Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রয়োজন ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যত ধরনের কথাই বলা হোক না কেন বিপদ যেন বাংলাদেশের পিছু ছাড়ছে না। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সউদী সরকার বাংলাদেশী ওমরাযাত্রীদের মোফা ইস্যু করছে না। ওমরার নামে সউদী মানব পাচারের দরুণ বিগত ১০ মাস যাবৎ ওমরা ভিসা বন্ধ থাকায় ধর্মপ্রাণ ওমরাযাত্রীগণ চরম হতাশায় ভুগছেন। প্রায় ১৫টি বৈধ ওমরা এজেন্সি সউদী হজ মন্ত্রণালয়ে ২ লাখ সউদী রিয়াল থেকে ৫ লাখ সউদী রিয়াল ক্যাশ গ্যারান্টি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ লাখ সউদী রিয়ালের সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা (৪৪ লাখ) জমা দিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুজদালেফা এভিয়েশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হেলাল বলেছেন, মক্কা-মদিনায় ওমরাযাত্রীদের জন্য লাখ লাখ রিয়ালের হোটেল ভাড়া করে ওমরা চালু না হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। মক্কাস্থ সউদী হজ মন্ত্রণালয়ের ওমরা বিভাগের ডিজি মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ মিশনের কনসাল (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সউদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকাতেই বাংলাদেশী ওমরাযাত্রীদের মোফা ইস্যুর সিস্টেম বন্ধ রয়েছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যতিত মুসলিম উম্মার জন্য ওমরা চালু করেছে সউদী কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে ওমরা ভিসা খুলে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করেছিল। অন্য দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, এমনিতেই গত জ্জ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের উপর ভিসাÑ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। তার উপর সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আবারো জটিল হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশী হাজীদের জন্য পুনরায় ওমরাহ ভিসা চালু করেছিল সউদী কর্তৃপক্ষ। কিছুসংখ্যক অসৎ ব্যক্তি ও দুর্নীতিবাজ হজ এজেন্সীর মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওমরার নামে মানব পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাবার কারণে গত বছর বাংলাদেশীদের জন্য ওমরা ভিসা বন্ধ করে দেয়ার মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে বা ঘটতে পেরেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না কিছু ধান্ধাবাজের কারণে হাজার হাজার মানুষ ওমরা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবার মতো দুঃখজনক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এবারে পরিস্থিতি আরো একটু আলাদা। ইতোপূর্বে সউদী কর্তৃপক্ষের সম্মতির আলোকে যেসব বৈধ এজেন্সি ওমরাযাত্রী পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাও নতুন সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়েছে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মানব পাচারের অভিযোগে ধর্মমন্ত্রণালয় ৯৫টি হজ এজেন্সীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে ৬৯টি এজেন্সীর লাইসেন্স ও জামানত বাতিল ছাড়াও জরিমানাও করা হয়েছিল। বাকী ২৬টিকে জরিমানা করা হয়েছিল। দেশে প্রায় ৩শ’ হজ এজেন্সী থাকলেও ওমরা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭০টি এজেন্সীর নাম পাঠানো হয়েছিল। এতকিছু সত্তে¡ও কার্যত বরফ কেন গলেনি সেটি সত্যিই ভাববার। বাংলাদেশ হজ মিশনের কনসাল আলোচনার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। হাব নেতৃবৃন্দও আলোচনার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য বিমানে ও জাহাজে ব্যাগেজ রুলে প্রেরিত পণ্য যথাসময়ে গন্তব্যে না পৌঁছায় ক্ষুব্ধ হয়ে পণ্য পাঠানোর দায়িত্ব নেয়া ব্যাগেজ ফরোয়ার্ডারদের বা এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরো জটিল হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এ জটিলতার জন্য দায়ী কাস্টমস হাউস। চট্টগ্রামে কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের বেশকিছু আপত্তির কারণে প্রবাসীদের মালামাল আটকে রয়েছে। এমনকি অনেক পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্টও হয়ে গেছে।
বাস্তবতার আলোকে এটাই সত্যি যে, বিশের¦ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক কালের। প্রতিবছর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ওমরা পালন করতে যান। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আত্মিক সম্পর্ক থাকার কারণে সেখানে এদেশের মানুষেরা শ্রমিক হিসেবে যেতেও অধিকতর আগ্রহী। এর সাথে কর্ম বিনিয়েগেরও সম্পর্ক রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভাল নয়। প্রায় প্রতিদিনই গার্মেন্টস বন্ধ হচ্ছে। নতুন কোন বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ। এই বাস্তবতায় শ্রমবাজার নিয়ে হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নেই। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক না কেন বর্তমান মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সরকারে এক ধরনের মানসিক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এর নানামাত্রিক প্রভাব রয়েছে। এর সাথে আস্থার যে সংকটের ব্যাপারটি রয়েছে অলোচ্য ক্ষেত্রও হয়ত তার থেকে আলাদা কিছু নয়। আলোচ্য ঘটনাগুলোতে একদিকে যেমনি দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং হবার আশঙ্কা বাড়ছে তেমনি সামগ্রিকভাবে দেশের ইমেজ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বের সব মুসলিম দেশের ভিসার অনুমতি রয়েছে অথচ বাংলাদেশের জন্য তা নিষিদ্ধ এটা শুনতেও তো কেমন জানি লাগে। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ কতটা তীব্র তা অবশ্য বোঝা যায়নি। যাই হোক না কেন বাস্তবতা হলো সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনার কোন বিকল্প নেই। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রয়োজন ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ
আরও পড়ুন