পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বাংলাদেশীদের প্রবেশ নতুন নয়। উন্নত জীবনের আশায় বহু বাংলাদেশী তরুণ এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মুত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। সাগর থেকে উদ্ধার হয়ে অনেকে বিভিন্ন দেশে আটক হচ্ছে। কেউ কেউ কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেও সেখানে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। আটক হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তারপরও বৈধতার আশায় শত কষ্টের মাঝেও তারা অপেক্ষায় থাকে। তাদের সে অপেক্ষা শেষ হয় না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে আহবান জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। তাদের যেমন ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা করা হয়নি, তেমনি বৈধ করার কূটনৈতিক উদ্যোগও নেয়া হয়নি। ফলে দেশগুলোর সরকার নিজ থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জার্মানিতে বসবাসরত অভিবাসন প্রত্যাশী আটককৃত ৮১৬ জন বাংলাদেশীকে দেশটি ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জার্মানির চাপে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া এসব বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। এ ঘটনা একদিকে দেশের ভাবমর্যাদা যেমন ক্ষুন্ন করছে, তেমনি বৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
দেশে বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। করোনা এ বেকারত্বকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছে যে, এতে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের আয় কমে গেছে। বেকার হয়ে পড়া মানুষদের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ তো পরের কথা, কর্মী ছাঁটাই করে খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আগের বেকারদের সাথে নতুন বেকার যুক্ত হয়ে বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণত বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়ে। বহু বছর ধরেই সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্রটি খুবই হতাশাজনক। কাক্সিক্ষত মাত্রার বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব ঘুচাতে এবং উন্নত জীবনের আশায় অসংখ্য তরুণ ভিটে-মাটি, জমি-জমা বিক্রি করে বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের যেকোনো দেশে যাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা তাদের মধ্যে বিরাজমান। তাদের এই আকাক্সক্ষা পুঁজি করে দালাল চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ পথে তাদের সেখানে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেয়। স্বপ্ন পূরণের আশায় এদের অনেকেই বিপজ্জনক সে পথে গমন করে। পাহাড়-পর্বত, মরু, জঙ্গল, সমুদ্র পথের মতো দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেতে তারা দ্বিধা করে না। তাদের মনে এই আশা, কষ্ট করে একবার কাক্সিক্ষত দেশে পৌঁছতে পারলে, আর চিন্তা নেই। তবে তাদের এই ধারণা নেই, দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে তারা পৌঁছলেও সেখানে থাকতে পারবে কিনা। সেখানে যখন তারা পৌঁছে, তখন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আটক হয়। এতে তাদের সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশীদের তখন ফিরিয়ে নিতে সরকারকে বার্তা পাঠায়। এসব বার্তা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ খুব একটা আমলে নেয় বলে প্রতীয়মান হয় না। অপেক্ষার নীতি অবলম্বন করা হয়। ধরে নেয়া হয়, একটা সময় হয়তো আটককৃতদের বৈধ করে নেয়া হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন শুরু করেছে। সীমান্ত পথে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। যেসব অবৈধ অভিবাসী আটক হয়েছে তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে জার্মানি ৮১৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশিকে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২৬ অক্টোবর ৫০ জনকে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়া থেকেও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পঠানোর এসব ঘটনা বাংলাদেশের জন্য খুবই অসম্মান ও দুর্নামের বিষয়।
উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইনিয়নের দেশগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শ্রমিক সংকট প্রকট। সেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কাজ-কর্মে তাদের ব্যাঘাত ঘটছে। এজন্য তাদের শ্রমিক প্রয়োজন। এসব দেশের শ্রমিকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে যদি সরকার থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের একটি বড় শ্রমবাজার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং এ অনুযায়ী তৎপরতা চালানো প্রয়োজন। এ দায়িত্ব পালন করতে পারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ এ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দেশগুলোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা। দেশগুলোতে শ্রেণীভিত্তিক কি ধরনের শ্রমিক প্রয়োজন, এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালিয়ে যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রমশক্তি রফতানি করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে বৈধভাবে দেশগুলোতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখন যারা অবৈধভাবে দেশগুলোতে রয়েছে তাদের বৈধ করার বিষয়ে দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা যেতে পারে। অন্যথায়, তাদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। বলা বাহুল্য, বৈধভাবে যারা যাচ্ছে এবং যেতে চাইবে, অবৈধদের কারণে দেশগুলোতে যেমন তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এর ফলে বৈধ সুযোগও বাধাগ্রস্থ ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।