পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালীন বাস্তবতায় পোশাক রফতানি ও জনশক্তি রফতানির মতো দেশের অর্থনীতির প্রধান খাতগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। একদিকে তৈরি পোশাক খাতে কোটি কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিলের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের স্থবিরতাও এখনো কাটছে না। নানাবিধ সমন্বিত উদ্যোগ ও ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন পর্ব শেষে বিশ্বে যখন নতুন অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে, তখন আমরা এখনো করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় অনেকটাই পিছিয়ে। এই মুহূর্তে দেশে পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রয়েছে এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় রপ্তানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে তার বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না দেশের অর্থনীতি। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর করোনা টেস্ট ব্যবস্থা না থাকায় গত সপ্তাহ পর্যন্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ থেকে কোনো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অথচ, করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে আরব-আমিরাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে বেশ কয়েকমাস আগেই। সেখানে কর্মরত হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী করোনাকালে দেশে এসে আটকা পড়েছে। শর্ত অনুসারে বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব না থাকায় তারা আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারেনি। এমনি আরো কিছু ছোটখাট ঘাটতি ও গাফিলতির কারণে সউদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বদ্ধ দুয়ার খুলছে না।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য এক প্রকার ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। এক সময় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে জি-টু-জি, জি-টু-জি প্লাস ব্যবস্থায় স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের দুয়ার উন্মুক্ত হলেও সে সব সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই তা সম্ভব হয়নি। এ কারণে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। করোনাত্তোর বাস্তবতায় নতুন আশার কথা হচ্ছে, টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে মালয়েশিয়া আবারো বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, চাষাবাদ, বৃক্ষরোপণ ও কৃষি খামারের জন্য নতুন করে ৩২ হাজার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মালয়েশিয়া। মূলত বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসব শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা ২ ডোজ করোনা ভ্যাক্সিন নিয়েছেন এমন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য বাছাই করা হবে বলে তারা জানিয়েছে। অন্যদিকে করোনাকালে দেশে এসে আটকে পড়া ২৫ হাজার শ্রমিকের মালয়েশিয়া ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি পুরনো শ্রমিকদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
মালয়েশিয়া, সউদি আরবের মতো ট্রাডিশনাল শ্রমবাজারে বার বার সুযোগ হাতছাড়া হওয়া এবং হাজার হাজার কর্মীর দুর্ভোগ ও পুলিশি হয়রানির কারণে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে বাংলাদেশের মর্যাদাহানি ঘটছে এবং দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান খাতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বেকারত্বের চাপ বাড়ছে। হাজার হাজার তরুণ প্রতিদিন অবৈধ ও বিপজ্জনকভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। মালয়েশিয়া, সউদি আরব, আরব আমিরাত ও ইউরোপ-আমেরিকায় বৈধপথে অভিবাসনের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বিপজ্জনক প্রক্রিয়ায় বিদেশ গমন কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে জানা যায়, ভূমধ্যসাগরের বিপদসঙ্কুল পথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে প্রাণ দিচ্ছে। মূলত যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশগুলো থেকে এসব অবিভাসী সেখানে ভিড় করলেও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে জানা যায়। করোনাত্তোর বিশ্ববাস্তবতায় দেশে দেশে যে নতুন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু হচ্ছে, তাতে লাখ লাখ নতুন শ্রমশক্তি নিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সুযোগ কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। মালয়েশিয়া জি-টু-জি-প্লাস নিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পেছনে দুই দেশের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করেছে। সে সব ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু মালয়েশিয়া বা সউদি আরবই নয় ইউরোপ-আমেরিকা, জাপান-কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার নতুন সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।