পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বাস্তবতার নিরিখেই ভ‚মি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ভূমি ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি এবং এ থেকে সৃষ্ট ভূমি বিরোধ ও সামাজিক হানাহানি সামাজিক অস্থিরতা ও অশান্তির জন্ম দিচ্ছে। দেশের আদালতগুলোতে জমিজমা সংক্রান্ত লাখ লাখ মামলার জট সহজে নিরসন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর বেশিরভাগই ভুয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা। জমিজমার রেকর্ড সংক্রান্ত ভুল এবং আইনগত অস্বচ্ছতা ও অংশিদারিত্বমূলক দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মামলায় প্রান্তিক জনগণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাদেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু মানুষ ভূমি অফিসের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় ভুল নামজারি, মিথ্যা রেকর্ড সৃষ্টি করে মামলা দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে নিজেদের প্রাপ্য ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নামমাত্র মূল্যে আপস মিমাংসায় বাধ্য করছে এবং দখলবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জালিয়াত চক্রের মিথ্যা মামলায় জর্জরিত সাধারণ দরিদ্র মানুষ বছরের পর বছর ধরে মামলার খরচ চালাতে অক্ষম। অন্যদিকে, ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা, আদালতের একশ্রেণীর উকিলের পেছনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করে মামলার রায় নিজেদের অনুকূলে নেয়ার ঘটনা বিরল নয়। মিথ্যা মামলা শুধু জমিজমার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। অনেকে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য মাদকদ্রব্য রাখা নিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে দেখা যায়। মিথ্যা মামলার এ ধরনের অপসংস্কৃতিতে অনেক মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
জমিজমার বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ এবং ভূমি রেকর্ড ও সংরক্ষণে অস্বচ্ছতার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিকরা জমিজমার মিথ্যা মামলার শিকার হয়। প্রচলিত আইনে দেশে মিথ্যা মামলায় শাস্তির বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। দেখা যায়, ১৫-২০ বছর মামলা চলার পর মামলার উপযুক্ত কারণ বা সাক্ষী-সাবুদ খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত মামলা খারিজ বা নথিজাত করা হলেও মাঝখানে জমিমালিকদের অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয়। মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশে মিথ্যা মামলা কমিয়ে আনা সম্ভব। মিথ্যা মামলার শাস্তি ও জরিমানার বিধান সহজ ও কার্যকর করার পাশাপাশি জমিজমার মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অহেতুক কালক্ষেপণ রোধ করে দ্রæত নিষ্পত্তির উপযুক্ত সময়সীমা নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি ল্যান্ড অফিস রেজিস্ট্রি অফিস থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত জালিয়াত-মামলাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
কয়েক বছর আগে দেশের একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, দেশের ভূমি মালিকদের প্রায় অর্ধেকই ভূমিবিরোধ ও মামলা সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত। ভূমিবিরোধের কারণে প্রকৃত ভূমি মালিকরা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পারায় পারিবারিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। শত বছরের পুরনো আইনের ভিত্তিতে জমিজমার বিরোধ নিস্পত্তির আইন সমূহ চলমান বাস্তবতার আলোকে নবায়ন ও সংশোধনের কার্যকর উদ্যেঠস নেয়া জরুরী। দেশের প্রতিটি জেলা আদালতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যেসব মামলায় হাজিরা দিতে যায়, তার বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সৃষ্ট। বেশিরভাগ দেওয়ানি মামলা ১০-২০ বছরেও নিষ্পত্তি হয়না। সরকার বিকল্প বিরোধনিষ্পত্তির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে আদালতগুলোতে মামলাজট কমে আসত। জমিজমার বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নানা কারণে সময়ক্ষেপণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা চিহ্নিত করে দ্রæত তা খারিজ করার পাশাপাশি এসব মামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান কার্যকর করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নিরপরাধ মানুষের বিচার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় আইনী কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। উচ্চ আদালত প্রয়োজনীয় রুল বা নির্দেশনা জারি করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। জমিজমা সংক্রান্ত মামলার উপর আদালতের নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি ভূমি ব্যবস্থাপনায় সব অস্বচ্ছতা, ত্রæটি-বিচ্যুতি ও অহেতুক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।