবে অলটারনেটরের মূল্য থেকে কিছু অংশ কেটে রেখে বাকি অর্থ পরিশোধ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ১০ ইঞ্জিন প্রকল্পের পরিচালক হাসান মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, শর্তসাপেক্ষে গত ৪ অক্টোবর ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। অলটারনেটর বদলে দেয়া সম্ভব কি না, তা জানাতে ছয় মাস সময় চেয়েছে কোম্পানিটি। যদি তারা অলটানেটর বদলে দেয়, তাহলে পুরো মূল্য দেয়া হবে। না হলে তাদের জরিমানা করা হবে।
এদিকে রেল-বিষয়ক ফেসবুক পেজ ‘দ্য ট্রেন’ গত বৃহস্পতিবার সকালে এক পোস্টে জানায়, ‘আমদানি ত্রুটিজনিত কারণে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা লোকোমোটিভ ৩০০৩ বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ওয়ান আপ ঢাকা মেইলে যুক্ত করার মাধ্যমে সার্ভিসে আনার চেষ্টা করা হয়। প্রথম চেষ্টাই বিফল হয় এই লোকোমোটিভ! ঢাকা মেইল নিয়ে ঢাকায় প্রবেশের মুহূর্তে তেজগাঁওয়ে এসে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ঢাকায় প্রবেশ লাইন বন্ধ হয়ে থাকে সকাল ৮টার পর থেকে।’ পরে বিকল্প ইঞ্জিনের মাধ্যমে ট্রেনটি কমলাপুর আনা হয় বলে নিশ্চিত করেন রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে হাসান মনসুর বলেন, ইঞ্জিন নয় বরং কোচের সমস্যার কারণে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত কোচের ভ্যাকুয়াম কমে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় ইঞ্জিন অটো বন্ধ হয়ে যায়। অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। এছাড়া গত ৪ অক্টোবর ৩০০৬ মডেলের ইঞ্জিনটি চালানো হয়েছে। তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ১০টি ইঞ্জিনই নামানো হবে।
জানা গেছে, ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনায় হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে ২০১৮ সালের ১৭ মে চুক্তি করে রেলওয়ে। গত বছর আগস্টে ইঞ্জিনগুলো দেশে আসে। তবে নিম্নমানের ইঞ্জিন সরবরাহের কারণে এগুলোর বিল পরিশোধ আটকে দেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক। নিম্নমানের ইঞ্জিন গ্রহণে অস্বীকৃতিও জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রেলপথ সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি।
এতে বলা হয়, ইঞ্জিনগুলো তৈরিতে কারিগরি শর্ত অনুসরণ করা হয়নি। ইঞ্জিন, অলটারনেটর, কম্প্রেসার ও ট্রাকশন মোটর-এ চারটি ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টস চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। এজন্য হুন্দাই রোটেম ও প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেক্টর সিসিআইসিকে অভিযুক্ত করা হয়। কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়। তবে কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং নিম্নমানের ইঞ্জিনগুলো চালানোর উপযুক্ত কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ২৩ মার্চ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুন্দাই রোটেমের সরবরাহকৃত ১০ ইঞ্জিন চালানোয় কোনো সমস্যা নেই। শুধু ইঞ্জিন ঘোরানোর সময় কিছুটা সমস্যা হয়। তবে এ অবস্থায় ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ইন্ডিপেনডেন্ট রিভিউয়ারের মাধ্যমে যাচাইয়ের শর্ত দেয়া হয়।
কারিগরি কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিপেনডেন্ট রিভিউয়ার নিয়োগ দেয়া হলে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেন তিনি। যদিও বিষয়টি আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ইঞ্জিনগুলো কেনার আগে দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে সিপিটিইউয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। ইঞ্জিনগুলো ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তাই হুন্দাই রোটেম চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় সংশোধিত প্রস্তাবে সিপিটিইউ ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন লাগবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির মতামত গ্রহণের সুযোগ নেই।
এদিকে ইঞ্জিনগুলো কেনায় ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত জুনে এ ঋণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ মেয়াদ আর বাড়াতে রাজি নয় এডিবি। যদিও গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে চার মাস। এ হিসেবে চলতি মাস (অক্টোবর) পর্যন্ত সময় আছে রেলওয়ের হাতে। তাই ইঞ্জিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমকে দ্রুত মূল্য পরিশোধের জন্যই আইন ভঙ্গের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।