Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

প্রতিদিনই বাড়ছে মামলার সংখ্যা

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি, চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে গেল চার বছরে মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪টি। যেখানে আসামি ২ হাজার ৬৮৭ জন রোহিঙ্গা।
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই নারীসহ নিহত হয়েছেন ১১২ জন রোহিঙ্গা। যা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১০১৪টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২ হাজার ৬৮৭ জন রোহিঙ্গাকে। যার মধ্যে ৪৩ শতাংশ মাদক-সংক্রান্ত মামলা। বাকি ৫৭ শতাংশ অস্ত্র, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, ক্ষমতা আইন, সরকারি কাজে বাধাদান সংক্রান্ত, ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, হত্যা, মানবপাচার ও নিজেদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে মারামারি সংক্রান্ত মামলা।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দায়ের করা ১০১৪ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ৬২২ জন রোহিঙ্গা। আর তদন্ত শেষে ৮৯৪টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ওই সময় থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত চারজন নারীসহ শুধু কক্সবাজার জেলায় বন্দুকযুদ্ধে ২৮৪ জন নিহত হয়েছেন। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট (তিন বছর) পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে কমবেশি ৭৩১টি মামলা হয়েছে। যাতে আসামি হয়েছেন ১ হাজার ৬৭১ জন রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি আর আসামি হন ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি ৪১৪ জন। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি আর আসামি হন ৬৪৯ জন।এসব পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানবিক বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রতিবছরই বাড়ছে অপরাধ। শুধু ইয়াবা নয়, বিষাক্ত মাদক ক্রিস্টেল মেথ বা আইস পাচারেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। এছাড়াও আছে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হত্যা, গুম, অপহরণ করে চাঁদাদাবিসহ নানা অপরাধ। কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সহ সভাপতি মনজুর আলম জানান, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। ক্যাম্পে কয়েকটি গ্রুপ মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবার চালান এনে ক্যাম্পে মজুত রাখেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যেও ক্যাম্পে ইয়াবার চালান, মজুত ও লেনদেন করছেন। উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকান্ড আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর হোসাইন বলেন, বেপরোয়া হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারা বেশির ভাগ সময় স্থানীয়দের ওপর আগ্রাসী হচ্ছে। ১৬ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, এক বছরও পূর্ণ হয়নি এপিবিএন কাজ করছে। তবুও আমরা ক্যাম্পের অপহরণ বাণিজ্য, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধ ঠেকাতে নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মামলার সংখ্যা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ