পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জেরুজালেমের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে ইহুদিদের প্রার্থনার অনুমতির পক্ষে ইসরাইলের একটি আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনিরা। তাদের আশঙ্কা এর মাধ্যমে ইহুদিরা জোর করে পবিত্র স্থানটির দখল নিয়ে নিতে পারে। বৃহস্পতিবার ইসরাইলের একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ে বলা হয়, আল-আকসা কমপ্লেক্সে ইহুদি প্রার্থনাকারীরা যদি নীরব থেকে প্রার্থনা করে তাহলে তা অপরাধ বলে বিবেচনা করা যাবে না। দীর্ঘদিন থেকেই এক চুক্তির অধীনে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল-আকসায় নামাজ পড়ে আর কাছের পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনা করে ইহুদিরা। ইসরাইলি দখলদার রাবি আরিয়েহ লিপ্পোর করা এক মামলার জেরে ইহুদি প্রার্থনাকারীদের পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির আদালত। আল-আকসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপিত সাময়িক নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে আদালতে যান তিনি। আল-আকসা কমপ্লেক্সে প্রার্থনা করায় তার ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরাইলি পুলিশ। ইসরাইলি আদালতের সিদ্ধান্তের পর আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্টাইয়া। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘পবিত্র আল-আকসা মসজিদে নতুন বাস্তবতা আরোপের ইসরাইলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা হুঁশিয়ার করছি।’ ১৯৯৪ সালে আম্মান ও তেল আবিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করে জর্ডান। ইসরাইলি আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আম্মান বলেছে, এটি ‘আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক এবং আইনি মর্যাদার মারাত্মক লংঘন।’ ইসরাইলি আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ইবরাহীম ইশতাইয়া মসজিদের মর্যাদাগত অবস্থান বহাল রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পালনের জন্য দেশটির প্রতি আহবান জানান। পাশাপাশি আরব দেশগুলোকেও ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি জানিয়ে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা মসজিদুল আকসায় ইসরাইলের নতুন পরিস্থিতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্কতা জানাচ্ছি। অপরদিকে মসজিদুল আকসার তদারক করা জেরুসালেম ইসলামিক ওয়াকফের পরিচালনাকারী জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, এর মাধ্যমে মসজিদুল আকসার ঐতিহাসিক ও আইনি মর্যাদার মারাত্মক লংঘন করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মসজিদুল আকসার ওপর ইসরাইল নগ্ন আগ্রাসন চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধের স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। জেরুসালেমের মুফতি শেখ মুহাম্মদ হুসাইন এক বিবৃতিতে ইসরাইলের পদক্ষেপের ফলে সম্ভাব্য সহিংসতার শঙ্কা করেন। তিনি বলেন, মসজিদুল আকসাকে দখলে নেয়ার আগ্রাসী সিদ্ধান্ত থেকে আরব ও মুসলিমদের কাছে আমরা জেরুসালেম ও মসজিদুল আকসাকে রক্ষার আবেদন করছি। সাথে সাথে আমরা কোনো প্রকার ধর্মীয় যুদ্ধ শুরু হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা জানাচ্ছি। জেরুসালেমের মসজিদুল আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদীনার মসজিদে নববীর পরই এই মসজিদকে মুসলমানরা মর্যাদা দেন। অপরদিকে ‹টেম্পল মাউন্ট› হিসেবে পরিচিত এই স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছেও পবিত্র স্থান। এই স্থানে ইহুদিরা তাদের প্রধান ধর্মীয় উপসনালয় থাকার দাবি করেন। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর জেরুসালেম শহরের পশ্চিম অংশ দখল করে নেয় ইসরাইলি বাহিনী। পরে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর মসজিদুল আকসাসহ পূর্ব জেরুসালেম ইসরাইল দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত ভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরাইল শহরটিকে একীভূত করে নেয় এবং অখন্ড জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময় শহরটিতে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইসরাইলি ইহুদিদের শহরে আবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।